পয়লাবৈশাখে ৫টি চিরাচরিত বাঙালি পদ

খাসির মাংসের কোর্মা(ছবি- Getty Images)

নতুন প্রজন্মের ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি ঘর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অসাধারণ সুস্বাদু কিছু বাঙালি পদ।এই নববর্ষে রেস্তোরায় যাওয়ার পরিবর্তে ঘরোয়া জিনিস দিয়ে বাড়িতেই বানিয়ে নিন এই চিরাচরিত বাঙালি পদগুলি।

নিরামিষ পোলাও

উপকরণ- গোটা গরমমশলা(দারচিনি,লবঙ্গ,ছোট এলাচ), তেজপাতা, গোবিন্দভোগ চাল,ঘি, কাজু, কিশমিশ,জাফরান(অপশনাল),নুন-চিনি (স্বাদ মত)


প্রণালি- গোবিন্দভোগ চাল ভাল করে ধুয়ে নিন।হাঁড়িতে জল গরম করে তাতে সামান্য নুন দিয়ে চাল অর্ধসিদ্ধ করে নিন।সেদ্ধ চাল ছাঁকা হয়ে গেলে তা থালায় ছড়িয়ে রাখুন, এতে চাল জড়িয়ে যায় না, পোলাও ঝরঝরে হয়। এবার হাঁড়িতে ঘি দিন,ঘি গরম হলে তাতে গোটা গরমমশলা,তেজপাতা দিন। গরম মশলার সুগন্ধ ছড়ালে তাতে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা কাচা কাজু এবং কিশমিশ দিন।হাল্কা করে ভেজে নিন, এরপর এতে স্বাদ মতো চিনি ও নুন দিন। এরপর এতে সেদ্ধ করে রাখা চাল মিশিয়ে হাল্কা হাতে নেড়ে নিন। প্রয়োজন মতো ঘি মেশাতে পারেন, অল্প দুধে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা জাফরান দিতে পারেন,এতে সুগন্ধ বাড়বে,রংও সুন্দর হবে।

মাছের কালিয়া,খাসির মাংসের সাথে এই পোলাও পরিবেশন করতে পারেন। সম্পূর্ণ নিরামিষ খেতে চাইলে এই পোলাও এর সঙ্গে ছানা বা ধোঁকার ডালনা,আলুর দমও পরিবেশন করতে পারেন।

খাসির মাংসের কোর্মা  

উপকরণ- খাসির মাংস, সরষের তেল,পেঁয়াজকুচি,আদা-রসুন বাটা,কাচালঙ্কাবাটা, টমেটো, টক-দই, গোটা গরমমশলা,গোটা গোলমরিচ, শুকনো-লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, গরম-মশলাবাটা বা গুঁড়ো,নুন-চিনি স্বাদমতো, ফ্রেশ ক্রিম।

প্রণালী- মাংস ভাল করে ধুয়ে একটি পাত্রে নিয়ে তাতে অল্প নুন,চিনি,গোটা গরমমশলা, গোলমরিচ, হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, অল্প সর্ষের তেল,কাঁচালঙ্কা বাটা,অল্প রসুন আদা বাটা, অল্প দই দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য চাপা দিয়ে রেখে দিন।

কড়াইতে ঘি দিন।ঘি গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কুচি ও চিনি দিন। পেঁয়াজ বাদামি হলে তাতে মাংসের মিশ্রণটা দিয়ে দিন।একই সঙ্গে বাকি মশলাগুলো দিয়ে দিন। এরপর কষতে থাকুন।মশলা ছেড়ে এলে মাঝারি আঁচে ঢাকা দিয়ে রাখুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে ফ্রেশ ক্রীম দিন।

পরোটা বা পোলাও-এর সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

সর্ষে ইলিশ

উপকরণ- ইলিশ মাছ, সর্ষের তেল,কাঁচা লঙ্কা, পাতিলেবু, সর্ষে-পোস্তবাটা।

প্রণালী- ইলিশ মাছগুলোকে ভালো করে ধুয়ে রাখুন।নুন-হলুদ বা তেল কিছুই মাখাতে হবেনা।গোটা সরষে আর অল্প পোস্ত নুন দিয়ে অল্প জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন এবং বেটে নিন।এরপর কড়াইতে সরষের তেল দিন।তেল ভাল করে গরম হলে ওই সরষে বাটা দিয়ে দিন। অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন।তেল ছেড়ে এলে অল্প অল্প করে জল মেশান। পোস্ত আর সরষের কাঁচা ভাব কেটে গেলে মাছগুলো দিয়ে দিন। একই সঙ্গে একটু বেশি করে কাঁচা লঙ্কা চিরে দিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে মাঝারি আঁচে রাখুন।স্বাদ মতো নুন দিতে পারেন।মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে আঁচ একটু বাড়িয়ে দিন।প্রয়োজন মত গ্রেভি রেখে আঁচ বন্ধ করে দিন।নামানোর আগে অল্প কাঁচা তেল,কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং কাঁচালঙ্কা চিরে দিয়ে দিন।গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

 

চিংড়ির মালাইকারি

উপকরণ- চিংড়ি মাছ, সরষের তেল,নারকেলের দুধ(বা নারকেল কোরা),কাঁচা লঙ্কা,সর্ষে বাটা, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, নুন-চিনি স্বাদ মতো,দারচিনি,ছোট এলাচ, অল্প ঘি।

প্রণালী-চিংড়ি মাছ ভাল করে ধুয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে নিন।কড়াইতে সর্ষের তেল দিন। তেল গরম হলে তাতে চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দিন।মাছ মচমচে করে ভাজবেন না, হাল্কা সোনালী রং হওয়া অব্ধি ভেজে নিন। একটি পাত্রে চিংড়ি মাছগুলো তুলে রাখুন। এবার ওই একই তেলে দারচিনি আর এলাচ দিন।সুগন্ধ ছড়ালে তাতে  কাঁচা লঙ্কা আর সর্ষে বাটা দিন ও অল্প আঁচে নাড়তে থাকুন। তেল ছেড়ে এলে এতে নারকেলের দুধ বা নারকেল কোরা দিন ও স্বাদ মতো নুন আর চিনি দিন। এবার অল্প আঁচে কষতে থাকুন। মিশ্রণের রং বদলাতে শুরু করবে, তেল কড়াইয়ের চারপাশে ছড়িয়ে যাবে। এই সময় চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে মাঝারি আঁচে রাখুন।মাছগুলো সেদ্ধ হয়ে গেলে অল্প ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

কাঁচা আমের চাটনি

উপকরণ- কাঁচা আম, চিনি, গোটা সরষে, অল্প নুন।

প্রণালী- কড়াইয়ে ২-১ ফোঁটা তেল দিন। তাতে গোটা সরষে ফোড়ন দিন। এবার আগে থেকে কেটে রাখা কাঁচা আম দিয়ে দিন।এতে অল্প নুন মেশান।এবার আমগুলোকে খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করে তাতে জল দিয়ে দিন। আঁচ বাড়িয়ে দিন। মাঝে দেখে নিন আম সেদ্ধ হয়েছে কিনা।আম সেদ্ধ হয়ে এলে স্বাদ মতো চিনি দিন।আম প্রেসার-কুকারে গোটা সেদ্ধ করে নিয়ে তার পাল্প বের করে নিয়েও এই চাটনি করতে পারেন।

গরম কালে শেষ পাতে ঠান্ডা করে রাখা এই চাটনি অমৃত সমান।