ভারত বিশ্বে মানবতার আশা জাগিয়েছে : ট্রাম্প

আমদাবাদে মােতেরা স্টেডিয়ামে ‘নমতে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে।

Written by SNS New Delhi | February 25, 2020 2:09 pm

নমস্তে ট্রাম্প অনুষ্ঠানে ডােনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি। (Photo: AFP)

আমেরিকা ভারতকে ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে। দুই দেশ সব সময় বিশ্বাসযােগ্য বন্ধু হিসেবেই থাকবে। কোনও তীর্যক মন্তব্য না করে মােদি সরকারের স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযােগ করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মােতেরা স্টেডিয়ামের সংবর্ধনা সভায় ভাষণে। এদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্যে ভারতের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, এখানকার শিল্প সাহিত্য ক্রীড়া ক্ষেত্রে উৎকর্ষের ও সমন্বয়ের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। বহু জাতি বহু ভাষা থাকলেও আপনারা সবাই মিলে ভারতীয় হিসেবে ঐক্যবদ্ধ। ভারত সারা বিশ্বে মানবতার আশা জাগিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত সত্তর বছরে অন্যতম মহান দেশ হিসেবে উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, শুধু ধর্মীয় ভাবধারার ক্ষেত্রেই নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও যে ভারত সারা বিশ্বে অগ্রগণ্য সেকথাও তিনি মুক্ত কণ্ঠে ঘােষণা করেন। সিনেমায় বলিউডের ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ক্রিকেটে শচিন তেন্ডুলকরের উদাহরণ দেন। ভারত কৃষ্টি ও শিল্প-সাহিত্যেও উৎকর্ষ লাভ করেছে। শুধুমাত্র বলিউড থেকেই বছরে দুই হাজার সিনেমা তৈরি হয়।

সন্ত্রাস দমনে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে ট্রাম্প পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন। আমদাবাদে মােতেরা স্টেডিয়ামে ‘নমতে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে। ভারতীয় উপমহাদেশ এলাকায় সন্ত্রাস দমনে ভারত ও আমেরিকা যৌথভাবে কাজ করবে বলেও আশ্বাস দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন প্রতিটি দেশের অধিকার রয়েছে নিজ দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার। ভারত ও আমেরিকা সন্ত্রাস দমন নিয়ে নিরন্তর মত বিনিময় করে থাকে বলে তিনি জানান। দুই দেশ একসঙ্গে সন্ত্রাস দমনে কাজ করবে। পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও আমেরিকা কাজ করেছে, যাতে তারা সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনও আপস না করে কড়া হাতে দমন করে। ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতাবস্থা রাখার ক্ষেত্রেও তিনি উল্লেখযােগ্য বার্তা দেন।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপমহাদেশীয় অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভারত ও আমেরিকা এ ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে কাজ করবে। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আগের থেকে অনেকটাই ভাল হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, ঈশ্বর ভারতের ভাল করুন, ঈশ্বর আমেরিকার ভাল করুন, এই বলে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সােমবার বেলা এগারােটা চল্লিশ নাগাদ স্ত্রী মেলানিয়াকে সঙ্গে আমদাবাদে পা রাখেন। বড় মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও একই সঙ্গে সেখানে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপচারিতা সেরেই সেখান থেকে আলাদা আলাদা গাড়িতে চেপে সমতীর উদ্দেশ্যে রওনা হন ডেনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মােদি।

আট কিলােমিটার পাড়ি দিয়ে সবরমতী আশ্রমে পৌঁছন তাঁরা। আশ্রম চত্বরে গিয়ে গাড়ি থামে। সেখানে উত্তরীয় পরিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। তার পর পায়ে হেঁটেই আশ্রমের ভিতর যান সকলে। সবরমতী আশ্রমের ভিতর জুতাে পায়ে ঢােকার অনুমতি নেই। আশ্রমের বারান্দায় ওঠার আগেই জুতাে খুলে রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্ত্রী মেলানিয়াও তাঁর হিল জুতাে খুলে মােজা পরে নেন। মহাত্মার প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মােদি ও ট্রাম্প।

আশ্রমের যে ঘরে মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ও স্ত্রী কস্তুরবা থাকতেন তা মার্কিন দম্পতিকে ঘুরিয়ে দেখান প্রধানমন্ত্রী। বারান্দার এককোণে রাখা চরকার সামনে ট্রাম্প দম্পতিকে নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। চরকার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন এবং এক আশ্রমবাসীকে ডেকে নিয়ে চরকা কাটার পদ্ধতি দেখিয়ে দেন ট্রাম্প দম্পতিকে। চরকা কাটা সহ মােট কুড়ি মিনিট আশ্রমে কাটিয়ে ট্রাম্প দম্পতি মােদির সঙ্গে আশ্রমের বারান্দায় ছবিও তােলেন। তিন বাঁদরের শ্বেত পাথরের একটি মূর্তি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। ভিজিটার্স বুকে ট্রাম্প লেখেন, এই অভূতপূর্ব সফরের জন্য আমার মহান বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে ধন্যবাদ। স্ত্রী মেলানিয়াও ভিজিটার্সবুকে স্বাক্ষর দেন।

দুই দেশের মধ্যে মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হওয়ার কথা। এই চুক্তির ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী হবে এবং একসঙ্গে কাজ করার ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশা। ভারত ও আমেরিকা উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা, পাকিস্তানকে সেদেশে সন্ত্রাসের ঘাঁটিগুলি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে, দুই দেশ মিলে এলাকার শান্তি ও সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে সকল সময়ে সাহায্য করা ইত্যাদি বিষয়ে সহমত পােষণ করা হয়। তিনি মােদি সরকারের দেশের স্বার্থে উন্নয়নমূলক কাজের প্রশংসা করেন।

এদিন ট্রাম্প তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে প্রকৃত বন্ধু বলে উল্লেখ করে তাঁর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, একজন চা-ওয়ালা হিসেবে জীবন শুরু করেন মােদি। তিনি আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভারত যেকোনও পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মােদিকে কঠোর পরিশ্রমের চলমান উদাহরণ বলে আখ্যা দেন। একজন দৃঢ় মনােভাবাপন্ন মানুষ হিসেবেও মােদির পরিচয়ের দিকটি তুলে ধরেন তিনি। নরেন্দ্র মােদিই সাহস করে দেশে অনেক সংস্কার সাধন করেছে। সারা বিশ্ব এধরনের সংস্কার দেখতে চায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ভারত মানুষের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয়, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও সহিষ্ণু দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি তাঁর ভাষণে, দেশকে ডিজিটাল পর্যায়ে উন্নীত করতে আমেরিকার সাহায্যের কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারত আমেরিকা দেশের স্বপ্ন পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। ট্রাম্প জানান, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে আরও শক্তিশালী করতে আমেরিকা সাঁজোয়া কপ্টার দেবে। আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করবে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমেরিকা কঠোর মনােভাব পােষণ করে এবং সন্ত্রাস দমনে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসে মদত দিলে বড় মূল্য চোকাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। বিনিয়ােগের পথে বাধা দূর করতে ট্রাম্প দুদেশের বাণিজ্য চুক্তিতে জোর দিয়েছেন। ভারতকে অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেবে আমেরিকা। আগামীকালই তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।