• facebook
  • twitter
Tuesday, 19 August, 2025

বিদ্যুতের শক দিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ, রসায়নের অধ্যাপিকার জবাবে আদালত স্তম্ভিত

মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও বিচারপতি দেবনারায়ণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি চলছিল। আসামি বছর ষাটের মমতা পাঠক।

ফাইল চিত্র

মধ্যপ্রদেশে এক রসায়নের অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে বিদ্যুতের শক দিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ। সেই মামলার শুনানির সময় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করতে তিনি যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ব্যাখ্যা দেন, তাতে তাজ্জব বনে যান বিচারপতি থেকে শুরু করে আইনজীবী ও অন্যান্যরা।

জানা গিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল ও বিচারপতি দেবনারায়ণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি চলছিল। আসামি বছর ষাটের মমতা পাঠক। তিনি রসায়নের একজন ক্ষুরধার অধ্যাপক। ২০২১ সালে অভিযুক্ত মমতা পাঠকের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী নীরজ পাঠককে বিদ্যুতের শক দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই মামলাটির শুনানির সময় মমতা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সাপেক্ষে তাঁর রসায়নের জ্ঞানের ভান্ডার তুলে ধরেন। আদালতকে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে, সেটিকে বিদ্যুতের শক দিয়ে খুন বলা যাবে না। একটি টিস্যুর মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ গেলে কী হয়, সে বিষয়ে একটি জটিল ব্যাখ্যা দিয়েছেন অভিযুক্ত। সেখানে তিনি জমে থাকা ধাতব কণার পরিমাণ, ল্যাব পরীক্ষায় অ্যাসিডভিত্তিক পৃথকীকরণের খুঁটিনাটি ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, এগুলি কেবল পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের পরে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। অধ্যাপকের সেই ব্যাখ্যা শুনে গোটা আদালত স্তম্ভিত হয়ে যায়।

এর পরই অভিযুক্ত মমতা পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দাবি করেন, কেন এই মৃত্যুকে ‘ইলেকট্রিক বার্ন’ বলা যাবে না। রসায়নের ভাষায় ব্যাখ্যা করে সেটি বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। আর তাঁর এই ব্যাখ্যা শুনে বিচারপতিও স্তম্ভিত হয়ে যান। পাল্টা তিনি বলেন, ‘‘আপনি রসায়নের অধ্যাপক, তাই না?’’ এ কথা শুনে অভিযুক্তের উত্তর, ‘হ্যাঁ, হুজুর।’

এদিন শুনানির সময় বিচারপতি মমতাকে প্রশ্ন করেন, স্বামীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে। বিদ্যুতের শক দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অন্তত সেটাই বলছে। এ বিষয়ে কিছু বলার আছে আপনার?

জবাবে অভিযুক্ত মমতা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ভুল অভিযোগ তোলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও ভুল রয়েছে। কোনটা ‘থার্মাল বার্ন’ আর কোনটা ‘ইলেকট্রিক বার্ন’, ময়নাতদন্তের ঘরে তা আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়নি। সেখানে সেটা চিহ্নিত করা সম্ভবও নয়।

এরপরই বিচারপতি পাল্টা প্রশ্নে করেন, কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তো তা-ই বলছে! জবাবে প্রয়াত নীরজ পাঠকের স্ত্রী অভিযুক্ত মমতা বলেন, ওটা বিদ্যুতের শকে মৃত্যু নয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ, এটি চিহ্নিত করতে গেলে ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, মমতা মধ্যপ্রদেশের ছতরপুরের বাসিন্দা। ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে স্বামী নীরজ পাঠককে প্রথমে কড়া ডোজ়ের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে এবং বিদ্যুতের শক দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের পরই মমতা ছেলেকে নিয়ে ঝাঁসিতে পালিয়ে যান। মমতা পুলিশি তদন্তে দাবি করেন, ১ মে ঝাঁসি থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তার পরই পুলিশের হাতে একটি ভয়েস রেকর্ডিং আসে, সেখানে নীরজ দাবি করেন, স্ত্রী মমতা তাঁর উপর অত্যাচার করেন। আরও কিছু তথ্য পুলিশের হাতে আসে, যেগুলি মমতার বিরুদ্ধেই গিয়েছে। নিম্ন আদালত মমতাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে যান মমতা। গত বছর জামিনও পেয়েছেন তিনি। গত ২৯ এপ্রিল শুনানি হয়। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ রায় সংরক্ষিত রাখে। সেই শুনানিতেই মমতা ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। কেন সঠিক নয়, তা প্রমাণে রসায়নের এই অধ্যাপিকা তার সপক্ষে ব্যাখ্যা দেন।