আন্দোলন থামাতে কাঁদানে গ্যাস, সিমেন্টের ব্যারিকেড, কাঁটাতার সহ  শিপিং কন্টেনারের ব্যবস্থা পুলিশের

Written by SNS February 21, 2024 3:44 pm

চতুর্থ রাউন্ডে আক্রমনাত্মক ১৪ হাজার কৃষক রাজধানী মুখী
দিল্লি, ২১ ফেব্রুয়ারি– দিল্লির দুয়ারে কৃষকদের আন্দোলন বুধবার মারাত্মক আকার ধারণ করল৷ বুধবার দ্বিতীয় দফার আন্দোলন বেলা ১১‘টায় শুরু হয়৷ বুধবার সকাল থেকে ফের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে নেমেছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা৷ কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা  নতুন করে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছেন৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ রাউন্ডের পরে সরকার এমএসপি (নূ্যনতম সমর্থন মূল্য)-সহ সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত৷ আমি সব কৃষক নেতাদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি৷’ পাশাপাশি কৃষকদের কাছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুরোধ করছেন তিনি৷
কিন্তু মন্ত্রীর আলোচনার ডাকে রাজী নন আন্দোলনকারী কৃষকরা৷ আন্দোলনরত কৃষকদের বক্তব্য, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে তাতে তাঁদের কোনও লাভ হবে না৷ সেই মতো বুধবার থেকে আরও জোরালো বিক্ষোভে নেমেছেন কৃষকেরা৷ পাঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে জড়ো হওয়া কৃষকেরা মঙ্গলবার রাত থেকেই সেখানে বেশ কিছু পে লোডার, জেসিবি ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছেন৷ পুলিশের হিসাব হল, সেখানে পায় ১৪ হাজার কৃষক এখনই জড়ো হয়েছেন৷ সঙ্গে প্রায় বারশো ট্রাক্টর৷ বুধবার যে বড় ধরণের গণ্ডগোল বাধতে পারে এই আশঙ্কায় হরিয়ানা পুলিশের ডিজি মঙ্গলবার রাতে পাঞ্জাবের ডিজিকে চিঠি দেন৷ পাঞ্জাব পুলিশকে পড়শি রাজ্যের পুলিশ কর্তা অনুরোধ করেছেন, পে লোডার সরিয়ে দেওয়া হোক৷ এছাড়া শিশু সুরক্ষা আইনের ধারা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে থাকা নাবালকের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে৷ শিশু, নাবালকের নিয়ে আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া যাবে না৷ হরিয়ানা পুলিশ ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করেছে৷ পাশাপাশি হরিয়ানা সরকার শাম্ভু সীমান্ত লাগোয়া অন্তত ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছে৷
আন্দোলনরত কৃষকদের দুই প্রধান সংগঠনের নেতা স্বরণ সিং পন্ধের এবং জগজিৎ সিং দালেওয়াল বুধবার সকালে শাম্ভু সীমান্তে গিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের বলে এসেছেন, রাস্তা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে৷ তাঁদের বক্তব্য, কৃষকেরা জীবন দিতে প্রস্তুত৷ তাদের আটকানোর চেষ্টা হলে খারাপ কিছুর দায় পুলিশকে নিতে হবে৷
ফসলের নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন কৃষকরা৷ আন্দোলনের তেজ আরও বাডি়য়ে নিজেদের দাবিদাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে এগিয়ে চলেছেন ১৪ হাজার কৃষক৷ এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানা পার হতেই কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে৷ আন্দোলন ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ৷ ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাস৷ কৃষকদের কোনোভাবেই রাজধানীতে ঢুকতে দিতে রাজি নয় পুলিশ৷ বিক্ষোভ থামাতে নামানো হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী৷ যদিও হার মানতে রাজি নয় কৃষকেরা৷ ট্র্যাক্টরগুলিকেই ‘অস্থায়ী ট্যাঙ্ক’ হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষকদের সংগঠনগুলি৷ পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে রক্ষা পেতে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছেন কৃষকেরা৷ কাঁদানে গ্যাসের থেকে বাঁচতে বস্তা ভিজিয়ে রাখার প্রস্তুতিও নিয়েছেন তাঁরা৷
বুধবার যে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়বে তা আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল পুলিশ৷ তাই বিক্ষোভ আটকাতে পুলিশ বিভিন্ন পন্থা নিয়েছে৷ সিমেন্টের ব্যারিকেড বসানো হয়েছে৷ কাঁটাতার সহ  শিপিং কন্টেনার দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে গোটা রাস্তা৷ পেরেকের চাদর মুডে় দেওয়া হয়েছে হাইওয়ে৷ এদিকে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় কেন্দ্র৷ এর আগে বার বার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেও রফাসূত্র বার হয়নি৷ গত রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল৷ চতুর্থ দফার ওই বৈঠকে আন্দোলনকারী কৃষকদের আগামী পাঁচ বছরের জন্য শস্যের সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে কেন্দ্র একটি প্রস্তাব দেয়৷ সেই প্রস্তাবনা পড়া ও তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সময় চান কৃষকরা৷ তবে সমস্যার সমাধান না হলে এবং দাবি পূরণ না হলে এদিন ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের অভিযান শুরু হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তাঁরা৷