বিধানসভায় মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য, চাপের মুখে ক্ষমা চাইলেন নীতিশ, পদত্যাগের দাবিতে অনড় বিজেপি  

Written by SNS November 8, 2023 4:38 pm
পাটনা, ৮ নভেম্বর – মহিলাদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য রাখার জন্য ক্ষমা চাইলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তিনি বলেন, তাঁর কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং নারীশিক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে মঙ্গলবার বিধানসভায় কুরুচিকর, অশ্লীল এবং আপত্তিকর বক্তব্য রাখেন তিনি, এমনই অভিযোগ ওঠে নীতিশের বিরুদ্ধে। সেই মন্তব্যের জেরে বুধবারও বিধানসভায় বিরোধীদের প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। অবশেষে চাপের মুখে নতি স্বীকার করে নেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বিহার বিধানসভাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে ক্ষমা চাইছি। আমার শব্দচয়ন এবং বক্তব্যের ভঙ্গিমা হয়তো ঠিক ছিল না। তাই কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি আমি।’ 

নীতিশ তাঁর বক্তব্য ফিরিয়ে নিলেও বিরোধী দল মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে অনড়। কুরুচিকর বক্তব্য রাখায় মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি বিজেপির। এই ইস্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভা।

বিধানসভায় বিহারের শীতকালীন অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের বিধানসভায় রাখা বক্তব্যের জেরে সমালোচনার ঝড় ওঠে।মঙ্গলবার রাতে বিহার বিধানসভায় জাত গণনার রিপোর্ট নিয়ে বিতর্কে নীতিশ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে বিহারের অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। তবে আরও অগ্রগতি দরকার।’ তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষিত মহিলা জানেন, কখন কিভাবে স্বামীকে আটকাতে হয়…… এই কারণেই জন্মহার কমছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার আরও বাড়াতে হবে। আগে প্রজনন হার ছিল ৪.৩, কিন্তু এখন তা ২.৯-এ পৌঁছেছে । শীঘ্রই আমরা ২-এ পৌঁছব। ’ 

নীতিশের এই বক্তব্যকে অশালীন বলে তীব্র বিরোধিতা করে বিজেপি। বিরোধী দলের বক্তব্য, এমন কুরুচিকর ভাষায় কেউ কখনও বিধানসভায় কথা বলেননি। তখন পাল্টা জবাব দেয় শাসক জোটও। নীতিশ ও লালুপ্রসাদের দল যথাক্রমে জেডিইউ এবং আরজেডি সমর্থনে বলে, মুখ্যমন্ত্রী আসলে যৌন শিক্ষার কথা বলেছেন। নীতিশের পক্ষ নিয়ে তাঁর কথার ব্যাখ্যা দিতে উঠে দাঁড়ান আরজেডি নেতা তথা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব।

বুধবার রাজ্য বিধানসভায় পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন বিজেপির বিধায়ক এবং এমএলসিরা। বিরোধীরা তাঁকে সংসদে প্রবেশে বাধা দেন. মহিলাদের সম্পর্কে করা তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তাঁর কাছে। বিজেপি সদস্যদের অভিযোগ, মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেছেন। এজন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে. প্রচন্ড চাপের মুখে অবশেষে নতি স্বীকার করেন নীতিশ। তিনি তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি তাঁর বক্তব্য ফিরিয়ে নিচ্ছেন।   

নীতিশ কুমার এদিন বিধানসভায় বলেছেন, “আমার বক্তব্য যদি কাউকে আঘাত করে থাকে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। বিবৃতিটি কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছিল না। উদ্দেশ্য মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা ছিল না। আমরা ক্রমাগত মহিলাদের উন্নতির জন্য কাজ করছি।”

এদিকে নীতিশ কুমারের বক্তব্য সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ রাই বলেন, ” এটা খুবই আপত্তিকর, নীতিশ কুমার যেভাবে নারীদের নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, তা অশালীন, নিন্দনীয়।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে তেজস্বী যাদবের বক্তব্যও আপত্তিকর বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, নীতিশ কুমার আর মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকার উপযুক্ত নন। আপনি এই দেশের সংস্কৃতি ধ্বংস করেছেন। আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা উচিত।” 

নীতিশ কুমারের এই মন্তব্যের পরই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক তরজা। তাঁর ওই মন্তব্যকে বি গ্রেডের বলে উল্লেখ করে কড়া সমালোচনা করেন বিজেপি  নেতারা। বিষয়টি নিয়ে সরব হন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। তিনি বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে। এদিন বিধানসভার অধিবেশন শেষে এই নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে বিহার বিজেপি। লেখা হয় ‘নীতিশ কুমারের মতো কদর্য রাজনীতিবিদ ভারতে আর একজনও আসেননি। বি গ্রেড সিনেমা তাঁর মস্তিষ্কে বসে গিয়েছে। এই রকম অসুস্থ এক জন ব্যক্তির মুখ্যমন্ত্রী থাকার কোনও অধিকার নেই। তাঁকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।’ সোশাল মিডিয়ায় এই পোস্ট লেখে বিজেপি শিবির।