রেডিয়োলজি বিষয়টি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি বা যে-কোনও জটিল রোগের চিকিৎসার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। আপনি যদি কোনও চিকিৎসকের কাছে যান, দেখবেন প্রথমেই রোগের ইনভেস্টিগেশন লেখা হয়। এই রেডিয়োলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন-এর মধ্যে সবচেয়ে কমন হল আল্ট্রাসোনোগ্রাফি টেস্ট। রোগীর সমস্যার উপর নির্ভর করে এই আল্ট্রাসোনোগ্রাফি সাধারণত গোটা অ্যাবডোমেন অথবা কিডনির করা হয়ে থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি, বাচ্চার অবস্থান বা বৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত ধারণা পেতে, করা হয়।
সোনাগ্রাফি ছাড়াও এই রেডিয়োলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন-এর মধ্যে পড়ে এক্স রে, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট। এই চারটিই রেডিয়োলজির মূল বিষয়। টেকনিশিয়ান এক্স রে ছবি তুলে দেওয়ার পর, সেটির রিপোর্ট নিরূপণ করেন একজন এমডি রেডিয়োলজিস্ট চিকিৎসক অথবা ডিএমআরডি (ডিপ্লোমা রেডিয়োলজিস্ট)। এমবিবিএস পাস করার পর রেডিয়োলজি নিয়ে এই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে স্পেশালাইজ করেন যে-চিকিৎসকরা, তাঁরাইএই রেডিয়োলজিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন— যা নানা রোগের ইনভেস্টিগেশনে সহায়তা করে।
Advertisement
শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কোনও সমস্যা আছে কিনা, পেটে পাথর বা টিউমার রয়েছে কিনা, মাথায় কোনও হেমারেজ হয়েছে নাকি, শরীরের কোথাও কোনও আস্বাভিকতা আছে কিনা- সেগুলো বের করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে সার্জন, বা গাইনিকোলজিস্ট কিংবা কোনও রোগের স্পেশালাইজড ডাক্তাররা, তাঁর পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ণয় করেন। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধানে অন্তত তিনবার সোনোগ্রাফি করা হয়, গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা বোঝার জন্য। প্রয়োজন পড়লে এর বেশিও করা হতে পারে, বাচ্চার কোনও গঠনগত সমস্যা আছে কিনা, বাচ্চার ওজন ঠিক আছে কিনা বা শিশুটির বাড়বৃদ্ধি বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
কোথায় করবেন কখন করবেন?
Advertisement
যখনই এমন কোনও টেস্ট করার প্রয়োজন হবে, সেই সেন্টারে যান যেখানে এই রিপোর্ট একজন রেডিয়োলজিস্ট চিকিৎসকের দ্বারাই প্রস্তুত হয়। কারণ তাঁরাই এই বিষয়ের বিশেষজ্ঞ।
নিজে থেকে কখনও আল্ট্রা সোনোগ্রাফি বা এক্স রে করাবার সিদ্ধান্ত নেবেন না। বিশেষ করে এক্স রে। কারণ এতে এমন একটি রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়, যেটা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। একমাত্র নির্দিষ্ট কোনও কারণে যদি আপনার চিকিৎসক বলেন এক্স রে করাতে, তবেই করাবেন। মহিলাদের মাসিক ঋতুচক্রের শুরুর প্রথম দশ দিন ব্যতীত বাকি দিনগুলো খুব প্রয়োজন না হলে এক্সরে আর সিটি স্ক্যান না করানোই ভালো। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে এক্সরে আর সিটি স্ক্যান গর্ভাবস্থায় করানো যায় না।
ছোটখাটো ব্যথার জন্য বা বুকে সর্দি জমার মতো ঘটনায় এক্স রে করানোর দরকার নেই। এই রশ্মি আপনার শরীরে বারংবার প্রবেশের ফলে ক্যনসারের মতো মারণ রোগ দানা বাঁধতে পারে। মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। রেডিয়েশনের কারণে ওভারিতে সমস্যা এবং ডিম্বাণু নিষ্ক্রমণের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
একই কথা বলব সিটি-র ক্ষেত্রেও। কম্পিউটার টোমোগ্রাফি (সিটি), এটাও এক ধরনের এক্স রে কিন্তু এতে থাকে হাই রেডিয়েশন । এটিও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না করানোই ভালো। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, অনেকেই দির্ঘদিন ধরে বুকে কফ জমে আছে, কমছে না বলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সিটি করাতে আসেন। এমনটা না করাই ভালো, এতে অন্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
আরেকটা কথা বলা দরকার, আল্ট্রা সোনোগ্রাফিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে, তবু এটা যখন তখন না করাই শ্রেয়। এর কারণ হল, কেবল একজন ডাক্তারবাবুই বুঝবেন আপনার পেটের কোন অংশটির বা কোন অর্গ্যানের সোনোগ্রাফি দরকার।
শরীরের যেখানে সমস্যা শুধু সেই বিশেষ অংশটিরই সোনোগ্রাফি করালে, চিকিৎসকের সমস্যাটা বোঝার ক্ষেত্রে যেমন যুক্তিযুক্ত হবে, তেমনই আপনিও অপ্রয়োজনীয় খরচের বিষয়টি এড়াতে পারবেন।
এমআরআই একটি বড়ো ও ব্যয়বহুল পরীক্ষা। খুব দরকার না হলে এটি করাও হয় না। সুতরাং নিজের সিদ্ধান্তে এমআরআই করানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব একটা নেই বটে, তবু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি করানোর দরকার নেই।
Advertisement



