সাম্প্রদায়িক ভাইরাস ছড়িয়ে দেশের সংহতি বিনষ্ট করছে বিজেপি : সোনিয়া গান্ধি

করোনা মোকাবিলার পরিবর্তে শাসক বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাস ছড়াতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি।

Written by SNS New Delhi | April 24, 2020 6:16 pm

কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি। (File Photo: Twitter | @INCIndia)

করোনা মোকাবিলায় সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা মোকাবিলার পরিবর্তে শাসক বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার ভাইরাস ছড়াতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি ।

এদিন তিনি দলের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বৈঠকে করোনা মোকাবিলায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের উপযুক্ত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশের সকল মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ করছেন, তখন বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে সমাজের সংহতি বিনষ্ট করছে ও বিরোধীদলগুলির স্থায়ী ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এজন্য তিনি কংগ্রেস সদস্যদের আরও সচেতন হয়ে এই ক্ষতি মোকাবিলায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বিজেপির এমন সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানোয় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বহুবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দেশ থেকে করোনা সংক্রমণ দূর করার কাজে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কিন্তু এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি শহর ও গ্রামের চরম অসুবিধায় পড়া মানুষের জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে।

তিনি অভিযোগ করেন বিজেপি সারা দেশে করোনা মোকাবিলার পরিবর্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি সম্প্রদায়কেই দায়ী করছে। এতে দেশের মানুষের মনে যে পারস্পরিক ঘৃণার সৃষ্টি হচ্ছে তা সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করতে যথেষ্ট।

এছাড়া, বিরোধীদলগুলির কোনও পরামর্শই পালন করার ক্ষেত্রে শাসক দলের সরকার কোনও উৎসাহ না দেখানোয় মানুষ হতাশ। দেশের এমন বিপদের সময়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই-ই দেশকে বিপদ মুক্ত করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, লকডাউন চলতে থাকায় কৃষক ও আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা দারুণ দুর্দশার মুখে পড়েছেন। বিশেষত, কৃষক, ক্ষেতমজুর, নির্মাণশ্রমিক ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের অবস্থা চরম দুর্দশাগ্রস্ত।

সোনিয়া গান্ধি বলেন, লেনদেন, শিল্পে উৎপাদন, বাণিজ্যিক কাজকর্ম সবই বন্ধ রয়েছে। এর ফলে অসংগঠিত শ্রমিকদের জীবনজীবিকাই শেষ হতে বসেছে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ৩ মে’র পর সরকার অবস্থা মোকাবিলায় কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তার কোনও রূপরেখাই নেই বলে তিনি কটাক্ষ করেছেন। লকডাউনের পর অবস্থা তো আরও ভয়াবহ আকার নেবে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পরীক্ষার বিষয়ে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই। পরীক্ষার কিট এখনও তেমনভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও তা ত্রুটিপূর্ণ। এব্যাপারে সরকারে উদাসীন মনোভাবই প্রকাশ পাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অন্য অর্থে সরকার বিষয়টির গুরুত্বই বুঝতে পারছে না। সরকার খাদ্যশস্য বন্টনের কথা ঘোষণা করছে। অথচ তা যাদের পাওয়া উচিত তাদের কাছে পৌঁছচ্ছে না।

১১ কোটি মানুষ এখনও সরকারি বন্টন ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। এমন চরম বিপদের সময় প্রতিটি পরিবারের জন্য দশ কেজি চাল, এক কেজি ডাল ও এক কেজি চিনি প্রতি মাসে দেওয়ার অঙ্গীকার করতে হবে সরকারকে এবং তা যাতে সময় মতে পৌছে দেওয়া যায় তার দায়িত্ব নিতে হবে।

সোনিয়া গান্ধি জানান, লকডাউনের প্রথম পর্যায়েই ১২ কোটি মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন। এজন্য প্রতিটি পরিবারকে ৭৫০০ টাকা করে দিতে হবে। করোনা মোকাবিলার মাঝেই রাজ্যগুলির প্রাপ্য টাকা কেন্দ্র বরাদ্দ করা স্থগিত রাখার ফলে বিষয়টি জটিল হয়ে পড়ছে। এরই মাঝে তিনি দেশের প্রতিটি নাগরিক ও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা ছাড়াই যেভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজ হচ্ছে তার প্রশংসা করেছেন।

সোনিয়া গান্ধি’র সমালোচনার উত্তরে বিজেপির পক্ষে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় দেশ যখন ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছে তখন কংগ্রেসের এমন সস্তার রাজনীতি না করাই ভাল।

তিনি বলেন, বিজেপি কোনও সাম্প্রদায়িক বিভেদে বিশ্বাস করে না এবং কোনও বিভেদের রাজনীতি করছে না। আর বিজেপির বিরুদ্ধে সামাজিক সংহতির ক্ষতিকর প্রচার চালানো হচ্ছে বলে কংগ্রেসের পক্ষে যে প্রচার করা হচ্ছে তা ঠিক নয়।