• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মহুয়াদের প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন

জবাবে মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, 'না। আমরা কমিশনের কাজকে চ্যালেঞ্জ করছি। কমিশন নিজের ইচ্ছা মতো এটা করছে, যা নিয়মে কোথাও বলা নেই।'

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সামনেই বিহার বিধানসভার ভোট। আর সেই ভোটমুখী বিহারে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেইসব মামলার একসঙ্গে শুনানি হয়। বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে সেই শুনানির সময় মামলাকারীরা প্রশ্ন তোলেন, ভোটাধিকার থেকে কোনও এক জন ব্যক্তিকেও বঞ্চিত করা যায় কি না? পাশাপাশি এইসব মামলায় কমিশনের কাজের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। তাঁদের ক্ষেত্রে গ্রাহ্য মোট ১১টি নথির কথা জানিয়েছে কমিশন। তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও এই নথি দিতে হবে। এ ছাড়া, ১৯৮৭ থেকে ২০০৪-এর মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনও এক জনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪-এর পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে।

Advertisement

এদিন শুনানির শুরুতেই প্রথমেই মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, ১৯৫০ সালের আইন ও ভোটার অন্তর্ভুক্ত আইনের অধীনে ভোটার তালিকায় দুই ধরনের সংশোধনের কথা বলা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল নিবিড় সমীক্ষা, আর অন্যটি সংক্ষিপ্ত সমীক্ষা। ওই আইনজীবী বলেন, ‘ইনটেনসিভ রিভিশন বা নিবিড় সংশোধন একটি ‘ডি নোভো’ অর্থাৎ নতুন করে অনুশীলন। বিহারের ৭.৯ কোটি মানুষকে এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে। স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন আইন বা নিয়মে কোথাও উল্লেখ নেই। এটি ভারতের ইতিহাসে প্রথম বার করা হচ্ছে।’

Advertisement

মামলাকারীদের আইনজীবী আরও জানান, ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, শুধুমাত্র ১১টি নথি গ্রহণ করা হবে। বলা হয়েছে, ভোটার আইডি নেওয়া হবে না। বাবা-মায়ের নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আদালতে তাঁর অভিযোগ, ২০০৩ সালের আগের ভোটার নথি নেওয়া হচ্ছে। ২০০৩ সালের পরে পাঁচটি লোকসভা ভোট হয়েছে। সেখানে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, এখন তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

যদিও জবাবে কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, আইন মেনেই যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। কাউকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে না তারা।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে কমিশন। বিহারের ভোটারদের মধ্যে নির্দিষ্ট ফর্ম বিলি করা হয়েছে। তা পূরণ করে নথি-সহ জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরে। নথি হিসাবে দেখাতে হবে নিজের এবং বাবা-মায়ের জন্মের শংসাপত্র। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এ ক্ষেত্রে বিবেচিত হবে না। এতেই আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ, এর ফলে তিন কোটি মানুষ ভোটাধিকার হারাতে পারেন। মামলাকারীদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যাঁরা এত দিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন, কেন আবার তাঁদের নথি দিয়ে ভোটাধিকার প্রমাণ করতে হবে।

মামলার শুনানির সময় আদালতে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, ভোটার তালিকা সংশোধনে আধার ও ভোটার কার্ড বাদ দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘একজন যোগ্য ভোটারকেও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা সমান সুযোগের নীতিকে ব্যাহত করে, গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানে। সরাসরি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর প্রভাব ফেলে।’

এ বিষয়ে বিচারপতি ধুলিয়ার প্রশ্ন, এই প্রক্রিয়া কি কমিশন নিজের ইচ্ছায় করতে পারে? মামলাকারীদের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘কমিশনের ক্ষমতাকে কি আপনারা চ্যালেঞ্জ করছেন?’

বিচারপতির এই প্রশ্নের জবাবে মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, ‘না। আমরা কমিশনের কাজকে চ্যালেঞ্জ করছি। কমিশন নিজের ইচ্ছা মতো এটা করছে, যা নিয়মে কোথাও বলা নেই।’ মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, প্রয়োজনে ভোটারদের আধার কার্ডের নম্বর দিতে বলা হচ্ছে।

এরপরই বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি আইনের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তো মনে করলে কমিশন বিশেষ রিভিশন করতে পারে।’ বিচারপতি বাগচী আরও বলেন, ‘আপনি বলতে চাইছেন যে আধার একটি বৈধ পরিচয়পত্র। এটি প্রমাণপত্র হিসেবে বাতিল করা হলে আইনের পরিপন্থী হবে?’

তখন মামলাকারীদের আইনজীবী বলেন, ‘বলতে চাইছি ভোটার তালিকায় না-থাকা কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রমাণ আধার কার্ড হতে পারে। কিন্তু যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁদের জন্য আধার কার্ড পরিচয় যাচাইয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করুক।’

Advertisement