সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনেই প্রণয়ন করা হয়েছে, হলফনামা কেন্দ্রীয় সরকারের

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনও সাংবিধানিক মূল্যবোধ লঙঘন করা হয়নি বলে সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র সরকার।

Written by SNS New Delhi | March 18, 2020 8:08 pm

এনআরসি-সিএবি'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোনও সাংবিধানিক মূল্যবোধ লঙঘন করা হয়নি বলে সুপ্রিম কোর্টে জানাল কেন্দ্র সরকার। কিন্তু নতুন সংশোধিত আইনে মুসলিম ব্যতীত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এবং পার্শি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনে আরও বলা হয়েছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত যারা ভারতে এসেছেন তাদেরই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। 

কেরলের পর রাজস্থান দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে কেন্দ্র রাজ্য বিবাদের বিষয়ে সরাসরি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করার অধিকারে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিলোপের আবেদন জানিয়েছে। সংবিধানের ১৩১ ধারায় এই মামলা দায়ের করেছে রাজস্থান। 

উত্তরে কেন্দ্র সরকারের পক্ষে ১২৯ পাতার হলফনামা সম্বলিত জবাবে জানানো হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংবিধানের কোনও মৌলিক অধিকারকেই খর্ব করেনি, বরং সকল রীতিনীতি মেনেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানিক কোনও মূল্যবোধকেও আঘাত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। 

হলফনামায় আরও জানানো হয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ‘স্বেচ্ছাচার’ বা ‘নির্দেশহীন’ ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদের হয়রানির কোনও সংস্থানই রাখা হয়নি। কেবল পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয়ভাবে অত্যাচারিত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রদফতরের ডিরেক্টর বি সি যোশি এই হলফনামা দাখিল করেছে। হলফনামায় জানানো হয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকদের কোনও মৌলিক অধিকার খর্ব করা বা ধর্মনিরপেক্ষ, আইনি বা গণতান্ত্রিক কোনও অধিকার খর্ব করার কোনও বিষয় সংযোজিত হয়নি।

রাজস্থানের কংগ্রেস পরিচালিত সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সাংবিধানিক বৈধতার প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়েছে। রাজস্থান সরকার তার আবেদনে জানিয়েছে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পরিপন্থী, যা সংবিধানের মূল ভিত্তি এবং নাগরিকদের সমানাধিকারের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। 

এর আগে সিপিআইএম পরিচালিত কেরল সরকারও সুপ্রিম কোর্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের আবেদন জানিয়েছে। কেরল বিধানসভায় প্রথম সিএএ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করা হয়। সিএএ প্রবর্তনের বিষয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের শরণার্থীদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও অমূলক বলে আবেদনে কেরল সব্বার জানিয়েছে। 

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বৈধতার প্রশ্নে আর যারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন তাদের মধ্যে আরজেডি নেতা মনোজ ঝা, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েসি প্রমুখ রয়েছে। এছাড়া জামাত উলেমা-ই-হিন্দ, অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু), পিস পার্টি, সিপিআই, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেহাই মঞ্চ, সিটিজেন্ট এগেনস্ট হেট সংস্থা এবং আইনজীবী এম এল শর্মা এবং এক আইন পড়ুয়া এই আইনের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন। 

উল্লেখ্য ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে আইনের বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আইন বলবতের বিষয়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি এস বোবড়ে এবং বিচারপতি সুর্যকান্ত ও বি আর গাভাইকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে সংশ্লিষ্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এছাড় আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায়ের আবেদন অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট আইনের সওয়াল জবাব যাতে সাধারণ মানুষ দেখতে ও শুনতে পান সেজন্য অডিও ভিডিওর মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করার আবেদনও বেঞ্চ অনুমোদন করে। এই সওয়াল জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকে সরকারি তরফে উপস্থিত থাকার দাবিও আদালতের পক্ষে স্বীকার করে কেন্দ্র সরকারকে নোটিশ জারি করা হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতবছর ১২ ডিসেম্বর সিটিজেনশিপ (সংশোধনী) বিল ২০১৯ সম্মতি জানান।