গালওয়ানে চিনের হামলার পর রবিবার প্রথম মন কি বাত অনুষ্ঠান করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকেই চরম বার্তা দিলেন চিনকে। বললেন, ভারত যেমন বন্ধুত্ব করতে জানি, তেমনই চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও জানে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি সহ দেশের একাধিক সংকটে দেশকে শোনালেন আত্মবিশ্বাসের বাণী। বললেন, ১৩০ কোটি ভারতীয়র লড়াই ২০২০ সালকে সংকট থেকে সাফল্যের বছর করে তুলবে। এই দেশ নতুন সাফল্য পাবে।
জুন মাসের শেষ রবিবার প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত অনুষ্ঠানে মোদির বক্তব্যে চিনা হামলাকারীদের আক্রমণের সূত্র ধরে মুখ্য হয়ে উঠেছিল আমজনতার আস্থা অর্জন। এবং তা ভারতীয় সেনার দেশপ্রেমের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে। গালওয়ান উপত্যকায় চিনা হামলার বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার প্রতিরোধের প্রসঙ্গে মোদি এদিন বলেন, আমাদের বীর সেনা জওয়ানরা দেখিয়ে দিয়েছেন, তারা কোনও অবস্থাতেই ভারতমাতার গৌরবে আঁচ আসতে দেবেন না। শহিদ জওয়ানদের আত্মবলিদানকে স্মরণে রেখে প্রত্যেক ভারতবাসীকে দেশরক্ষার পথ নিতেও আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী চিনা হামলায় ভারতীয় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে নাম না করে চিনকে নিশানা করে বলেন, প্রতিবেশিদের আচরণ আমরা দেখেছি। তা প্রতিরোধও করেছি। লাদাখে শহিদ পরিবারের সাহসী মনোবলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
মোদি বলেন, আপনারা দেখেছেন শহিদ সেনাদের বাবা মায়েরা বলেছেন, তাঁদের অন্য সন্তানরাও সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। বিহারের শহিদ জওয়ান কুন্দন কুমারের বাবা বলেছেন, তিনি তার নাতিকেও দেশরক্ষার কাজে পাঠাতে চান।
পূর্ব লাদাখে কিছুদিন ধরেই চিন-ভারত সংঘর্ষের আবহ তৈরি হয়েছে। এই নিয়ে সর্বদল বৈঠকেও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছিএলন নরেন্দ্র মোদি। এদিনও লাদাখ প্রসঙ্গে দেশবাসীকে আশ্বাস দিতে মোদি বলেন, ভারত তার সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে কতটা বদ্ধপরিকর তা গোটা বিশ্ব দেখেছে। ভারতে বিভিন্ন সময়ে হামলা ও আক্রমণ হয়েছে। তবে সেই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করেই ভারত এগিয়েছে। দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতিকে সঙ্গে নিয়ে। মোদি বলেন, সংকটই যে ভারতের সাফল্যের সিঁড়ি, ইতিহাসই তার সাক্ষ্য দেবে।
ভারত বন্ধুত্ব করতে জানে চোখে চোখ রেখে জবাব দিতেও জানে এবারেও সংকটের মোকাবিলা করেই ভারতকে এগিয়ে যেতে হবে। গোটা বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য ভারতকে আত্মনির্ভর ও শক্তিশালী হতে হবে। স্বাধীনতার পরে আমরা এই ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে গিয়েছি। আমাদের অনেক অস্ত্র কারখানা ছিল। এখন আবার দেশকে আত্মনির্ভর হতে হবে।
অসমের এক নাগরিকের উদাহরণ দিয়ে পরোক্ষভাবে চিনা পণ্য বয়কটে সমর্থন জানান। এদিন দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে মোদি বলেন, এই বছরের শুরু থেকেই দেশ একের পর এক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। করোনার সঙ্গে এতদিন লড়াই করতে হবে, করোনা এতবড় সমস্যা হয়ে উঠবে, তা ছ’মাস আগেও জানা ছিল না।
সেই লড়াইয়ের মধ্যেই আবার পূর্ব ভারতে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়, পশ্চিম ভারতে নিসর্গ ঘূর্ণিঝড় এসেছে। পঙ্গপাল নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। একসঙ্গে এতরকম বিপর্যয় খুব কমই দেখা গিয়েছে অতীতে। তবে এই জন্য মানুষকে আশা হারাতে বারণ করেছেন মোদি। সমস্যা ও সংকট জীবনে আসভেই। কিন্তু সেজন্য এই বছরকে খারপ বলব কেন? প্রথম ছ’টা মাস খারাপ গিয়েছে বলে, গোটা বছরকে খারাপ বলে মনে করা উচিত নয়।