বিহারের রাজনৈতিক দলগুলির দাবি খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিল, আধার কার্ডই নাগরিকত্বের একমাত্র প্রামাণ্য নথি হতে পারে না। আইন অনুযায়ী আধারের মর্যাদা নির্ধারিত, তা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য অনেকগুলি নথির মধ্যে আধারও একটি নথি হতে পারে, তবে সেটি একমাত্র প্রামাণ্য নথি নয়।
সম্প্রতি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, তালিকায় নাম তোলার জন্য অন্য নথির সঙ্গে আধার কার্ডও একটি প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য হতে পারে। এবার সেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিল আদালত।
Advertisement
প্রসঙ্গত, আধার আইনের ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আধার নম্বর বা অথেনটিকেশন, নাগরিকত্ব বা বাসস্থানের প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য হবে না। আবার ২০১৮ সালে এ বিষয়ে একটি মামলা হয়। সেই সময় পুত্তস্বামী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছিল, আধার নম্বর দিয়ে কারও নাগরিকত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
Advertisement
এদিকে বিহারের বিরোধী দলগুলির আইনজীবীরা এসআইআর সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় বার বার সওয়াল করেছেন যে, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য একমাত্র আধারকেই প্রমাণ হিসেবে ধরা হোক। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘আধারে এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন? নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ আধার— আমরা কখনওই সেই নির্দেশ দেব না।’
সম্প্রতি শীর্ষ আদালত বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ যাওয়া নিয়ে মামলা শুনছে। এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোটাররা সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানাতে পারবেন। কিন্তু এই অভিযোগ জানানোর সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য বিহারের বিরোধী দলগুলি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। সেখানে আরজেডি’র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সওয়াল করেন, বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আধারকে একমাত্র প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘আধার আইনে আধারকে যে নির্ধারিত মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। পুত্তস্বামী মামলার নির্দেশে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আধার নিয়ে যে কথা বলেছে, তার অন্যথাও করতে পারব না।’
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করা হয়েছে, বহু বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা এ দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। কিছু রাজ্যে তাঁরা আধার কার্ডও করিয়েছেন। আবার এদিন শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছেন আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী। তিনি সওয়াল করেন, বিহারের কিছু জেলায় আধারের সম্পৃক্তি পৌঁছেছে ১৪০ শতাংশে। সেজন্য ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আধারকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শীর্ষ আদালত রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীদের সক্রিয় হতে বলেছে। বিহারে খসড়া তালিকা থেকে যে ভোটারদের নাম ভুল ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা তাঁদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে।
Advertisement



