মানুষের শরীরের প্রায় প্রত্যেকটা অঙ্গেই কর্কট রোগের আক্রমণ হতে পারে। একেকটা ক্যানসারের লক্ষণ একেক রকম। কিন্তু আজকের আলোচ্য ফুসফুসের ক্যানসার। এই প্রসঙ্গে একটি জার্নালে প্রকাশিত পুরাতন পরিসংখ্যানটি দেখা যাক। তাতে করে এই রোগের ভয়াবহতা সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ ধারণা করা যেতে পারে।
পরিসংখ্যান কী বলে? ১৯৯০ সালে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন মহিলা এবং পুরুষ, কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্যানসারই ছিল ফুসফুসের। তাই ফুসফুসের ক্যানসারের গুরুত্ব উন্নত এবং উন্নতশীল দেশে স্বভাবতই অনেকটা বেশি। এই রোগের প্রকোপ বেশি এবং সবরকমের ক্যানসারের মধ্যে ২য় স্থান অধিকার করে আছে ফুসফুসের ক্যানসার। বর্তমানে এই রোগ মহিলাদের মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে গেছে। ১৯৪০ সালে মহিলাদের মধ্যে এই রোগের হার ছিল প্রতি লক্ষে সাত জন। এখন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি লক্ষে ৪২ জনেরও অধিক।
প্রায় ১.১ ১ মিলিয়ন ধূমপায়ী প্রতিবছর ছয় হাজারের বেশি সিগারেট সেবন করেন। এই প্রবণতা যদি না বদলায় বা রোধ করা যায়, তবে এই রোগ মহামারির চেহারা নিতে পারে। বিশেষ করে উন্নতিশীল দেশগুলিতে যে-হারে ধূমপানের নেশা বেড়ে চলেছে, হিসেব মতো ২০২৫ সালে ধূমপান জনিত কারণে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মারা পড়বেন। এবং এই মৃত্যুর কারণগুলির মধ্যে, ফুসফুসের ক্যানসার সিংহভাগ দখল করে থাকবে। সুতরাং এটা আর আলাদা করে বলা প্রয়োজন নেই যে, ধূমপানই হচ্ছে ফুসফুসের ক্যানসারের প্রধান কারণ। ধূমপায়ীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ, অ-ধূমপায়ীদের চেয়ে নয়গুন বেশি।
কত দিনে এই রোগ সৃষ্টি হবে, সেটা নির্ভর করে, কত বেশি সময় ধরে এবং কত পরিমানে ধূমপান করা হচ্ছে, তার ওপর। ধূমপান বন্ধ করলেই কিন্তু এই রোগের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিশ্চিত ভাবে কমে যায়। দেখা গেছে, প্রায় ছয় বছরের বেশি সময় লাগে এই রোগের প্রবণতা কমতে। আজকে ধূপপান ছাড়লে, কাল থেকে ঝুঁকি কমে গেল, ব্যাপারটা সে রকম কিছু নয়।
পুরুষরা সাধারণত ৬০ থেকে ৬৫ বছর বয়সে এবং মহিলারা ৭০ বছরে বা তার বেশি বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হন। যে-সব পুরুষ এবং মহিলারা ধূমপান করেন না অথচ ধূমপায়ীদের সঙ্গে থাকার কারণে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হন- তারাও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে সংখ্যায় কিছুটা কম।
তেলের ফার্নেসে যারা কাজ করেন বা ১৩ থেকে ১৯ বছর বছর বয়সের মধ্যে যারা ধূমপান আরম্ভ করেন, তাদের এই রোগ হতে পারে। যারা অ্যাসবেস্টস নিয়ে কাজ করেন, শহরের যানবাহন এবং কলকারখানার ধোঁয়াও এ রোগের অন্যতম কারণ। ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, বেরিলিয়ম, কোবাল্ট সেরোনিয়াম এই সব ধাতু নিয়ে যাদের কাজ বা রাসায়নিক পদার্থ যেমন প্রো-মিথাইল ইয়ার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের ফুসফুসের ক্যানসারের প্রবণতা হয়।
আরও একটা তথ্য জানা গেছে। পরিবেশ দূষণ জনিত কারণে ফুসফুসের ক্যানসারের তুলনায়, বংশগত ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে এবং সেটা মারাত্মক। সাধারণত ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীকে যত ভালোভাবেই চিকিৎসা করা হোক না কেন, প্রতি দশজন আক্রান্তের মধ্যে একজন, তিন বছরের বেশি বেঁচে থাকেন।
মুক্তির উপায়
এই রোগ থেকে রেহাই পেতে গেলে স্কুলের ছাত্রাবস্থা থেকেই ক্যানসার প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন হওয়া ভালো। ছোটবেলায় ধূমপান করার প্রবণতা তৈরি হয় কারণ বাড়ির বয়েজ্যেষ্ঠদের ধূমপান করতে দেখে ছোটরা। এছাড়া বন্ধুদের পাল্লায় পড়েও, তারা ধূমপানে আসক্ত হয়। এই কু-প্রভাব থেকে ছোটদের মুক্ত করতে হলে, গৃহস্তরে এবং বিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন।