দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা যেন ঘুরে গেল। চোখে অন্ধকার দেখে কোনও ক্রমে টাল সামলালেন। অথবা প্রজেক্টের চাপ সামলাতে একটানা কয়েক ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ করছিলেন। উঠে দাঁড়াতেই মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। ধপ করে ফের চেয়ারেই বসে পড়লেন।
শোওয়া বা বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর পরে এমন মাথা ঘুরে যাওয়া বা মাথা ঝিমঝিম করার সমস্যার পোশাকি নাম পশ্চুরাল হাইপোটেনশন বা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন। হঠাৎ উঠে দাঁড়ানোর ফলে রক্তচাপ কমে যাওয়ার জেরেই এমনটা ঘটে। এর জন্যই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায়।
Advertisement
দেহে রক্তপ্রবাহের সময়ে ধমনির দেওয়ালের উপরে ৯০ ডিগ্রি কোণে যে-চাপ সৃষ্টি হয়, সেটাই রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়। ব্যক্তিবিশেষে এই রক্তচাপের তারতম্য হয়। তবে সাধারণত রক্তচাপ ১০০/৬০-এর কম হলে তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা হাইপোটেনশন বলে ধরা হয়। দেহের বিভিন্ন অবস্থানের উপরেও রক্তচাপ নির্ভর করে। যেমন, শুয়ে থাকলে হৃৎপিণ্ডকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করে রক্ত পাম্প করতে হয় না। তখন হৃৎপিণ্ড কম কাজ করে।
Advertisement
কিন্তু দাঁড়িয়ে পড়লে শরীরের সব জায়গায় রক্ত পৌঁছে দেওয়া ও ফিরিয়ে আনার জন্য হৃৎপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। এই কম কাজ থেকে বেশি কাজ করার স্তরে পৌঁছনোর প্রক্রিয়ায় দেরি হলেই মাথা ঘোরে, ঝিমঝিম ভাব হয়। কারণ তখন মস্তিষ্কে রক্ত কম যেতে থাকে। এ দিকে, ১৫ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। তেমনটা যাতে না হয়, তার জন্য পশ্চুরাল হাইপোটেনশন সৃষ্টি হয় দেহে। এই পরিস্থিতিতে কেউ বসে বা শুয়ে পড়লে ফের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।
আমাদের দেহে রক্তবাহী নালি ও হৃৎপিণ্ডে থাকে ব্যারো-রিসেপটর, যা রক্তচাপের তারতম্য বুঝে হৃৎপিণ্ডকে সেই মতো কাজ করার নির্দেশ পাঠায়। এই রিসেপটর ঠিক মতো কাজ না করলে পশ্চুরাল হাইপোটেনশন সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, হৃৎপিণ্ড দুর্বল থাকলে, ভাল্ভ ঠিক মতো কাজ না করলে বা পালস রেট প্রকৃতিগতভাবে কম থাকলেও একই সমস্যা হতে পারে। এর পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রস্টেটের সমস্যা ও অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধের জেরে, ডায়াবিটিস বা হরমোনের সমস্যার জন্যও হতে পারে হাইপোটেনশন।
সাবধানতা ও চিকিৎসা
এই সমস্যায় শোওয়া বা বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়ে তা ধীরে ধীরে, অতি সাবধানে করতে হবে। শোওয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতে হবে কিছুক্ষণ। তারপর দাঁড়ানো উচিত। কেউ মেঝেয় পড়ে গেলে দ্রুত পা দু’টি উঁচু করে ধরতে হবে, যাতে মস্তিষ্কের দিকে রক্ত চলাচল বাড়ে। বয়স্কদের সুবিধার্থে বাথরুমে হ্যান্ডল ধরে উঠে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রাখতে পারলে ভালো।
পশ্চুরাল হাইপোটেনশনের সমস্যা ধরা পড়লে ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা সম্ভব। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেও সমাধান করা যায়।
Advertisement



