রাঁচি, ৫ ফেব্রুয়ারি – রাজভবনের চক্রান্তেই গ্রেফতার হয়েছেন বলে সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন হেমন্ত সোরেন। সোমবার ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চম্পাই সোরেনের শক্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে উপস্থিত ছিলেন হেমন্ত সোরেন। সেখানেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন হেমন্ত। ইডি হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও এদিন ঝাড়খণ্ডের আস্থাভোটে হাজির থাকার অনুমতি পান রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের বক্তব্যে হেমন্ত এক দিনে যেমন ইডি এবং বিজেপিকে তোপ দেগেছেন, তেমনই আদিবাসী অস্ত্রেও শান দিতে চেয়েছেন।
হেমন্ত বলেন, “৩১ জানুয়ারি রাতে দেশে প্রথম বার এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হল। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি রাজভবন এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।” সরাসরি নাম না করলেও মনে করা হচ্ছে, তাঁর গ্রেফতারির জন্য রাজ্যপালকেই দায়ী করেছেন হেমন্ত। বিজেপিকে তোপ দেখে তিনি বলেন, “যদি তাদের সাহস থাকে, তবে যে জমিতে আমার নাম নথিভুক্ত হয়েছে, তার নথি দেখাক। যদি প্রমাণিত হয়, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।”
এদিন আদিবাসী ইস্যুতেও জোর দেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসীদের উপর কোনও অত্যাচার এবং অপমান তিনি সহ্য করবেন না বলেও জানিয়ে দেন হেমন্ত। তাঁর কথায়, “এরা ভাবছে আমাকে জেলে পুরে উদ্দেশ্য সফল হবে। এটা ঝাড়খণ্ড। দেশের এমন এক রাজ্য যার প্রতিটি কোণে আদিবাসী দলিতরা আছেন। রক্তের বিনিময়ে তাঁরা লড়ছেন। আদিবাসীদের শক্তি এত কম নয়। তিনি না কেঁদে কান্না জমিয়ে রাখছেন বলেও দাবি করেছেন হেমন্ত। তিনি বলেন, “এদের কাছে আদিবাসীদের চোখের জলের কোনও দাম নেই।” রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান, লোকসভা ভোটের আগে নিজের আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক অক্ষত রাখতেই এই বার্তা দেন হেমন্ত।
জমি জালিয়াতি মামলায় হেমন্ত সোরেনকে গ্রেফতার করেছে ইডি। বুধবার, ৩১ জানুয়ারি দুপুর থেকে প্রায় সাত ঘণ্টা তাঁর রাঁচির বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। রাতে গ্রেফতার হন হেমন্ত সোরেন। তার আগেই রাজভবনে গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন । গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন হেমন্ত। শীর্ষ আদালত মামলাটি হাই কোর্টে ফেরত পাঠায়। এরপর ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। সেই মামলায় ইডির কাছে জবাব চাইল উচ্চ আদালত। আগামী চার দিনের মধ্যে লিখিত আকারে জবাব দিতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। কেন হেমন্তকে গ্রেফতার করা হল, ইডির কাছে সেই জবাব চেয়েছে আদালত। ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইডি সেই রিপোর্ট দেবে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি।
সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেনের আস্থা ভোট বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন হেমন্ত। গত ৩১ জানুয়ারি হেমন্তকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা। এর আগে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় গ্রেফতারের নজির নেই। গ্রেফতার করে তাঁকে রাজভবনে নিয়ে যায় ইডি। সেখানে তিনি পদত্যাগ করেন। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন চম্পাই সোরেন। তাঁর আস্থা ভোটে হেমন্তকে যোগদানের অনুমতি দেয় আদালত। কড়া প্রহরায় তাঁকে জেল থেকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানেই আস্থা ভোটের বিতর্কে রাজ্যপাল রাধাকৃষ্ণানকে উদ্দেশ্য করে তোপ দাগেন হেমন্ত। বলেন, ‘বিজেপিকে সরকার গড়ার সুযোগ করে দিতে ইডিকে চাপ দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করানো হয়েছে।’ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কার্যকরী সভাপতি হেমন্ত এদিন বিধানসভায় ইডিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে রাজনীতি তো বটেই, ঝাড়খণ্ড ছেড়ে চলে যাব।
রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণান তামিলনাড়ুর।তিনি তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি ছিলেন। দুবার কোয়েম্বাটোর থেকে লোকসভার সদস্য হন। গত বছর তাঁকে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল করে পাঠায় কেন্দ্রীয় সরকার। আগের রাজ্যপাল বিডি ব্যাসের সঙ্গেও হেমন্তের সম্পর্ক ভাল ছিল না। ব্যাসের নির্দেশেই ইডি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জমি কেনাতে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
রাজ্যপাল সম্পর্কে কোনও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগ নজিরবিহীন। রাজ্যপালকে নিয়ে হেমন্তের অভিযোগ সম্পর্কে রাজভবন এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। রাজ্যপালের তরফেও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। দেশের রাজনীতির ইতিহাসে কোনও রাজনীতিক হেফাজতে থাকাকালীন আইনসভায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখেছেন এমন কোন নজির আগে কখনো ছিল কিনা তা মনে করতে পারেননি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।