নীতি-আয়োগের বৈঠকে থাকছেন না বাংলার কোনও প্রতিনিধি, বৈঠকে নেই কেজরি এবং মানও 

 কলকাতা , ২৬ মে – কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের বাতাবরণ আরও ঘোরালো হল। নীতি আয়োগের বৈঠকে থাকবেন না  বাংলার কোনও প্রতিনিধি। নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিতে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি যাচ্ছেন না, তা আগেই জানা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বিকল্প হিসাবে রাজ্য সরকার যাঁদের নাম প্রস্তাব করে, কেন্দ্র তাঁদের নামে আপত্তি জানানোয় রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিই ওই বৈঠকে যোগ দেবেন না।এদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন তিনি এই বৈঠকে যোগ দেবেন না। সেই তালিকায় নাম লেখালেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে কেজরীবাল জানিয়ে দেন, নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না তিনি। 
আগামী ২৭ মে দেশের একাধিক মুখ‌্যমন্ত্রীর সঙ্গে একযোগে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দিল্লি সফরের কথা জানিয়েছিলেন। নীতি আয়োগের বৈঠকে রাজ্যের বঞ্চনা নিয়েও সরব হবেন বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পরে সেই সফর বাতিল করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে প্রথমে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর বদলে ওই বৈঠকে যোগ দেবেন অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বা মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বিকল্প হিসাবে অর্থ সচিব মনোজ পন্থের নামও পাঠানো হয়েছিল। অর্থাৎ মোট তিনজনের নাম পাঠানো হয় রাজ্যের তরফে। কিন্তু কেন্দ্রের তরফে তিনজনের নামেই আপত্তি জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে অর্থ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, “রাজ্যের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর বিকল্প হিসাবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমার নামও ছিল। কিন্তু ওরা জানিয়েছে, যেহেতু শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নীতি আয়োগের সদস্য, তাই এই বৈঠকে অন্যদের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা আছে।”
নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বদলে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নীতি আয়োগের বৈঠকে যাবেন, তা এক প্রকার স্থির হয়ে  যায় । সেই মতো কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রতিনিধিদের নামও জানানো হয়। কিন্তু জবাবি চিঠিতে নাকি কেন্দ্রের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকলেই ‘ভাল’। কেন্দ্র যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে কাউকে চাইছে না, তা ওই চিঠিতেই স্পষ্ট হয়ে যায় বলে মনে করছে নবান্ন।
 
সম্প্রতি বাংলার প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা। একশো দিনের কাজের টাকা, আবাসের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে । এমনকী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দু’দিন ধরনাতেও বসেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নীতি আয়োগের বৈঠকে বাংলার তরফে কী কী  বিষয় তুলে ধরা হবে , সেদিকে নজর ছিল রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের। বর্তমানে পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিয়েছে তাতে এই বৈঠকে ঘিরে আবারও বিবাদের মেঘ ঘনিয়েছে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের। 
 
এদিকে আবার শুক্রবার, ২৬ মে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে কেজরীবাল জানিয়েছেন , নীতি আয়োগের বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন না। দিল্লির আমলাদের নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ এর কারণ বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, নীতি আয়োগের উদ্দেশ্য হল ভারতের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করা এবং সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো। কিন্তু, মোদি সরকারের আমলে গণতন্ত্র বিপন্ন ।

শুক্রবার সকালে পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের গ্রামীণ উন্নয়ন তহবিলের ৩,৬০০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই কেন্দ্রে বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ জানিয়ে, শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান। পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্র বলেন, “ বৈষম্যমূলক আচরণ করছে কেন্দ্র। তারই প্রতিবাদস্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী নীতি আয়োগের বৈঠকে যাবেন না।”