বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজিয়ে দিলেন বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । এদিন তিনি অনলাইনে শুরু করে দেন বিজেপি’র হয়ে প্রচার। প্রচারে তিনি মূলত ছয় বছরের মোদি সরকারের সাফল্যগুলিকেই তুলে ধরেছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে অযোধ্যায় রামমন্দির।
তিনি করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে জনসভায় ভাষণ দেওয়ার প্রতিবন্ধকতাকেও স্মরণ করিয়ে দেন। তবে প্রকৃতপক্ষে প্রকাশ্য জনসভার কোনও প্রয়োজন হবে না বলেই তিনি মন্তব্য করেন। সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি নাগরিকের অসম সাহসিক লড়াইয়ের কথা। যারা এর মধ্যেও রাজনীতি খুঁজে বের করতে চান তাদের তিনি স্মরণ করিয়ে দিতে চান, তারা কেন কোনও বিক্ষোভ মিছিল করছেন না।
Advertisement
সকলেই এখন দিল্লিতে ঠাণ্ডায় বসে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি নাম না করে কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারের হতে চলা নির্বাচনে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের নেতৃত্বেই বিজেপি লড়াই করবে। বিহারের মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে তাদের ভোট দিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে বসার পথ প্রশস্ত করে দেন। এবারও নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করতে বিহারের মানুষ পিছপা হবেন না বলেই তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
এদিনের বার্তায় অমিত শাহ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েই অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন। বিরোধীরা পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও নীতিশ সরকারের বিরুদ্ধে সরব। বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকেই অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিক অন্যত্র কাজ করতে গিয়েছিলেন। বিহারের নেতারা মানুষকে বোকা বানাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি বিহারে সচেতন মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে কোনও বিতর্কে জড়িয়ে না পড়তে অনুরোধ করব। মনে রাখবেন সারা দেশ আপনাদের কাজের প্রশংসা করে থাকেন। আপনারাই দেশের উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। তাই তার যা সুফল দেশের মানুষ পাবে সঙ্গে আপনাদের অবদানকেও স্মরণ করবে।
অমিত শাহ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সরকারি উদ্যোগের বিষয়ে জানান, সোয়া কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে ঘরে ফেরানোর সকল চেষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মানুষকে হেঁটে ঘরে ফিরতে দেখে কেন্দ্রীয় সরকার বাসের ব্যবস্থা করে তাদের নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছে এবং ট্রেন চালিয়ে তাদের রাজ্যে ফেরত পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খাবার, ওষুধ, বাস প্রভৃতি দিয়ে সাহায্য করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আগেই সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ক্যাম্পে রাখার নির্দেশ দেন। ক্যাম্পে রাজ্যগুলিকে খাবার দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এরপর তিনি ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নেন। এমনকী ট্রেনের ভাড়ার ৮৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার বহন করার কথা ঘোষণা করে।
কিন্তু এত করা সত্ত্বেও বিরোধীরা পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার কথাই তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে তাদের দুর্দশা নিরসনে সাহায্য না করেই। কারণ রাতারাতি কাজ হারিয়ে, আশ্রয় হারিয়ে এবং খাবার না পেয়ে তারা ঘরে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে নিজরাজ্যে যাওয়ার জন্য পথে নামে, দূরত্বের বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করেই। তারা হাজার মাইল পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে ঘরে ফেরার জন্য। পথেই বহু শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন অনারাহে, পানীয় জল না পেয়ে এবং পথশ্রমে।
২৫ মার্চ প্রথম একুশ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় সরকার ১ মে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য প্রথম ট্রেন চালু করে। বিহারে বিজেপির শরিক রামবিলাস পাশোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি মনে করেন বিহারের ‘সুশাসন বাবু’ হিসেবে খ্যাত বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নিরসনে ব্যর্থতার করণেই।
বিভিন্ন প্রকল্পে ৮,৫০০ কোটি টাকা খরচ করার পরও মার্চ মাসে শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালানোয় নিষেধ করা ও শ্রমিকদের জন্য সরকারি তরফে ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্তে সেখানকার সাধারণ মানুষের মনে নীতিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ জমা হয়েছে বলে মনে করে লোক জনশক্তি পার্টি।
Advertisement



