দিল্লির নিজামুদ্দিনের জমায়েতের ৪৪১ জনের শরীরে করোনা উপসর্গ

সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ধর্মীয় জমায়েত করা এবং কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করায় মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে।

Written by SNS New Delhi | April 1, 2020 6:35 pm

নিজামুদ্দিনের জমায়েতে অংশ নেওয়া মানুষদের স্বাস্থপরীক্ষা চলছে। (Photo: AFP)

মঙ্গলবার দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় চব্বিশজনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ধর্মীয় জমায়েত করা এবং কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করায় মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে।

ইতিমধ্যেই ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া তেলেঙ্গানার ৬ জন, কর্নাটকের ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দেওয়া তথ্য। তিনি জানিয়েছে, ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া ৪৪১ জনের শরীরে ইতিমধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে করোনার উপসর্গ।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নির্দেশ অমান্য করে এধরনের সমাবেশ চুড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। সারা পৃথিবীতে মানুষ মরছে। সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এখানে আরও অনেক দায়িত্ব দেখানো উচিত ছিল।’

ইতিমধ্যে ৪০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন জায়গায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হল ওই সমাবেশে যোগ দেওয়া ৮৫ জনের এখনও খোঁজ মেলেনি। তবে তারা দিল্লিতে লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে তেলেঙ্গানা সরকার একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে যারা ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিল তাদের চিহ্নিত করার জন্য। চিহ্নিত ব্যক্তিদের হাসপাতালের আইসোলেশন রুমে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কারও করোনা ধরা পড়লে সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে বলে তেলেঙ্গানা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সকারের উদ্যোগে ছয় লাখের বেশি পরিযায়ী শ্রমিকদের ৬১ হাজার ত্রাণ শিবিরে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষে যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল জানিয়েছেন।

এদিন সকালের দিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে যে সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য, অন্যান্য সুবিধা এবং চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশ আসার আগেই বিভিন্ন স্থানে জটলা করে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করে। এরা বাড়ি ফেরার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকাতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ত্রাণ শিবিরগুলির দায়িত্ব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের খবরদারির পরিবর্তে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের দুই পরিযায়ী শ্রমিকের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাসে সংক্রমণ দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাতেই বেশি হচ্ছে বলে সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।

কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমের কথা সরকারের পক্ষে অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও সরকার অত্যন্ত কড়া নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলে জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভাইরাসে সংক্রমণের চেয়ে আতঙ্ক ও আশঙ্কাতেই পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। অবিলম্বে এদের চিকিৎসার আওতায় এনে মানসিক সুস্থিতি বজায় করার ব্যবস্থা জরুরি।

সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে সোশ্যাল সংবাদ মাধ্যমে নতুন পোর্টাল সৃষ্টির মাধ্যমে গুজবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় তার ব্যবস্থা করতে হবে সঠিক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে। এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবড়ে সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ সম্পর্কিত মামলার শুনানি গ্রহণ করেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে জানানো হয় ২২ লাখ মানুষকে খাদ্যের যোগান দিচ্ছে সরকার। এদের মধ্যে দরিদ্র মানুষ, ভবঘুরে এবং পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন বলে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।

মহারাষ্ট্র সরকারকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করার নির্দেষ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরিকালীন ভিত্তিতে লকডাউন জারি করাই ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একমাত্র উপায় বলে জানান সলিসিটর জেনারেল।

সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে দিল্লি হাইকোর্টে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে মামলার নথিভুক্তির বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি খারিজ করে দেওয়া হয়। নির্দেশে বলা হয় দিল্লি হাইকোর্ট আরও কাছ থেকে বিষয়টির নজরদারি করার নির্দেশ দিতে সক্ষম।

এদিকে দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজের পক্ষে জানানো হয়, কর্তৃপক্ষ কখনই সরকারি নির্দেশ লঙঘন করতে চায়নি। কিন্তু ট্রেন বাস বন্ধের প্রেক্ষিতে বিশাল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক মার্কাজে জড়ো হয়, ফলে সংক্রমণের ঘটনার সুত্রপাত হয়।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মহকুমা শাসককে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাসের ব্যবস্থা করারও অনুরোধ জানান। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষে সেব্যাপারে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

দক্ষিণপূর্ব নিজামুদ্দিন পশ্চিম এলাকায় ২৪ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ায় কঠোরভাবে লকডাউন বলবৎ করা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের মাধ্যমেই অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রক সুত্রে জানানো হয়েছে। এছাড়া তেলেঙ্গানায় পাঁচ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের সকলেই মার্চের মাঝামাঝি সময়ে নিজামুদ্দিনের জমায়েতে ছিল বলে জানা গিয়েছে।

এক হাজারে বেশি মানুষ তাবলিঘি জামাত মার্কাজে অবস্থান করছেন ২৪ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা সত্ত্বেও। দিল্লি সরকার মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সার্বিক সরকারি নির্দেশ অবহেলার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। মসজিদের মৌলানার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজামুদ্দিন এলাকা থেকে সোমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

নিজামুদ্দিন মার্কাজের পক্ষে জানানো হয়েছে, ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনতা কার্ফু জারির পর থেকেই মসজিদের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু রেল ও বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আটকে পড়া মানুষদের আশ্রয় দিতেই হয়েছে।

এর পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ২৩ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেন। ফলে বাস বা রেল পরিষেবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাদের সাধ্যমতো পরিবহণের মাধ্যমে আটকে পড়া পনেরোশো মানুষকে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে থাকে। এতেই বিপত্তি ঘটে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রাজ্যে।

মসজিদে ধর্মীয় জমায়েতের ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে সাত ব্যক্তির। নিজামুদ্দিন মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আটশো আটকে পড়া ব্যক্তিকে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মসজিতে আটকে থাকা দু’হাজার মানুষের মধ্যে তিনজনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এদের সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানান, তাবলিঘি জামাত সংগঠনের বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জমায়েত করা ও মারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণে ইন্ধন যোগানোর অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। জমায়েতের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ অমান্য করে সংস্থার সাততলা ভবনের একটি অংশে ২৮০ জন বিদেশিও আশ্রয় নেয়।