নাক থেকে রক্তপাতের কারণ ও প্রতিকার

এপিসট্যাক্সিস (Epistaxis) বা নাকের মধ্য থেকে রক্তপাত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটা আবার ধমনীর রক্তপাতও হতে পারে অথবা শিরার রক্তপাত।

নাকের শিরা বা ধমনীতন্ত্রে, নাকের রক্ত সংবহন প্রধানত দুই প্রকার ধমনীর নালিকা দ্বারা হয়।

ইন্টারন্যাল ক্যারটিড ( যা ধমনীর শাখাগুলির দ্বারা হয়)


(ক) অ্যান্টিরিয়ার (সামনের এথমড্যাল আর্টারি)

(খ) পস্টিরিয়ার (পিছনের) এথমড্যাল আর্টারি)

নাকের সামনের ও নীচের দিকের রক্ত বহন নালিকাগুলি যথাক্রমে

(ক) স্টেনোপ্যালেটান ধমনীর সেপ্টাল ব্রাঞ্চ

(খ) গ্রেটার প্যালেটিন ধমনীর

সেপ্টাল ব্র্যাঞ্চ অফ সুপিরিয়ার লেবিয়াল আর্টারি

লিটলস এরিয়া (Little’s Area): নাকের রক্তপাতের শতকরা ৯০% কারণই এই স্থান থেকে রক্তপাত। এই স্থানটি নাকের দুই ছিদ্রের যে-পর্দা বা সেপটাম আছে তার সামনের দিকে অবস্থিত। নাকের আঘাতে যে-রক্তপাত হয় তা প্রধানত এই স্থান থেকে হওয়া রক্তক্ষরণ।

কারণ

শিশুদের বা যুবাদের ক্ষেত্রে নাক থেকে রক্তপাতের কারণ হল নাক খোঁটা। এক্ষেত্রে বলার যে, শিশুদের নাক থেকে রক্তপাত সাধারণত শীতকালে হয় কেন না- তখন তার নাকের পর্দা থেকে সর্দি পরিষ্কার করার প্রবণতা থাকে। নাকের মধ্যে কোনও জিনিস ঢোকালে যেমন চক বা চকের টুকরো, রবার, ফলের বিচি ইত্যাদি, রক্তপাত হতে পারে। এছাড়া সাইনাস ইনফেকশন বা সাইনুসাইটিস,অ্যাডিননয়েড গ্ল্যান্ড ইনফেকশন থাকলে, নাকের মধ্যকার ডিপথেরিয়া হলে কিংবা অ্যানিমিয়া (পারনিসিয়াস বা রক্তস্বল্পতা) বা পারপিউরার ক্ষেত্রে রক্তপাতের সম্ভাবনা আছে।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধি নাক থেকে রক্তপাতের প্রধান কারণ। নাকের মধ্যে বা পিছনে অবস্থিত ক্যান্সার রোগও একটা নাসারন্ধ্র দিয়ে রক্তপাতের এক প্রধান কারণ। এগুলি ছাড়াও আরও প্রচুর কারণে রক্তপাত হয়। যেমন Idiopathic হলে, বংশগত রোগের জন্য যেমন ওসলার রোগ, নাকে আঘাত লাগা, প্রচণ্ড গরম বা ঠান্ডা লাগা, এরোপ্লেনে ভ্রমণ কালে বায়ু চাপের তারতম্য হলে কিংবা ব্রঙ্কাইটিস, হুপিংকাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগে। অ্যাসপিরিন, কুইনাইন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার কারণেও কিন্তু নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।

প্রতিকার

কোনও রোগী নাকের রক্তপাতের সমস্যা নিয়ে এলে, তার জন্য দুই প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রথমত রক্তপাত বন্ধ করার উপায় নির্ধারণ করা এবং দেখা উচিত রোগী শকে আছে কিনা।

ঘরোয়া উপায়ে রক্তপাত বন্ধ করবার জন্য –

১) রোগীকে বসিয়ে দিয়ে মাথাটা একটু নিচু করে নাকের উপর কোনও পরিষ্কার কাপড় চাপা দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রোগীর নাক টিপে থাকবেন।

২) রক্ত যদি মুখ দিয়ে আসে তবে তা মুখ দিয়ে বার করে দিতে বলতে হবে এবং রোগীকে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে।

শকের অবস্থায় রোগীর নাড়ির গতি খুব দ্রুত হতে পারে। রোগীর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। রোগীর রক্তচাপ কমে যাবে। রোগীর প্রস্রাব কম পরিমাণে হবে। এই উপসর্গ থাকলে রোগীকে শীঘ্রই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।

শকের চিকিৎসায় পেথিডিন ইনজেকশন দেওয়া হয়। রক্তক্ষরণ হলে টাটকা রক্ত দেওয়ার দরকার পড়ে। ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে গ্রুপিং-এর জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঠাতে হবে। যতক্ষণ রক্ত না পাওয়া যায়, ততক্ষণ রক্তের বদলে প্লাজমা অথবা ডেক্সট্রোস স্যালাইন ইনট্রাভেনাস দিতে হবে। হালপাতালে রক্ত বন্ধ করতে নাকটি প্যাক করতে হয়।

সামনের দিকের প্যাকিংয়ে, প্রায় ১ মিটার লম্বা ভেসলিন রিবণ গজ দিয়ে নাকের তলা থেকে উপর পর্যন্ত লুপ করে করে প্যাক করা হয়। এই প্যাক দিলে ২৪ ঘন্টা বাদে প্যাক খুলে দেওয়া উচিত, কেন-না নাকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়।

এছাড়া প্যাকের সাথে রোগীকে পেনিসিলিন ইনজেকশন দেওয়া বা অন্য কোনও ওষধ খাওয়ানো দরকার। নাকের পিছন দিকে প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে তখনই তা করা হয়, যখন সামনের দিকের প্যাকিং-এ রক্ত বন্ধ করা যায় না। এই প্যাক প্রায় ৫ দিন রাখা যায় এবং এই প্যাকিংয়ের সঙ্গে অ্যন্টিবায়োটিক্স দেওয়া দরকার।

প্যাকিং ছাড়াও কটারির দ্বারা রক্তবাহীনালির রক্তপাত বন্ধ করা যায়। এমনকী অপারেশন করেও রক্তবাহী নালিগুলিকে বেঁধে দেওয়া যায়। রোগীকে ভিটামিন-সি দিতে হবে।