আপনি শুনে অবাক হবেন যে, ভারতবর্ষে প্রতি বছর প্রায় ১২ লক্ষ যুবক-যুবতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাই বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। অতএব, সতর্কতা জরুরি।
রান্নার জন্য আপনি কী তেল ব্যবহার করছেন, তার উপরও অনেকটাই নির্ভর করে আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের হার্ট-এর স্বাস্থ্যের ভালোমন্দের বিষয়টি। আমরা যখন ভোজ্য তেল কিনতে যাই, তখন প্রথমে দেখি দাম। তারপর যে-ব্র্যান্ড-এর তেলের দাম সব থেকে কম, সেই তেল-ই কিনে নিয়ে যাই। তখন আমরা এটা ভাবি না, যে-তেল কেনা হল তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, নাকি খারাপ। অথচ এটাই সত্যি যে, তেলের ভালোমন্দের সঙ্গে যুক্ত আমাদের হার্ট-এর স্বাস্থ্য। তাই ভোজ্য তেল কেনার সময় সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, রান্না করা খাবার সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি, ব্যবহৃৎ তেল যেন হার্ট-এর ক্ষতি না করে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল-এর এক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে যে, যদি হার্ট ভালো রাখতে হয়, তাহলে আনস্যাচুরেটেড অয়েল অর্থাৎ গুড ফ্যাট, যাকে পোলো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট অথবা মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়— তা ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ রুম টেম্পারেচার-এ এই তেল তরল থাকে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো বলা হয়। এই ফ্যাট হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক-এর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় এবং ট্রাইগ্লিসারাইডস-এর লেভেল-কেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। শুধু তাই নয়, শরীরে ব্যাড কোলেস্টেরল-এর মাত্রা কমিয়ে গুড কোলেস্টেরল-এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সেইসঙ্গে, ব্লাড প্রেশার আয়ত্তে রাখে এবং আর্টারি ঠিক রাখে। আর স্যাচুরেটেড অয়েল, ফ্যাট বাড়িয়ে দেয়, কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের ক্ষতি করে।
স্যাচুরেটেড অয়েল সাধারণ রুম টেম্পারেচার-এ ড্যালা পাকিয়ে যায়। তাই আর্টিফিশিয়াল ট্রান্স ফ্যাটস এড়়িয়ে চলুন কারণ, এই ধরনের তেল হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং ওবেসিটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
মাথায় রাখুন, প্রতিদিন যদি আপনার ২০০০ ক্যালোরি-র প্রয়োজন হয়, তাহলে এর মধ্যে ফ্যাট যেন ২০-২৫ শতাংশের বেশি না হয়। তা যেন আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হয়। আর যদি স্যাচুরেটেড অয়েল হয়, তাহলে তাতে যেন ৫-৬ শতাংশের বেশি ফ্যাট না থাকে।
যদি আপনার হার্ট-এর সমস্যা থাকে কিংবা কোলেস্টেরল উচ্চমাত্রায় থাকে, তাহলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ব্যবহার করুন ক্যানোলা অয়েল। কারণ এতে থাকে গুড ফ্যাট, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘কে’ এবং এই তেল কোলেস্টেরল ফ্রি। এর মধ্যে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকার পাশাপাশি, উচ্চমাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড থাকে— যা ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল প্রভৃতিকে আয়ত্তে রাখে এবং হার্ট সচল ও সুস্থ স্বাভাবিক রাখে।
অনেক হেলথ অর্গানাইজেশন ক্যানোলা অয়েল-কে ‘হার্ট-স্মার্ট অয়েল’ আখ্যা দিয়েছে। এতে জিরো শতাংশ (০%) ট্রান্স ফ্যাট থাকার কারণে, হাই লেভেল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়— যা হৃদরোগ আটকায় এবং ডায়াবেটিজ আয়ত্তে রাখে।
প্রচুর পরিমাণ মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে অ্যাভোকাডো অয়েল-এ। যা হেলদি ফ্যাটস এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট-যুক্ত। এর ফলে খারাপ কোলেস্টেরল-এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং গুড কোলেস্টেরল-এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অ্যাভোকাডো অয়েল হার্ট-এর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে ৭০ শতাংশ। আর কোলেস্টেরল-এর মাত্রা সঠিক থাকলে হৃদরোগ এড়ানো যায় অনেকটাই। আর এই তেলের বিশেষত্ব এই যে, এতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা সঠিক পুষ্টি জোগায়। সেইসঙ্গে এতে পোলিফিনোলিস নামের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস-যুক্ত হওয়ার কারণে ফ্রি র্যাডিক্যালস শরীরের সুরক্ষা প্রদান করে। শুধু হার্ট-ই নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করে এই তেল।
অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সানফ্লাওয়ার অয়েল-এ ৮০ শতাংশ আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হার্ট-এর পক্ষে খুবই ভালো। এই তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে না, তাই শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল-কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে এই তেল। শুধু তাই নয়, এই তেল ব্যবহারের ফলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে চনমনে হয়ে ওঠে শরীর। সেইসঙ্গে, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এসব সহজে বাসা বাঁধতে পারে না শরীরে। আর এতে থাকা প্রোটিন, কোষ মেরামত করে এবং নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।