ইতিমধ্যেই প্রাণহানিরও খবর আসছে বিরল এই স্নায়ু রোগের কারণে। ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। ফলত উদ্বেগে রয়েছেন সকলেই। তবে বেশি আতঙ্কিত না হয়ে, উপসর্গ দেখলেই সাবধান হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
বস্তুত কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া থেকে সংক্রমণের পরে জিবিএস হতে পারে। সাধারণ ভাইরাস যেমন, ফ্লু বা কিছু গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, মাইকোপ্লাজমা, অথবা নিউমোনিয়া, এইচআইভি ভাইরাস যা সাধারণত এইচআইভি/এইডস সৃষ্টি করে (খুব বিরল), বা হারপিস সিমপ্লেক্স, মনোনিউক্লিওসিস এবং কোভিড-১৯।
হাঁটাচলায় সমস্যাই গুলেন বারি সিনড্রোমের প্রধান উপসর্গ। এটিতে আক্রান্ত হলে পা দুর্বল লাগবে। পরে ধীরে ধীরে শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ অকেজো হতে শুরু করবে। সময় যত এগোবে, ততই শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকবে। সেক্ষেত্রে রোগী ওঠাবসা করা, বা হাঁটাচলার সময় সমস্যায় পড়বেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে গুলেন বারি সিনড্রোম বা জিবিএসে আক্রান্ত হলে, ধীরে ধীরে মুখ বেঁকে যেতে পারে। পক্ষাঘাত পর্যন্ত হতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা শুরু হলে সতর্ক হোন। এটা গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। প্রথমেই যেটা হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি আঙুল এবং পায়ের তলায় জ্বালা অনুভব করবেন। আক্রান্তের কথা জড়িয়ে যেতে পারে।
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াও গুলেন বারি সিনড্রোমের একটি উপসর্গ। এই অসুখের ফলে প্রস্রাব করার সময় জ্বালা, এমনকী বারবার সংক্রমণজনিত সমস্যাতেও ভুগতে হতে পারে। এছাড়া বিরল এই স্নায়ুরোগের কারণে বুকে জ্বালা বা হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, নার্ভ কন্ডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড – এই দুটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। আক্রান্তকে সারাক্ষণ নজরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বিলম্ব করবেন না। ভেন্টিলেশন ইউনিট রয়েছে, এমন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে, গুলেন বারি সিনড্রোম প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
জিবিএস রোগের কোনও নিরাময় নেই বর্তমানে। ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং প্লাজমা থেরাপি করে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হল লক্ষণগুলি হ্রাস করা, জটিলতার চিকিৎসা করা এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়তা করা।
একদম প্রাথমিক পর্যায়ে, অ্যাফেরেসিস বা প্লাজমফেরেসিস চিকিৎসাটিতে অ্যান্টিবডি নামক প্রোটিনগুলি অপসারণ করা হয়, যা স্নায়ু কোষগুলিকে আক্রমণ করে। আরেকটি কার্যকরী চিকিৎসা যার নাম ইন্ট্রাভিনাস ইমিউনোগ্লোবুলিন (আইভিআইজি)। উভয় চিকিৎসা দ্রুত উন্নতির দিকে পরিচালিত করে কিন্তু একই সময়ে দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করার কোনও সুবিধা নেই।
অন্যান্য চিকিৎসা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু লক্ষণগুলি গুরুতর হলে, হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সহায়তা দেওয়া হয় হাসপাতালে।
অন্যান্য চিকিৎসাগুলি এই রোগের জটিলতা প্রতিরোধ করে। যেমন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে, রক্ত পাতলা করা হয়। ডায়াফ্রাম দুর্বল হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য দেওয়া হয় নল বা ভেন্টিলেটর। ব্যথার চিকিৎসার জন্য ব্যথার ওষুধ এবং জয়েন্ট এবং পেশী সুস্থ রাখতে সাহায্য করে শারীরিক থেরাপি।
গুলেন বারি সিনড্রোম থেকে বাঁচতে তাই অবিলম্বে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। এর সাবধানতা হিসেবে কয়েকটি নিয়ম মানুন। হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। রাস্তার কাটা ফল, স্যালাড খাওয়া বন্ধ করতে হবে। রান্না করা খাবার খেতে হবে। উপসর্গ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপালে ভর্তি করতে হবে রোগীকে।