পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রায়দান স্থগিত রাখল আদালত

 কলকাতা, ১২ জুন – পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় সোমবার রায়দান স্থগিত রাখল উচ্চ আদালত। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমার সংক্ষিপ্ত সময়, কেন্দ্রীয়বাহিনীর নজরদারিতে ভোট করানোর দাবিতে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। শুভেন্দু এদিন নিজে প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত ছিলেন শুনানি শুনতে। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় পঞ্চায়েত সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাজ্যে আদালত। তবে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম, পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর পক্ষে বলেন। বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হলে ভাল হয়।

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ শুরু হয় পঞ্চায়েত মামলার শুনানি। মাঝে ৪৫ মিনিটের বিরতি ছাড়া বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির এজলাসে। শুনানির প্রথম দফায় শুরু থেকেই আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলাকারী বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুপুর আড়াইটে নাগাদ তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে বের হওয়ার সময় জানান, হাই কোর্ট তাঁর ভূমিকাকে যেভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাতে তিনি খুশি।  তিনি আরও জানান, সুষ্ঠুভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্পন্ন করতে আদালতের নির্দেশের দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন । শুনানির প্রথম দফায় মনোননয়নের সময় বাড়ানো এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন পিছোনোর পক্ষে বলেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি তাঁর পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করালেই ভাল। শুনানির দ্বিতীয় দফায় মামলাকারীরা সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ভোট করানো নিয়ে বক্তব্য জানান প্রধান বিচারপতিকে। প্রধান বিচারপতিও কমিশনকে এ ব্যাপারে নিজের পর্যবেক্ষণ জানান। অবশেষে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ শুনানি শেষ হলে বিচারপতি রায়দান স্থগিত রাখেন।  

পঞ্চায়েত মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর পক্ষে যায় আদালতের পর্যবেক্ষণ। সোমবার এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ বলে, ‘আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের কথা ভাবছি না। আমাদের চিন্তা ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে । তাঁরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেটাই আমাদের দেখার বিষয়।’ শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হনুমান জয়ন্তীর সময় হাই কোর্টের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছিল। এতে সাধারণ মানুষের মনোবল বেড়েছিল। সেই সময় রাজ্য সরকারকে সাহায্য করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশন প্রায় ১০টি জেলাকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে। প্রয়োজনে সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে। রাজ্য নিজের মতোই বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে। এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করুক কমিশন।’ 


পঞ্চায়েত মামলার দ্বিতীয় দফার শুনানিতে নির্বাচনে সিভিক ভলান্টিয়ার দের ভোটের কাজে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে মত দেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা চাই কোনও চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ার কোনও ভাবেই এই নির্বাচনে যেন অংশ না নেয়। এই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে তাঁদের বাদ রাখা হোক। কমিশন এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক।’’

এদিকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব আগেই দিয়েছিল হাইকোর্ট। নির্বাচন পিছিয়ে ১৪ জুলাই করার প্রস্তাবও সোমবার দেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। রাজ্যে এক দফায় ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের নতুন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। একইসঙ্গে ৯ থেকে ১৫ জুন মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ছুটির দিন থাকায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় আরও সীমিত। সেক্ষেত্রে আদালতের পর্যবেক্ষণ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াযা এই সময় যথেষ্ট নয়। এই আবহে মনোনয়ন জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ জুন করার প্রস্তাব দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে নির্বাচন ৮ জুলাইয়ের বদলে ১৪ জুলাই করানো হোক।