নদীর এক দিক থেকে অন্যদিকে চলাচলের জন্য রেলের পক্ষে সেতুই একমাত্র ভরসা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য রেলসেতু প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এবং মালবাহী রেকের যাতায়াত বহন করে। উপরিভাগে নিয়মিত পরিদর্শন হলেও এতদিন জলের তলায় থাকা অংশগুলি পরীক্ষা করা রেলের জন্য ছিল একপ্রকার কঠিন চ্যালেঞ্জ। এবার সেই সমস্যার সমাধানেই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পথে হাঁটল।
এ ব্যাপারে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল জানিয়েছে, এখন থেকে জলের তলায় থাকা সেতুর অংশগুলি পরীক্ষা করা হবে আধুনিক আন্ডারওয়াটার রোবট ড্রোনের সাহায্যে। ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সেই ডিভিশনের ডিআরএম দেবেন্দ্র সিং জানান, ‘বাইরে থেকে ইন্সপেকশন করে সেতুর বহু জায়গা বোঝা যায় না। বরং রোবটের সাহায্যে জলের তলায় থাকা অংশের স্পষ্ট ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়। এগুলি বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সঠিক অবস্থার হদিশ মিলবে।’
Advertisement
প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারত ও উত্তর বঙ্গের একটি বড় অংশে রেল পরিষেবা পরিচালনা করে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-সহ একাধিক বড় নদীর উপর রয়েছে বিভিন্ন সেতু। শুধু আলিপুরদুয়ার ডিভিশনেই রয়েছে ১৮টি রেল সেতু। আর এনএফআরের সম্পূর্ণ এলাকায় এমন সেতুর সংখ্যা ৩৪টি। সব মিলিয়ে নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর ওপরে প্রায় ৪২০০ কিলোমিটার রেললাইন রয়েছে।
Advertisement
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে নদীগুলিতে বর্ষা ছাড়া জল কম থাকে, সেগুলি শুকিয়ে গেলে পরিদর্শন করা সম্ভব হয়। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের মতো গভীর জলের নদীতে সারা বছর সেতুর জলের তলার অংশগুলো পরিদর্শন করা যায় না। অথচ যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে সেতুর ওই অংশগুলির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। সেই কারণেই আন্ডারওয়াটার রোবট ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ড্রোনের মাধ্যমে সেতুর তলার ছবি শুধু নয়, থার্মাল ইমেজিং, গ্ৰাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার, আল্ট্রাসনিক পালস ভেলোসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কোনও সেতুতেই বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েনি। তবে রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এখন ত্রুটি ধরা না-পড়লেও পরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে নির্দিষ্ট বিরতিতে এই রোবট ড্রোনের সাহায্যে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।
রেলের যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির এই নতুন প্রয়োগ রেলের পরিকাঠামো সংরক্ষণেও বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছে রেল দপ্তর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য রেল জোনেও এমন উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Advertisement



