সুবীর পাল
এ কোন স্বাধীনতা প্রাপ্তি? আনুষ্ঠানিক আজাদী লাভের ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণেই যেখানে স্বয়ং জাতির পিতার ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি। হায়রে ভারত মহামানবের ভাগ্য বিধাতা!
Advertisement
কলকাতার অখ্যাত বেলেঘাটা বস্তি। নিশুতি রাত। এক অশীতিপর শীর্ণ প্রবীণ বৃদ্ধের দুই গাল বেয়ে টপটপ করে অশ্রু বেয়ে পড়ছে। আদুল গা। অন্ধকার ভেদ করে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, পরণের সাদা ধুতিটা রোগাটে হাঁটু ছুঁয়ে রয়েছে কোনমতে। চোখে গোল গোল ফ্রেমের চশমা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। একি বাপুজি কাঁদছেন তো। এক দীর্ঘশ্বাসের তীব্র নিঃসঙ্গতায়। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। আমাদের জাতির পিতা কেঁদে চলেছেন। আজ যে তিনি বড্ড একাকী। ভগ্ন হৃদয়। রাজনৈতিক ত্র্যহস্পর্শে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসকে তিনি বরাবরই দুয়োরানি করে দূরেই সরিয়ে রেখেছিলেন এতকাল। সেই সুভাষচন্দ্রের জন্যই এই মুহূর্তে তিনি যে নিজেই নিজের উপরেই অভিমানী। যে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী মাত্র কয়েকটি দিন আগে চাচা নেহরুকে শুনিয়ে এসেছিলেন ভারতকে টুকরো করার আগে তাঁর দেহকে খন্ডিত করতে হবে। কে শোনে কার কথা? জিন্নাহ স্বপ্নে বিভোর ইসলামাবাদের মুসলিম সিংহাসন তালুবন্দি করার। আর নেহরু ও প্যাটেল নিজেদের মধ্যে কুস্তি লড়তে ব্যস্ত লালকেল্লার মসনদ হাসিল করার কুটিল অভিপ্রায়ে। সুতরাং করমচাঁদের আর্তি কাকস্য পরিবেদনা ছাড়া আর কিইবা অবশিষ্ট থাকতে পারে। আজ তাই জাতির পিতা বড্ড একা। তাঁর নিখোঁজ সুভাষকে কি ভীষণ মনে পড়ছে। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ঠিক প্রাক লগ্নে। বহুদিনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব কেন জানি না এক লহমার জন্য হলেও তিনি ভুলে গেছেন। ভেজা ভেজা গলায় ক্ষীণ স্বরে আক্ষেপ করছেন। হয়তো নিজের অন্তরাত্মার কাছে। কঁকিয়ে স্বগতোক্তি করে উঠলেন, জিন্নাহ নেহরু প্যাটেল আমাকে শুধু সিঁড়ির মতো ব্যবহার করেছে। যতটা ওঠার উঠলো। তারপর প্রয়োজন শেষে ফেলে দিল। আজ যদি আমার সুভাষ ফিরে আসতো ভারতে তাহলে এই দেশভাগ আমাকে দেখতে হতো না। গান্ধীজীর এই ক্রন্দনরত রাতটি ছিল দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির ঠিক আগের অমানিশা। এই তথ্যের বেশ কিছু অংশ শৈলেশ দে’র লেখা ‘আমি সুভাষ বলছি’ বইতে উল্লেখ রয়েছে।
Advertisement
কি অদ্ভুত সমাপতন। স্বাধীনতা হস্তগত হওয়ার পঁচাত্তর বছর পরেও গান্ধীজীর নেতাজী সম্পর্কিত এই শেষতম অনুরক্তির সমর্থন মিললো দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা অজিত দোভালের বক্তব্যে। তিনি বলেন, জিন্নাহ একদা স্বীকার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বোস যদি দেশে থাকতো তাহলে ভারতকে কোনভাবেই টুকরো করা সম্ভব হতো না। সুতরাং স্বাধীনতা ঘোষণার আগে থেকেই জিন্নাহরা ক্রমশই ত্রিচক্রী হয়ে উঠেছিল দেশভাগের সাচ্চা সমর্থক হয়ে, তার জন্য জাতির পিতার সেদিনের আক্ষেপ যে কোনও ভাবেই ভুল ছিল না তা অজিত দোভালের সাম্প্রতিক মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
