মাথা খারাপের নাটক, চিকিৎসার দরকারই নেই বিনয়ের, আর্জি ফেরাল দিল্লি আদালত

দেওয়ালে মাথা ঠুকে তার মক্কেলের নাকি স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, এমনটাই দাবি করেছিলেন ফাঁসির আসামি বিনয় শর্মার আইনজীবী এপি সিং।

Written by SNS New Delhi | February 24, 2020 3:44 pm

নির্ভয়া কাণ্ডের চার অপরাধী অক্ষয় ঠাকুর, পবন কুমার গুপ্তা, মুকেশ সিং এবং বিনয় শর্মা। (File Photo: Twitter | @7ru7h_1)

দেওয়ালে মাথা ঠুকে তার মক্কেলের নাকি স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে, এমনটাই দাবি করেছিলেন ফাঁসির আসামি বিনয় শর্মার আইনজীবী এপি সিং। দাবি আরও ছিল বিনয়ের মানসিক স্থিতি নাকি এতটাই টলে গেছে যে সে তার মাকেও ঠিকমতাে চিনতে পারছে না। মানসিক রােগের চিকিৎসার আর্জি জানিয়ে দিল্লির আদালতে পিটিশনও দাখিল করা হয়েছিল। শনিবার সেই আর্জি পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিল দিল্লির আদালত। সেই সঙ্গে বিচারক সাফ বলে দিলেন, মাথা খারাপের সবটাই বিনয়ের নাটক। তেমন কিছুই হয়নি। তাই চিকিৎসার প্রয়ােজনও নেই।

গত রবিবার নিজের সেলের মধ্যেই দেওয়ালে মাথা ঠকতে শুরু করে বিনয়। এক জেল কর্মী দেখে ফেলায় তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা বলেন, চোট সামান্যই বিনয়ের। কিন্তু বিনয়ের আইনজীবী দাবি করেন, মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে তার মক্কেল। তার ডান হাতেও ফ্র্যাকচার হয়েছে। মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। আইনজীবী আরও বলেন, বিনয় এখন কাউকে চিনতে পারছে না। এমনকি ওর মাকেও নয়। ওকে ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যান বিহেভিয়ার অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানাে হােক। এই মর্মেও আদালতে পিটিশনও দাখিল করেন আইনজীবী এপি সিং।

এদিন সেই মামলার শুনানিতে বিচারক এই পিটিশন খারিজ করে দেন। সরকারি আইনজীবী ইরফান আহমেদ বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার দরকারই নেই বিনয়ের। জেল কর্তৃপক্ষই আসামিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

তিহার ডিজি সন্দীপ গােয়েল বলেছেন, তাঁদের কাছে এমন নথি রয়েছে যেটা প্রমাণ করে বিনয় শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তার মধ্যে কোনওরকম মানসিক বিকার দেখা যায়নি। মৃত্যু পরােয়ানা জারি হওয়ার পরেই প্রাণভিক্ষার আরও কোনও রাস্তা খােলা নেই দেখে সে আমরণ অনশনে বসেছে। তাতেও বিশেষ ফল না হওয়ায়, এখন নিজের মাথা ঠুকে বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছে।

২০১২ সালে প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে চলন্তবাসে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের পর খুনের ঘটনায় চার দণ্ডিত মুকেশ সিংহ, বিনয় শর্মা, অক্ষয় ঠাকুর ও পবন গুপ্তর ফাঁসির আদেশ দেয় নিম্ন আদালত। তার পর থেকেই দীর্ঘ আইনি লড়াই চলছে। পবন গুপ্ত বাদে তিন জনই তাদের সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ করে ফেলেছে। বিনয়ের সর্বশেষ প্রাণ ভিক্ষার আজিও খারিজ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। পবন গুপ্তর হাতে এখনও রায় সংশােধনের আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জির বিকল্প থাকলেও তারও কোনও আবেদন কোথাও আটকে নেই বলেও জানান জেল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীরা। এর পরেই বিচারক তৃতীয় বারের জন্য মৃত্যু পরােয়ানা জারি করেন।

এর আগেও নির্ভয়া কণ্ডের দণ্ডিতদের ফাঁসির দিনক্ষণ নির্ধারিত করে দু’বার মৃত্যু পরােয়ানা জারি করেছে পাটিয়ালা হাউস কোর্ট। প্রথম পরােয়ানায় ফাঁসি কার্যকরের তারিখ ছিল জানুয়ারি। তার পর দ্বিতীয় পরােয়ানায় সেই তারিখ ছিল ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তার মধ্যেও সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় গত জানুয়ারি পাটিয়ালা হাউস কোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।

দিল্লি হাইকোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একসঙ্গে মামলা করেছিল কেন্দ্রীয় ও দিল্লির সরকার। দাবি ছিল, যাদের সামনে আইনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাদের আলাদা ভাবে ফাঁসিতে ঝােলানাে যাবে না কেন এবং এক অপরাধীর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে বাকিদের ফাঁসি পিছিয়ে যাবে কেন সে প্রশ্নও তুলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের দেওয়া সময়সীমা শেষের পর শীর্ষ আদালত জানায়, নিম্ন আদালতে এবার মৃত্যু পরােয়ানা জারি করতে আর কোনও বাধা নেই। সেই মতাে পাটিয়ালা হাউস কোর্টে মৃত্যু পরােয়ানার আর্জি জানায় সরকার পক্ষ।