কলকাতা, ৪ ফেব্রুয়ারি – অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদবানি , বিজেপির দুই মহীরুহ নেতাকেই ভারত রত্ন সম্মানে ভূষিত করেছে নরেন্দ্র মেদি সরকার। অটল বিহারী বাজপেয়ী ভারত রত্ন পান ২০১৫ সালে । আর ৯৬ বছর বয়সে আদবানিকে ভারত রত্ন দিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন নরেন্দ্র মোদি । শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর রাজনৈতিক গুরু লালকৃষ্ণ আদবানিকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের কয়েকদিন আগে প্রয়াত সমাজবাদী নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কর্পূরি ঠাকুরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন ঘোষণা করেছে মোদি সরকার।  রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা , এরপর কী ভারত রত্ন হবেন মোদি ?

১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্মের অন্যতম রূপকার এল কে আদবানি। জনতা দল ছেড়ে সঙ্গীদের নিয়ে বিজেপির জন্ম দেন। তাঁর রামরথ যাত্রায় ভর করেই  হিন্দি বলয়ে উত্থান হয় বিজেপির। দেশে প্রথম রামরথ ছুটিয়ে ছিলেন আদবানিই। সেই বহুযুদ্ধের নায়ককে এবার ভারতের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করা হল। যে দুই প্রধান নেতার হাত ধরে আগের জনসংঘ বিজেপি নামে নতুন দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল সেই অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদবানি, দু’জনেই এখন দেশের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপক।

লক্ষ্যনীয় যে, যে তিনটি লক্ষ্যপূরণের কথা বলে বিজেপি যাত্রা শুরু করে, অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল এবং অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি  পূরণ করতে পারেননি। আর সেই তিন ঘোষণাই কম-বেশি পূরণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এ মাসের ২২ তারিখ তিনি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। ২০১৯-এর ৫ অগাস্ট মোদি সরকার ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে দিয়েছে।  ২০১৮-র ১ অগাস্ট চালু হয়েছে তিন তালাক বিরোধী আইন, যা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আংশিক প্রয়োগ বলা চলে। মোদি সরকার ফের ক্ষমতায় এলে বাকি সব ক্ষেত্রেই অভিন্ন বিধি বলবৎ হতে পারে দেশে। সম্মান দিয়ে নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন নরেন্দ্র মোদি।

ভারতে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’-র পেয়েছেন ৪৫ জন। প্রাপকদের মধ্যে ৬ জন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২ জন জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই সম্মান গ্রহণ করেন। এক অর্থে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ‘ভারতরত্ন’ ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া, মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মান পান লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, মোরারজি দেশাই এবং রাজীব গান্ধি। ভারতরত্ন প্রাপকের তালিকায় আছেন প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ীও। তিনি জীবিত থাকাকালীন তাঁকে ওই সম্মান দেয় মোদি সরকার। বাজপেয়ী ছিলেন বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির ভিতরে-বাইরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে, নরেন্দ্র মোদিও কি নেহরু, ইন্দিরাদের পথে হাঁটবেন  নিজেকে ‘ভারতরত্ন’ ঘোষণা করবেন? অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪-এ ফের প্রধানমন্ত্রী হলে মোদি সেই পথে হাঁটতে পারেন। বিশেষ করে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফলাফলকে ছাপিয়ে গেলে সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে। রাষ্ট্রপতির এক বাক্যের সুপারিশই এজন্য যথেষ্ট। আর এক্ষেত্রে দেশের যে কোনও নাগরিক রাষ্ট্রপতি কিংবা সরকারের কাছে নাম সুপারিশ করতে পারেন। যেমন অটল বিহারী বাজপেয়ীকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ার দাবি জানিয়ে ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছিলেন আদবানি, শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যাঁকে ‘ভারতরত্ন’ ঘোষণা করেছেন।