জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর

ভারতের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এজেন্ডায় এখন জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ধারা ৩৭০ এবং ধারা ৩৫এ বিলুপ্তির চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে এই অশান্ত রাজ্যে বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) বিষয়টি।

Written by SNS New Delhi | June 5, 2019 1:52 pm

অমিত শাহ (Photo: Indrajit Roy/IANS)

ভারতের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এজেন্ডায় এখন জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ধারা ৩৭০ এবং ধারা ৩৫এ বিলুপ্তির চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে এই অশান্ত রাজ্যে বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাসের (ডিলিমিটেশন) বিষয়টি।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা গঠিত হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। শেখ আবদুল্লাহ’র সরকার কাশ্মীর উপত্যকার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ৪৩টি বিধানসভা আসন। অপরদিকে জম্মুর জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ৩০টি এবং লাদাখ অঞ্চলকে দেওয়া হয়েছিল ২টি আসন।

বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরে মােট ৮৭টি বিধানসভা আসনের মধ্যে কাশ্মীরে রয়েছে ৪৬টি, জম্মুতে রয়েছে ৩৭টি এবং লাদাখে রয়েছে ৪টি বিধানসভা আসন।

২০০২ সালে ফারুক আবদুল্লাহ’র তদানীন্তন রাজ্য সরকার রাজ্যের সংবিধান সংশােধন করে আসন বিন্যাসকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘােষণা করে দিয়েছিল। যদিও সেই নিষেধাজ্ঞা রদ কার ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যের রাজ্যপালের।

সুত্রের খবর অনুযায়ী নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের একবার রাজ্যে বিধানসভা আসনগুলি পুনর্বিন্যাসের জন্য নতুন ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এর জন্য তিনি মঙ্গলবার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন রাজ্যপল সত্যপাল মালিক, গােয়েন্দা প্রধান (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরাে) রাজীব জৈন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গওয়ার সঙ্গে।

প্রসঙ্গত, জম্মু ও কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর এবং মেয়াদ শেষে আগামী ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতে পারে বলেও খবর। এর পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা আসনের পুনর্ন্যিাসের মাধ্যমে গুজ্জর, বাকেরওয়াল, গাড্ডিস এবং সিপ্পি সম্প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষশ।

বর্তমানে ৭টি বিধানসভা আসন সংরক্ষিত আছে– যেমন ছম্ব, দোমান, রনবীর, সিংপুরা, সাম্বা, হীরানগর, চেমানি এবং রম্বান। এগুলি সবই জম্মুর অন্তর্গত। সংরক্ষণের বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার বিষয়টিকে ক্যাবিনেট সাব কমিটির হাতে সঁপে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও সদর্থক ফল পাওয়া যায়নি।

যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন গুলামনবী আজাদ, তখন রাজ্য সরকার জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের তিনটি অঞ্চল জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখে সরাসরি ২৫ শতাংশ আসন বৃদ্ধির প্রভাব দেয়। যার ফলে এই রাজ্যে ২২টি বিধানসভা আসন বৃদ্ধি পায়। ২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী জন্ম ডিভিশনের মােট জনসংখ্যা ছিল ৫৩৭৮৫৩৮, যার মধ্যে ডােগরা ছিল ৬২.৫৫ শতাংশ। রাজ্যের মােট জমির আয়তনের ২৫.৯৩ শতাংশ জায়গা রয়েছে জম্মুতে এবং সেখানকার জনসংখ্যা রাজ্যের মােট জনসংখ্যার ৪২.৮৯ শতাংশ।

২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাশ্মীর উপত্যকায় জনসংখ্যা হল ৬৮৮৮৪৭৫, যাদের মধ্যে ৯৬.৪০ শতাংশ মুসলিম। রাজ্যের মােট জমির ১৫.৭৩ শতাংশ রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকায়, অথচ রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫৪.৯৩ শতাংশ কাশ্মীরে থাকেন।

লাদাখের ভাগে রয়েছে রাজ্যের মােট জমির আয়তনের ৫৮.৩৩ শতাংশ অথচ সেখানে রাজ্যের মােট জনসংখ্যার ২.১৮ শতাংশ মানুষের বাস। লাদাখের জনসংখ্যা হল ২৭৪২৪৯, যাদের মধ্যে ৪৬.৪০ শতাংশ মুসলিম, ১২.১১ হিন্দু এবং ৩৯.৬৭ শতাংশ বৌদ্ধ।

রাজ্যে শেষবারের মতাে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ হয়েছিল ১৯৯৫ সালে বচারপতি কে কে গুপ্তা কমিশনের তত্ত্বাবধানে।

ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে প্রতি দশ বছর অন্তর আসন পুনর্ন্যিাসের কাজ করতে হবে। কিন্তু ২০০২ সালে ফারুক আবদুল্লাহ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন জম্মু ও কাশ্মীরের রিপ্রেসেনটেশন অব পিপল অ্যাক্ট ১৯৫৭ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধানের ৪৭(৩) ধারা সংশােধন করে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজটি ২০২৬ পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি শাসন চলাকালীন সংবিধানের ৪৭ নং ধারা সংশোধন করে ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন করার নির্দেশ দিতে পারেন।

এই সুযােগকে কাজে লাগিয়ে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চাইছেন রাজ্যের বিধানসভা আসনগুলির পুনর্বিন্যাসের কাজ ফের শুরু করতে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই কাজটি করে ফেললে জম্মু অঞ্চল থেকে নিজেদের পক্ষে কিছু আসন বেশি জিতবে বিজেপি। এর জন্য পুনর্ন্যিাসে জনসংখ্যার অনুপাত অনুসারে আসন কমানাে কিংবা বাড়ানাে যেতে পারে, যে আসনগুলি অনায়াসে জিততে পারবে বিজেপি।

পাশাপাশি এদিন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে।