পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নিলেও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বে কোনও চিড় ধরবে না, স্পষ্ট বার্তা দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। শনিবার দোহা সফরে যাওয়ার পথে বিমানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি পরিণত ও বাস্তবসম্মত বিদেশনীতির অংশ। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক ঐতিহাসিক, গভীর এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হারাতে হবে বলে আমি মনে করি না।’
রুবিয়োর এই মন্তব্য এমন সময়ে এল, যখন আমেরিকা এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুনভাবে গতি পাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। যদিও ভারত সরকার এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। আবার পাকিস্তান প্রকাশ্যে আমেরিকার মধ্যস্থতার প্রশংসা করেছে এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার বলেছে, এই উদ্যোগের জন্য ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য।
Advertisement
সম্প্রতি পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পৃথকভাবে হোয়াইট হাউসে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই দেশের সম্পর্ক ঘিরে নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং সন্ত্রাসদমন নিয়ে আলোচনা হয়। অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নীতিতে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ভারতের উপর আমেরিকার শুল্ক হার ৫০ শতাংশ, যেখানে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা মাত্র ১৯ শতাংশ।
Advertisement
এই অবস্থায় রুবিয়ো বলেন, ‘ভারতের মতো একটি বড় দেশ এবং আমাদের মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমরা জানি, চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবুও আমরা এমনভাবে এগোতে চাই, যাতে ভারতের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। এখন চাইছি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হোক।’
তিনি আরও জানান, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ শুরুর আগেই ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ওয়াশিংটনের। তাঁর কথায়, ‘আমরা পুনরায় একটি কৌশলগত বন্ধুত্বের জোট তৈরি করতে চাই। তবে সেই জোটের ভিত্তি হবে পারস্পরিক স্বার্থ এবং স্থিতিশীলতা।’
জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার মালয়শিয়ায় আন্তর্জাতিক সংগঠন আসিয়ানের সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করবেন মার্কো রুবিয়ো। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শুল্কনীতি এবং রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই বৈঠকের আগে রুবিয়োর এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন স্পষ্ট করে দিল যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা হলেও ভারতই থাকবে আমেরিকার কূটনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে।
Advertisement