বর্তমান ভারতের কথা বলতে গেলে নিশ্চয়ই করে স্মরণে আসে অতুলপ্রসাদ সেনের সেই কালজয়ী রচিত গান, ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’ আজও কি আশ্চর্য রকমের প্রাসঙ্গিক। আসলে এটাই যে এখনকার প্রকৃত ভারতবর্ষের চালচিত্র। গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের চিরন্তনী ঐতিহ্য। আমাদের দেশের মধ্যে ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল রয়েছে। এখানে ১২২টি প্রধান ভাষা সহ ১৫৯৯টি অন্যান্য ভাষা বিদ্যমান। বর্ণ রয়েছে ৬৪০০টি। ৬টি ধর্ম। জাতি গোষ্ঠীর সংখ্যাও ৬টি। এখানে ৫১টি উৎসব পালন করা হয় মহা সমারোহে। যার মধ্যে ১৭টি জাতীয় স্তরে আর ৩৪টি আঞ্চলিক পর্যায়ে উদযাপন করা হয়। তাই তো গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করি, ‘মেরা ভারত মহান।’ এই দেশ বহুত্ববাদের তন্ত্রে একাত্মতার মন্ত্রে দীক্ষিত মেক ইন ইন্ডিয়া বীজমন্ত্রে। এই ভারত একাত্মতার সাধনে বহুত্ববাদের পালনেও শিক্ষিত। বিশ্ব শান্তির এই মহান প্রতিপালক যে গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রই। তাই তো ৭৯তম ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রতিটি নাগরিকের অন্তরাত্মার স্বভিমানে তাই একটাই হয়ে উঠেছে স্বরধ্বনি ব্রহ্মনাদ, ‘জয় হিন্দ।’
কিন্তু এটাই কি আমাদের দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আসল অতীত ঐতিহ্য? গোপন ইতিহাস তা কিন্তু সমর্থন করে না। বরং দেশের বিতর্কিত ইতিহাসের পাতা পাতা ঘটনাক্রম বেইমানির তথ্যে ভরপুর ঠাসা। তা না হলে সেই ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্টে ঘটা বিমান দুর্ঘটনা ও নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য আজও কেন অধরাই রয়ে গেল। আসলে অধরা করে করে আজও রাখা হয়েছে আন্তর্জাতিক অনৈতিক সখ্যতার কারণে। অনেকেই দাবি করে থাকেন, তদানীন্তন সময়ে মিত্র শক্তির অপর দোসর রাশিয়ার এক কারাগারে সুভাষকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল জওহরলাল নেহরুর অভিসন্ধি মূলক মদতেই। হয়তো বহু কারণেই তখনকার দেশীয় কম্যুনিস্টরা স্লোগান তুলেছিলেন, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়। তাই হয়তো তাঁরা দেশের জাতীয় পতাকা দেখে আজও কোনও এক অজ্ঞাত বিদেশি ইগোয় বশবর্তী হয়ে স্যালুট মোটেও করতে চান না। জয় হিন্দ বলতে গেলে জিভে জড়তার ছত্রাকও একইসঙ্গে বাসা বাঁধে তাঁদের। তবে প্রথিতযশা ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠীর ভাষায়, এই আজাদী পুরোপুরি ঝুটা না হলেও জন্মসূত্রে এটা আদতে প্রতিবন্ধীই।
আসলে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী নৈতিক ভাবে হওয়ার কথাই ছিল না জওহরলালের। স্বাধীনতার পড়ে ওই আসনে বসার কথা ছিল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের। কিন্তু এসবের পিছনে নেহরুর তুরুপের তাস যে ছিল একটাই। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিতাড়িত মহাত্মাজী হয়ে উঠেছিলেন চাচাজীর সেই মোক্ষম তাস। সেই এক পটভূমিকা। কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হলেন সুভাষচন্দ্র। ব্যাস জাতির পিতার সেই ঐতিহাসিক ডায়লগ ১৯৩৯ সালে। সীতারামাইয়া পরাজয় হলো আমার পরাজয়। এই অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দেশ জুড়ে ভাসিয়ে দেওয়ার পর নেতাজী ওই পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে আসেন।
