হরিদ্বারের মনসাদেবী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭ জন পুণ্যার্থীর। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, আট জন মহিলা এবং সাত জন শিশু রয়েছে। রবিবার সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে মন্দির চত্বরে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সূত্রের খবর, রবিবার ভোর থেকেই প্রচুর ভক্ত ভিড় জমান মন্দিরে। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই মন্দিরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। সেখানেই হঠাৎ করে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুজোর তাড়ায় অনেকেই ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। সিঁড়িতে একাধিক মানুষ পড়ে যান, তাঁদের উপর দিয়েই অনেকে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান গাড়োয়াল বিভাগের কমিশনার বিনয় শঙ্কর পান্ডে। তিনি জানান, উদ্ধারকাজে গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিভাগকে। গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। তাতে দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্স একের পর এক এসে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকাজ চালায়।
বিহার থেকে আসা আর এক পুণ্যার্থী জানান, হঠাৎই মন্দিরে বহু পুণ্যার্থী জড়ো হন। তাঁরা একে অপরকে ধাক্কা দিতে শুরু করেন। সেই সময় ভিতর থেকে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসছে থাকেন পুণ্যার্থীরা। একে অন্যকে ধাক্কা দিয়ে ছুটছিলেন। ছুটে পালানোর সময়ে লোকজন পড়ে যান। ভিড়ে তাপে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে গিয়েছে ওই ব্যক্তির।
হরিদ্বারের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) নীলেশ ভার্নের কথায়, ‘বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে, এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সেই আতঙ্ক থেকেই এই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। মন্দিরের সিঁড়িতে পড়ে যান কয়েক জন ভক্ত। তাঁদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আরও অনেকে একে অপরের গায়ের উপর পড়েন।’ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কীভাবে এই বিপর্যয় ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেছেন। শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। তিনি জানান, হরিদ্বারের মনসাদেবী মন্দিরের দুর্ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামির সরকার।
হরিদ্বারের মনসাদেবী মন্দিরটি বিলওয়া পাহাড়ের উপর অবস্থিত। রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের কোলে রয়েছে সেটি। রাস্তা থেকে সোজা সিঁড়ি উঠে গিয়েছে মন্দির পর্যন্ত। এছাড়াও রয়েছে রোপওয়ে। প্রতিদিনই হাজার হাজার পুণ্যার্থী এখানে আসেন পুজো দিতে। শ্রাবণ মাসে হরিদ্বারে ভিড় হয় বেশি। সারা দেশ থেকে ভক্তেরা এই শহরে এসে গঙ্গার জল নেন। কাঁওয়াড়যাত্রীদেরও ভিড় লেগে থাকে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল রবিবারের এই ঘটনা।