জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বৃহস্পতিবার ফের জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই চলে ভারতীয় সেনার। জানা গিয়েছে, পুলওয়ামায় নিরাপত্তা বাহিনী এবং সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় তিন জইশ-ই-মহম্মদ সংগঠনের সন্ত্রাসবাদী বাহিনীর ফাঁদে পা দিলে তিন জঙ্গিকেই নিকেশ করে ভারতীয় সেনা। তাদের নাম আসিফ আহমেদ শেখ-বয়স ২৮, আমির নাজির ওয়ানি-বয়স ২০ এবং ইয়াওয়ার আহমদ ভাট। এরা প্রত্যেকেই পুলওয়ামার বাসিন্দা ছিল বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে জঙ্গিদের অবস্থান জানার পর জোরকদমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনা। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় গুলির লড়াই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এঁটে উঠতে পারেনি জঙ্গিরা।সেনার গুলিতে তিন জঙ্গি নিহত হয়। পুলওয়ামার ত্রালে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন নাদের’।
সেনাসূত্রে খবর, জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত আসিফ অবন্তীপোরার জেলা কমান্ডার ছিল। ২০২২ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল আসিফ। আমির এবং ইয়াওয়ার ২০২৪ সাল থেকে পুলওয়ামায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।ইয়াওয়ার গত বছর থেকে পুলওয়ামায় সক্রিয় ছিল।
এই বিষয়ে একজন পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, দক্ষিণ কাশ্মীর জেলার অবন্তীপোরার নাদের এবং ত্রাল এলাকা এদিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল। এই এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের উপস্থিতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালায় এবং ঘেরাও করে ফেলে। জইশ জঙ্গিদের হদিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ততপর হয়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সেনা। এদিকে এদিন সংঘর্ষ চলাকালীন ভারতীয় সেনার ড্রোনে ধরা পড়ে জঙ্গিদের আত্মগোপনের চেষ্টার ছবি। কালো রঙের পোশাকে মাথা ঢেকে নির্মীয়মাণ একটি বাড়িতে লুকোনোর চেষ্টা করছিল এক জঙ্গি। তার হাতে তাক করা ছিল স্বয়ংক্রিয় বন্দুক। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ত্রালে যে তিন জইশ জঙ্গির বিরুদ্ধে সেনার অভিযান, তাদেরই এক জনের ছবি ধরা পড়েছে সেনার ড্রোনে।
ত্রালে তিন জঙ্গি আশ্রয় নিয়েছে, গোপন সূত্রে এই খবর পেয়েই অভিযানে নামে সেনা। জঙ্গিরা সেনাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও। ৩ জন জঙ্গিকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। পালানোর উপায় না দেখে কাছেই একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির বেসমেন্টে আশ্রয় নেয় ৩ জঙ্গি। বাড়ির ভিতরে ঠিক কোথায় রয়েছে জঙ্গিরা রয়েছে তার নজরদারির জন্য ড্রোন আনা হয়। সেখানেই ছবিতে ধরা পড়েছে এক জঙ্গি হাতে বন্দুক নিয়ে একটি থামের আড়ালে লুকিয়ে গুলি চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর জঙ্গি নির্মূল করতে ‘অপারেশন কেল্লার’ অভিযান শুরু করা হয়। গত মঙ্গলবার সেই অভিযানেই সোপিয়ানে নিকেশ করা হয়েছিল ৩ লস্কর জঙ্গিকে। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এবার নিকেশ হল ৩ জইশ জঙ্গি এমনই খবর মিলেছে। জঙ্গি এবং সেনাবাহিনীর গুলির লড়াই এখনও চলছে।
পহেলগামের সন্ত্রাসবাদীদের হত্যালীলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান করেছে ভারত। পাক সেনা পাল্টা হামলা চালানোয় পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায়। তবে গত শনিবারই দুই দেশের তরফে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা কমেনি। পহেলগামের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের খোঁজে অভিযান আরও তীব্র করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ লেগে রয়েছে। পুলিশ আধিকারিকদের মতে, সন্ত্রাসবাদীদের উপস্থিতি সম্পর্কে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভোরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সিআরপিএফ-এর যৌথ দল নাদের এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে। এরপরই শুরু হয় জঙ্গি ও নিরাপত্তাবাহিনীর গুলির লড়াই।
ভারতীয় সেনার এই অভিযানে কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবারই সোপিয়ান থেকে রাইফেল, গ্রেনেড, বেশ কয়েকটি বন্দুক এবং কয়েকটি ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। জঙ্গিদের ব্যবহার করা টাকার ব্যাগও উদ্ধার করেছে সেনা। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, পহেলগামের ঘটনার পরে লস্করের এবং জইশের ১৪ জঙ্গি জম্মু-কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬ জঙ্গি নিকেশ করা হয়েছে।