অসাংবিধানিক জানিয়ে ইলেক্টোরাল বন্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের

Written by SNS February 15, 2024 3:30 pm

দিল্লি, ১৫ ফেব্রুয়ারি– লোকসভা নির্বাচনের আগে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত৷ ইলেক্টোরাল বন্ডকে অসাংবিধানিক তকমা দিয়ে দিষিদ্ধ ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ নিজের রায় ঘোষণায় শীর্ষ আদালত জানাল, মোদি জমানায় চালু ইলেক্টোরাল বন্ড পদ্ধতি সংবিধানের ১৯-এর এ ধারার পরিপন্থী৷ এই ইলেক্টোরাল বন্ড পদ্ধতি বন্ধ হওয়া উচিত৷ শীর্ষ আদালত বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলি ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ৷ রাজনৈতিক দলের অর্থ সংগ্রহের এই ব্যবস্থা ২০০৫ সালের তথ্য জানার অধিকার আইনের পরিপন্থী৷ জনসাধারণের জানার অধিকার আছে কারা রাজনৈতিক দলগুলিতে চাঁদা দিচ্ছে৷
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূডে়র নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ইলেক্টোরাল বন্ড নিয়ে রায় দেয়৷ বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পাদরিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র৷ গত বছর ২ নভেম্বর শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল৷

এই রায়ের পেছনে কাজ করছে কালো টাকা সাদা করার প্রবণতা বন্ধ করার চেষ্টা৷ শীর্ষ আদালতের আশঙ্কা, বন্ডের মাধ্যমে এভাবে অনুদান দেওয়ার মধ্যে পালটা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে৷ সুপ্রিম কোর্টের সাফ বক্তব্য, শুধু কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঋণদাতাদের গোপনীয়তা বজায় রাখার অজুহাতে এই পদ্ধতি চলতে দেওয়া যায় না৷

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, শীর্ষ আদালতের এই ঘোষণা কেন্দ্র সরকারে বিরাজমান বিজেপির জন্য যেমন বড় ধাক্কা আবার অন্যান্য বিরোধী দলগুলি বিশেষ করে কংগ্রেসের কাছে স্বস্তির খবর৷ কারণ সাম্প্রতিক রাজনৈকি দলগুলির প্রাপ্ত অর্থের পরিমান দেখলে বোঝা যাবে বিজেপি গত বছর ইলেক্টোরাল বন্ডকে থেকে সবথেকে বড় লাভবান দল৷ ২০২২-২০২৩ বছরে বন্ড মারফত লেনদেন হওয়া ১৭১ কোটির মোট অর্থের ৫৪ শতাংশই বিজেপি পেয়েছে৷ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই অনুদানের অঙ্ক ছিল ২৩৬ কোটি টাকা৷ সেখানেই বিজেপি ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে বিজেপি পেয়েছিল ১৩০০ কোটি টাকা৷ বাকি ৪৬ শতাংশ পেয়েছে অবশিষ্ট শতাধিক দল৷ সেই কারণেই সম্প্রতি কংগ্রেসকে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের জন্য রাস্তায় নেমে চাঁদা সংগ্রহ শুরু করতে হয়৷

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রির স্কিম চালু করার কথা বলেন৷ পরের বছর স্কিমটি চালু হয়৷ ততে বলা হয় বছরে দু’বার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি করতে পারবে৷ নাগরিকেরা বন্ড কিনে তা কোনও রাজনৈতিক দলকে দান করতে পারেন৷ এই বন্ডে কোনও সুদ দেওয়া হয় না৷ কিন্ত্ত কে কোন দলকে বন্ড মারফত অর্থ সাহায্য করল তা জানার উপায় থাকে না

যদিও বন্ড চালুর আগে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম ছিল কোনও রাজনৈতিক দলকে কুডি় হাজার টাকার বেশি অর্থ দান করলে তা চেকে দিতে হবে৷ এই নিয়ম ফাঁকি দিতে অনেকেই কুডি় হাজার টাকা দু-কিস্তিতে নগদে জমা করত৷ তাতে রাজনৈতিক দলগুলিও তাদের আয় গোপন করতে পারত৷ দাতাও কালো টাকা সাদা করে নেওয়ার সুযোগ পেতেন৷

নির্বাচন কমিশন এই অনিয়ম আটকাতে এখন টাকার অঙ্ক কমিয়ে দুশো করে দিয়েছে৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক দলকে দুশো টাকা বা তার বেশি অর্থ দিতে হলে চেকে অথবা অনলাইন ব্যবস্থায় দিতে হবে৷

তারপরও মোদী সরকার দাবি করে, রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে নগদ লেনদেন আটকাতে তারা বন্ড চালু করতে চায়৷ ২০১৮ সালে মোদী সরকার ইলেক্টোরাল বন্ড ব্যবস্থা চালু করে৷ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলা হলেও সরকার পক্ষ নানাভাবে নয়া ব্যবস্থাকে বৈধ বলে দাবি করে৷ আর এবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে জানিয়ে দিয়েছে, মোদি জমানায় চালু হওয়া ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক৷ দ্রুত সেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷

এদিন মামলাকারীদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং কপিল সিব্বাল৷ সলিসিটর জেনারাল, গোপনীয়তার অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে ইলেক্টোরাল বন্ড বজায় রাখার পক্ষে সওয়াল করেন৷ কিন্ত্ত সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়, এখনই ব্যাঙ্কগুলিকে ইলেক্টোরাল বন্ড ইসু্য করা বন্ধ করতে হবে৷ শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া যা যা ইলেক্টোরাল বন্ড ইসু্য করেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে৷ নির্বাচন কমিশনের কাছে ওই তথ্য তুলে দেবে স্টেট ব্যাঙ্ক৷ নির্বাচন কমিশন আবার সেই তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে৷ অর্থাৎ কোন কর্পোরেট সংস্থা ইলেক্টোরাল বন্ডের আড়ালে কোন রাজনৈতিক দলকে, কত চাঁদা দিয়েছে সবটাই এবার প্রকাশ্যে চলে আসবে৷