হিমাচলে দোলাচল, সঙ্কটে কংগ্রেস 

Written by SNS March 1, 2024 8:38 pm

সিমলা, ১ মার্চ – হিমাচল প্রদেশে সংকটে কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুর উপর চাপ বাড়াতে বিদ্রোহী ৬ বিধায়ককে দলে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংয়ের ছেলে বিক্রমাদিত্য। সূত্রের খবর, বিজেপির পক্ষে যে ৬ বিধায়ক ‘ক্রসভোট’ করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন হিমাচলের ওই ‘বিদ্রোহী’ মন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী ৬ বিধায়ককে বরখাস্ত করেন রাজ্যের স্পিকার কুলদীপ সিং পাথানিয়া। রাজিন্দার রানা, সুধীর শর্মা, ইন্দার দত্ত লখনপাল, দেবিন্দর কুমার ভুটু, রবি ঠাকুর এবং চেতন্য শর্মা এখন রাজ্যের বিধায়ক নন। যদিও স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই ছয় বিধায়ক। ফলে এখন তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত । 

ওই ৬ বিধায়ক দীর্ঘদিনের কংগ্রেসি এবং বীরভদ্র পরিবারের ঘনিষ্ঠ। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বীরভদ্র সিংয়ের পরিবারের পরামর্শেই ওই ৬ বিধায়ক দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দেন। পালটা  সুখু ওই ছয় বিধায়কের পদ বাতিল করে দেওয়ায় চাপে পড়ে যায় বীরভদ্র শিবির। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী তথা হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি প্রতিভা সিং চাইছেন ওই ৬ জনকে দলে ফেরাতে।   ওই বিদ্রোহীরা যখন হরিয়ানায়  ছিলেন তখন তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন বীরভদ্রর পুত্র বিক্রমাদিত্য। এখন তিনিও ওই বিধায়কদের দলে ফেরানোর দাবিতে সরব।

কংগ্রেস এখন উভয় সংকটে। একদিন আগে যাঁদের  বিধায়ক পদ খারিজ হয়েছে, তাঁদের হঠাৎ করে ফিরিয়ে নিলে দলে ভালো বার্তা যাবে না। এসবের মধ্যে আবার বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জয়রাম ঠাকুর হুঙ্কার দিয়েছেন, “সুখু সরকারের স্থায়িত্ব নেই। মুখ্যমন্ত্রী যে কোনওদিন সকালে উঠে হয়তো দেখলেন তাঁর সরকার পড়ে গিয়েছে।” পরক্ষণেই অবশ্য তিনি অবস্থান বদলে বলে গিয়েছেন, “সরকার যদি টিকেও যায়  তা মসৃণভাবে চলবে না।ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে।”

এদিকে শুক্রবার দুপুরে হিমাচল প্রদেশ কংগ্রেসের সভানেত্রী প্রতিভা সিংহ বললেন, ‘‘আমাদের দলের চেয়ে বিজেপির কাজের পদ্ধতি ভাল!’’ সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন,  ‘‘মোদির নেতৃত্বে বিজেপি আরও অনেক কিছু করবে। আমাদের অবস্থান দুর্বল।’’ তাঁর এই মন্তব্যের জেরে হিমাচলে কংগ্রেস সরকারের সঙ্কট আপাতত কাটছে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার শিবকুমার  প্রতিভা ও বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে  সাক্ষাৎ করতে যান। মুখ্যমন্ত্রী সুখুর বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠক হয়। রাতে এআইসিসির  পর্যবেক্ষক ভূপেন্দ্র সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রতিভাকে নিয়ে। তিনি  বলেন, ‘‘সমস্যা মিটেছে। সরকারের কাজকর্ম সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গড়া হবে।’’ সেই  বক্তব্যে সায় দেন প্রতিভাও।

শুক্রবারে ফের সুর পাল্টাল কেন, সে প্রসঙ্গে কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিদ্রোহী ৬ জন কংগ্রেস বিধায়কের তড়িঘড়ি পদ খারিজ নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্রতিভা ও বিক্রমাদিত্যের। ফলে সুখু সরকারের সঙ্কট কেটেও কাটছে না বলে মনে করছে রাজনীতিকদের একাংশ। মঙ্গলবার ভোটপর্ব শুরুর আগেই প্রতিভা সরাসরি কংগ্রেস বিধায়ক দলে ভাঙনের কথা জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী সুখুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের কার্যকলাপে কংগ্রেস বিধায়কদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। রাজ্যসভা ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে।’’

৬৮ সদস্যের হিমাচল বিধানসভায়  ‘জাদুসংখ্যা’ ৩৫। ৬ জন বিধায়ক পদ হারানোয়  এখন রয়েছেন ৬২ জন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার হিসেবে ৩৩-এ নেমেছে সেই সংখ্যা । এই মুহূর্তে কংগ্রেসে ৩৪ বিধায়ক। বিজেপির ২৫। অর্থাৎ তিন নির্দলকে পাশে পেলেও কংগ্রেসকে ছুঁতে পারবে না তারা। তবে  প্রতিভার মন্তব্যে ফের অনিশ্চয়তার ছায়া রাজনৈতিক মহলে।