প্রায় একই কাণ্ড ঘটেছিল স্বাধীনতার একেবারে প্রাক মুহূর্তে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসন নিয়েও চুড়ান্ত দলাদলি ছিল খোদ কংগ্রেসের অন্দরমহলে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং জওহরলাল নেহরুর মধ্যে তা কেন্দ্রীভূত হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ কংগ্রেসের ওয়াকিং কমিটির ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ১২টি ভোট পেয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আর বাকি তিনটি ভোট ঝুলিতে পড়েছিল জহরলাল নেহরুর। ব্যাস ফের আসরে নেমে পড়লেন খোদ গান্ধীজি। তিনি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে আসার জন্য একপ্রকার বাধ্য করেন। গান্ধীজি নিজে একটি পদত্যাগপত্র লিখে তাতে স্বাক্ষর করার জন্য প্যাটেলকে বললে বল্লভভাই বলে ওঠেন, “স্বাধীনতার শুরুতেই গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরা হলো।” সেই সময়কার একটি ইংরেজি ম্যাগাজিনে ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছিল। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদন ছাড়া প্রধানমন্ত্রী পদ নির্বাচন করা যায় না, তখনকার এমনই দেশীয় দস্তুর উপেক্ষা করে স্বয়ং গান্ধীজি সেখানে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নাম ঘোষণা করে দেন পন্ডিত জহরলাল নেহরুর। অথচ আজও তাঁর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয় দেশ জুড়ে।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন প্রায় শেষ লপ্তে এসে পৌঁছেছে, তখন ব্রিটিশ কোষাগারে চরম আর্থিক সংকট তৈরি হয়। তখনই ঠিক হয় এই আর্থিক নৈরাজ্যের অবকাশে প্রাথমিক ভাবে ১৯৪৮ সালে ভারতের স্বাধীনতা হস্তান্তর করা হবে বৃটেনের পক্ষ থেকে। কিন্তু ১৫ আগস্ট দিনটিতে জাপান আত্মসমর্পণ করায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন সিদ্ধান্ত নেন ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতকে চুড়ান্ত স্বাধীনতা অর্পণ করা হবে। এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পর ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারত জুড়ে চলতে থাকে ব্যাপক ধর্মীয় দাঙ্গা। নোয়াখালী থেকে লাহোর মধ্যে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে পড়ে রয়েছে শুধু মানব লাশের পাহাড়। মৃতের সংখ্যাটা প্রায় কুড়ি লক্ষ। এই ধর্মীয় গণহত্যার দায় একমাত্র মহম্মদ আলি জিন্নাহর? নেহরু কোন অকুস্থলে সশরীরে গিয়ে এসব অবসানের আহ্বান জানিয়ে ছিলেন? বরং বহুক্ষেত্রে তাঁর যাওয়ার কথা উঠলেও নানা অছিলায় তিনি ওইসব অঞ্চল পরিকল্পিত পর্যায়ে এড়িয়ে গেছেন। সেই সময় জিন্নাহ ছাড়া সমগ্র দেশে আর কোনও নেতা ছিলেন না? এতই একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল একা জিন্নাহর এই বিশাল দেশে?
ঠিক কি ঘটেছিল স্বাধীনতার আগের রাতে। গান্ধীজীর অবস্থান পূর্বেই উল্লেখিত। তিনি স্বাধীনতা উৎসবের নেহরু ও প্যাটেলের পাঠানো আমন্ত্রণ পত্র গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। বলেন, দেশ এখন দাঙ্গায় রক্তাক্ত। আমার পক্ষে ওই উৎসবে সামিল হওয়া সম্ভব নয়। আমি কলকাতাতেই থাকবো।
সেদিন রাতে দিল্লিতে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেও পাঁচ লক্ষ উদ্বেল মানুষের জমায়েত ছিল সেখানে। সবে সন্ধ্যা নেমেছে। রাজধানীর একটি ঘরে বসে আছেন পদ্মাজা নাইডু, ইন্দিরা গান্ধী ও জওহরলাল। তখন হঠাৎ লাহোর থেকে একটি ফোন আসে। ফোন ধরলে নেহরু জানতে পারেন, লাহোরের ঘরে ঘরে জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই হত্যা করা হচ্ছে নির্বিচারে। এমন পরিস্থিতি জেনে বিষন্ন অবস্থায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেন নেহরু। কিন্তু পদ্মাজা নাইডুর পরামর্শে অবশেষে তিনি সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিতে সম্মত হোন।
ঠিক রাত নটায় অধুনা রাষ্ট্রপতি ভবণে একে একে হাজির হোন লর্ড মাউন্টব্যাটেন, নেহরু, প্যাটেল ও রাজেন্দ্র প্রসাদের মতো ব্যক্তিত্বরা। রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে ঠিক রাত নটায় শুরু হয়েছিল সেই সভা। এরপরেই সুচেতা কৃপালিনী গেয়ে উঠলেন বন্দে মাতরম গানটি। তারপর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ পাঠ করলেন ভারত স্বাধীনতার প্রস্তাব। সঙ্গে সঙ্গে রাজেন্দ্র প্রসাদ বলে উঠলেন, ব্রিটিশকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভারত এখন থেকে নিজের শাসন ভারের দায়িত্ব নিজেই তুলে নিল। ঠিক রাত ১১.৫৫ মিনিট। নেহরু তাঁর ভাষণে বলেন, সারা পৃথিবী হয়তো এখন ঘুমাচ্ছে। কিন্তু এই লগ্নে ভারত স্বাধীন লাভ করলো।
এতো স্বাধীনতার অলিন্দে খোলামেলা দক্ষিণা বাতাস। কিন্তু পরাধীনতার গ্লানি মোছার অন্তরালে অনেক অনেক গুঞ্জনও আমাদের দেশের বিভিন্ন মাধ্যমে আজও চোরাগোপ্তা ফিসফিসানি চলছে তো চলছেই। ভারত তখন দরিদ্র ক্লিষ্ট এক ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলিত দেশ। জাতির পিতা তখন অনাহারে জর্জরিত রক্তাক্ত নোয়াখালী পদযাত্রায় ব্যস্ত। সেই সময় তিনি নিত্য আহার করতেন পেস্তা, আখরোট, বাদাম, বেদানা, আপেল, ছাগলের দুধ। কথিত আছে, উনার এই খাদ্য তালিকার বহর দেখে বিরক্ত হয়ে সরোজিনী নাইডু একবার বলেছিলেন, বাপু আপনাকে গরীব বানিয়ে রাখতে অনেক খরচ হয়ে যাচ্ছে। এমনকি গান্ধীজীর বিখ্যাত জীবনীকার রামচন্দ্র গুহ এও জানিয়েছেন, ব্রহ্মচর্য পরীক্ষার নামে কিশোরীদের সঙ্গে নিয়ে বাপুজী একই শয্যায় নগ্ন হয়ে রাতের পর রাত অতিবাহিত করতেন তাঁরই আশ্রমে। এছাড়া শহীদ ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি পর্ব দ্রুত কার্যকর করতে গান্ধীজির ভূমিকা আজও মোটেই সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। তিনি তো আবার বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং’কে সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করতেও দ্বিধা বোধ করেননি।
শুধু গান্ধীজীর বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে কি লাভ? চাচা নেহরুর সঙ্গে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডউইনার সখ্যতাও বিতর্ক এড়াতে পারেনি দেশীয় স্তরে। এ’প্রসঙ্গে ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, এডউইনার ব্যক্তিগত অনুরোধেই নাকি কাশ্মীর ইস্যুর মতো অতি স্পর্শকাতর বিষয়টি ভারতের তরফে আগ বাড়িয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে তোলা হয়েছিল নেহরুর উদ্যোগে। জওহরলালের এমন ভূমিকা প্রকৃতই তাঁর নিজের ইমেজকেই বারেবারে চ্যালেঞ্জর মুখে ছুঁড়ে দিয়েছে।
বহুল মতে, যাহা রটে তাহা কিছু বটে। তবুও সন্দেহ জাগে এসব প্রকৃতই কি গুজব? নাকি সত্য? তাছাড়া দেশের সরকারইবা কেন এমন বিতর্কিত ঐতিহাসিক ইস্যুগুলো নিয়ে ধারাবাহিক পর্যায়ে নীরব? প্রশ্নগুলো নিশ্চিত ভাবে দেশের স্বাধীনতাকে কোনও না কোনও মেলবন্ধনে জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর উত্তর? মেরা ভারত মহান থেকে মেক ইন ইন্ডিয়ার যাত্রাপথে শুধুই নিরুত্তর। আগাগোড়াই নিরুত্তর। রাষ্ট্রীয় সৌজন্যে স্বাধীন ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিকের কি প্রকৃত সত্যটা জানার অধিকার নেই এতটুকু। উদাসীন এই রাষ্ট্রগত মৌনতাই কি আমাদের শিকেয় ছেঁড়া ভাগ্যের আসল বহমান স্বাধীনতা?
Advertisement



