বিরোধের কাছে নতিস্বীকার, কুস্তি ফেডারেশন বাতিল ক্রীড়ামন্ত্রকের

Written by Sunita Das December 24, 2023 8:13 pm

নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের পর ‘কংগ্রেসের কোলে’ বসে থাকা প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে সরব ব্রিজভূষণ

হরিয়ানা, ২৪ ডিসেম্বর– গোটা কুস্তি ফেডারেশনই বাতিল করেছে কেন্দ্রে। সঙ্গে মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের সাগরেদ নামে পরিচিত সঞ্জয় সিং-য়ের কমিটি দ্বারা নির্দেশিত সমস্ত ঘোষণাই নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক । আর এর মাঝেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে ফের শিরোনামে ব্রিজভূষণ। ক্রীড়ামন্ত্রকের দাবি, কুস্তি ফেডারেশন সংবিধান না মেনে কাজ করছে। সে কারণেই সাসপেন্ড করা হল। তবে, পুরোপুরি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি।

এদিকে নবনির্বাচিত কুস্তি ফেডারেশন কিভাবে ব্রিজভূষণের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং নির্বাচিত হল তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক দানা বাধে। শুধু অভিযোগকারী কুস্তিবিদরা নয় একাধিক ক্রীড়াবিদরা এ নিয়ে মুখ খোলেন। আর এর পরেই চাপের মুখে শুধু  ফেডারেশনকেই সাসপেন্ডই নয় রবিবার জেপি নাড্ডা ডেকে পাঠালেন কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং-কে । দিল্লিতে দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা করে ফিরে  ব্রিজভূষণের দাবি, জেপি নাড্ডার সঙ্গে সাক্ষাতের পিছনে কুস্তির কোনও প্রসঙ্গ ছিল না। দলীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্রিজভূষণ।

এদিন ক্রীড়া মন্ত্রক, কুস্তি ফেডারেশনের নবনির্বাচিত প্যানেলকে সাসপেন্ড করার পর কুস্তি মহলে খুশির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সাক্ষী মালিকের বাবা জানিয়েছেন, তাঁরা খুশি। তবে, কুস্তি ফেডারেশনের মাথায় উপযুক্ত মানুষ বসলে, তবেই তাঁরা জয় বলে মনে করবেন।

অন্যদিকে, বৈঠকের পর ব্রিজভূষণ বলেন, “সঞ্জয় সিং আমার আত্মীয় নন। ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলি যাতে ফের শুরু করা যায়, তা নিশ্চিত করতেই তাড়াহুড়ো করে অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-২০ দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। টুর্নামেন্টটি আয়োজনের জন্য হাতে সময় খুব কম ছিল। তাই গোন্ডায় টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। আসলে, সময়মত এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না অন্য কোনও ফেডারেশনের।”

তাঁর আরও দাবি, ২১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নতুন সংস্থা নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকেই কুস্তির সঙ্গে তিনি সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কুস্তিগীরদের জন্য ১২ বছর ধরে কাজ করেছি। আমি ভাল কাজ করেছি কিনা তা সময়ই বলে দেবে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যা ঠিক করার তা ফেডারেশনের নির্বাচিত লোকজনই করবে।”

বৃহস্পতিবার নির্বাচিত হওয়ার পরেই জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-২০ স্তরের প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণা করেছিলেন নতুন সভাপতি সঞ্জয় সিং। কিন্তু সেই ঘোষণার আগে ফেডারেশনের কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি। এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যদেরও জানানো হয়নি। সেই ব্যাপারটাকে সামনে এনেই কমিটি ভেঙে দিয়েছে ক্রীড়ামন্ত্রক। যদিও ব্রিজভূষণের দাবি, “মনে হয় কুস্তি ফেডারেশনের হাতে সময় কম ছিল। সেইজন্য জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-২০ স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনও ভুল নেই।”

তবে অভিযোগকারী সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়াদের সম্পর্কে কুস্তিগিরদের সম্পর্কে প্রাক্তন সভাপতির দাবি,  ‘কংগ্রেসের কোলে’ বসে আছেন! এখন ওঁদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে আমি কি গলায় দড়ি দেব? আমাকে বলুন তো, শীর্ষস্থানীয় কুস্তিগিরেরা যদি এখনও প্রতিবাদ চালিয়ে যান আর সাক্ষী মালিক অবসর নিয়ে ফেলেন, তাতে আমি কী করতে পারি? তাঁরা মাসের পর মাস আমার উদ্দেশে কটূক্তি করছেন। এই অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে?’’

ঘটনাচক্রে, গত কালই সাক্ষীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধি বঢরা। কংগ্রেস নেত্রী বলেছিলেন, এক জন নারী হিসেবেই সাক্ষীর কাছে গিয়েছিলেন তিনি। সাক্ষী কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন, এমন জল্পনাও ছড়িয়ে পড়ে। লোকসভা ভোটে হরিয়ানা থেকে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে এক চ্যানেলকে সাক্ষী জানান, ভবিষ্যতে কী হবে, বলা যায় না। এখনই এই বিষয়ে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। কুস্তিগিরদের সমর্থনে যাঁরা আসবেন, তাঁরা সবাই স্বাগত। বিজেপির কেউ হলেও স্বাগত।

ব্রিজভূষণ প্রতিবাদীদের বিঁধলেও সাক্ষীর রাজ্য হরিয়ানার আরও এক কুস্তিগির আজ জানিয়েছেন, তিনিও পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেবেন সরকারকে। মূক-বধিরদের অলিম্পিক্সে তিনটি সোনাজয়ী বীরেন্দ্র সিংহ ‘গুঙ্গা পালোয়ান’ বলেও নিজের পরিচয় দেন। সেই নামেই তাঁর এক্স হ্যান্ডল। সেখানে নরেন্দ্র মোদিকে ট্যাগ করে বীরেন্দ্র লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, দেশের কন্যা ও আমার বোনেদের স্বার্থে আমিও পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দেব। বোন সাক্ষী মালিকের জন্য আমি গর্বিত।’ এই টুইটের সঙ্গে দেশের আরও দুই স্বনামধন্যকে জড়িয়ে নিয়েছেন বীরেন্দ্র। এক জন, ভারতরত্ন সচিন তেণ্ডুলকর। অন্য জন অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া, যিনি পদ্মশ্রী, খেলরত্নের পাশাপাশি সেনাবাহিনীরও দু’টি পদকে সম্মানিত। পোস্টে তাঁদের ট্যাগ করে বীরেন্দ্র লিখেছেন, ‘দেশের সবচেয়ে উঁচু স্তরের ক্রীড়াবিদদের অনুরোধ করছি, তাঁরাও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিন।’

মুখ খুলেছে হরিয়ানা সরকারও। তবে ঠিক সাক্ষীদের সমর্থনে নয়। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা শাসক জোটের শরিক দল জেজেপি-র নেতা দুষ্মন্ত চৌটালা বলেছেন, ‘‘আবেগ যেন সিদ্ধান্তকে চালিত না করে। ফেডারেশনের ভোট হয়েছে, তার ফল বেরিয়েছে। কিন্তু এত বড় পদক্ষেপ করা ঠিক নয়।’’