তিন বছরের মধ্যে ৫৪৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ভারতীয় রেল। লোকসভায় পেশ হওয়া ক্যাগ (কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল)–এর অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে একের পর এক আর্থিক অনিয়ম ও গাফিলতির চিত্র। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়কালের রেলের আর্থিক কার্যকলাপ খতিয়ে দেখে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ক্যাগ। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে মোট ২৫টি ঘটনার কথা, যেখানে রেলের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
মূলত সম্পূর্ণ রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অব্যবস্থা, অবাঞ্ছিত খরচ এবং নিয়মভঙ্গের কারণেই এই বিপুল ঘাটতি বলে জানানো হয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্ষতির ঘটনাটি ঘটেছে নর্দার্ন রেলওয়েতে। পাঁচটি সরকারপোষিত স্কুলের কাছ থেকে জমির লাইসেন্স ফি বাবদ ১৪৮.৬১ কোটি টাকা আদায় করতে পারেনি তারা। যদিও জমির বাজারমূল্যের ৬ শতাংশ হারে ফি আদায়ের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল। এটি এককভাবে রেলের সবচেয়ে বড় রাজস্ব ক্ষতির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে ক্যাগ।
Advertisement
এছাড়াও ক্যাগ রিপোর্টে উঠে এসেছে আরও ৯টি জোনাল রেলওয়ের বিরুদ্ধে অনাদায়ী রাজস্বের তথ্য। দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-মধ্য, পূর্ব উপকূল, পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য, পশ্চিম-মধ্য এবং মধ্য রেলওয়ে – এই ৯টি জোন সম্মিলিতভাবে জেলা খনিজ ফাউন্ডেশন-এর জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৫৫.৫১ কোটি টাকা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অর্থ খনি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল।
Advertisement
পূর্ব-মধ্য রেলওয়ের গাফিলতির কারণে আরও ৫০.৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে ক্যাগের রিপোর্টে। অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের অভাবে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগও উঠেছে। যেমন, দক্ষিণ রেলওয়ে ও ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি যথাযথ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া ২৮টি নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ের কোচ নির্মাণে ২৭.৯১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এছাড়াও, দক্ষিণ-মধ্য রেলওয়ের বিরুদ্ধে ২৩.১৬ কোটি টাকার অবাঞ্ছিত ব্যয়ের অভিযোগ রয়েছে। মধ্য রেলওয়ে ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডরে নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে ১৫.৬২ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে বলে জানিয়েছে ক্যাগ। এই রিপোর্ট সামনে আসার পর রেল বোর্ডের প্রশাসনিক গাফিলতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
Advertisement



