লোকসভা নির্বাচনের আগেই  সিএএ বলবৎ হবে , ঘোষণা অমিত শাহের 

Written by SNS February 10, 2024 4:01 pm

দিল্লি, ১০ ফেব্রুয়ারি – লোকসভা নির্বাচনের আগেই বলবৎ করা হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ,  জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শনিবার এক বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “২০১৯ সালে এই আইন তৈরি হয়ে গেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই আইন কার্যকর করা হবে। শীঘ্রই এই সংক্রান্ত নিয়ম জারি করা হবে।”  এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সিএএ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের মুসলিম ভাইদের সিএএ নিয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে এবং উসকানো হচ্ছে। যারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর ভারতে এসেছিলেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য সিএএ তৈরি করা হয়েছে। কারোর ভারতীয় নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য এই আইন আনা হয়নি।”

 
২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন  বা সিএএ পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওই আইনানুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে ভারত তা দিতে প্রস্তুত। সংসদের দু’কক্ষে পাশ হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতিও অনুমোদন দেন সিএএ বিলে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আইনের ধারা তৈরি হয়নি। অমিত শাহ জানান, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশে সিএএ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাসে এই আইন লাগু হবে বলে ঘোষণা করেন তিনি। 
 
অমিত শাহ বলেন, ‘ সিএএ এই দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই নিয়ে কারও মনে কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। সিএএ লাগু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস সরকারই। দেশভাগের সময় যখন লাখ লাখ উদ্বাস্তু এ দেশে এসে উঠেছিলেন, তাঁদের দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। এখন তারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভুলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করছে।’ এর আগেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, দেশে সিএএ কার্যকরী হবেই। পৃথিবীর কোনও শক্তি তাকে ঠেকাতে পারবে না।
 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে সাড়ে চার বছর ধরে বিষয়টি থমকে থাকায় হিন্দু উদ্বাস্তু সমাজের একাংশের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে সেই ক্ষোভ প্রশমনে সিএএ কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। বস্তুত, শনিবার দিল্লিতে একটি আলোচনা সভায় শাহই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সিএএ দেশের একটি আইন। তা অবশ্যই কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে কোনও সংশয় থাকাই উচিত নয়।’’
 
পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সিএএ কার্যকরের বিরোধী। কেন্দ্র পরিকল্পনা নিয়েছে, নাগরিকত্ব পাওয়ার সামগ্রিক পরিকল্পনা অনলাইনের মাধ্যমে রূপায়ণের কথা। ওই সূত্রের মতে, একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে ইচ্ছুকেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারী কোন সালে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, সেই তথ্য পোর্টালে দিতে হবে। ওই আবেদন খতিয়ে দেখে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 
কেন্দ্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর ধর্মীয় কারণে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের জন্যই এই সিএএ। ওই তিন দেশ বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা মুসলিম সহ অন্য কোনও বিদেশি শরণার্থীদের জন্য সিএএ লাগু হবে না। কেন্দ্রের দাবি, এ দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সিএএ আইনের জেরে কোনওভাবেই প্রভাবিত হবে না। ভারতীয় মুসলিমদেরও উপরও কোনও প্রভাব পড়বে না।
 
এদিকে সিএএ ইস্যুতে বরাবরই বিজেপির সমালোচনা করে এসেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আগেও বলেছেন , বিজেপির মুখে সিএএ-র কথা আসলে ভোটের রাজনীতি। অতীতে মমতা আরো বলেন, নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে আদতে বিজেপি ভাগাভাগি করার চেষ্টা করছে।  সেই করণেই তিনি এই রাজ্যে কোনোদিনই সিএএ লাগা হতে দেবেন না।  জানুয়ারি মাসের শেষে কোচবিহারের সভা থেকেও একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন মমতা।