সরকারের বর্ষপূর্তিতে শিন্ডেকে বেকায়দায় ফেলে  ৫ মন্ত্রীকে বরখাস্তের ফতোয়া শাহের

Written by SNS June 12, 2023 4:45 pm

মুম্বই, ১২ জুন– বর্ষপূর্তির আগেই ঘোর অস্বস্তিতে পড়তে চলেছে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-বিজেপি জোট সরকার। আর মাত্র আঠারো দিনে বাকি এই বর্ষপূর্তির। আর তার আগেই ফড়ণবিশের সুপারিশ মেনে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত সপ্তাহে শিন্ডেকে দিল্লিতে ডেকে জানিয়ে দেন শিবসেনার পাঁচ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে। শাহের কথায় শিন্ডে পড়েছেন মহা বিপাকে। যে পাঁচ মন্ত্রীকে বিজেপি সরাতে চায় তাঁদের তিনজন শিন্ডেকে গত বছর উদ্ধবের হাত ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে যেতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও সাহস জুগিয়েছিলেন। বাকিদেরও শিন্ডের শিবিরে ডেকে আনার কাজটা তাঁরাই করেন।

এরপর মহারাষ্ট্রে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্ডের কাছে মুখ্যমন্ত্রিত্ব এখন যেন কাঁটার মুকুট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই শুরু থেকে প্রচার, শিন্ডে নামেই মুখ্যমন্ত্রী, সরকারের চাবিকাঠি বিজেপি নেতা তথা উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিশের হাতে। তা যে নিছক বিরোধীদের অভিযোগ বা রাজনৈতিকমহলের ধারণা নয়, এই এক বছরে নানা ঘটনায় টেরে পেয়েছেন শিন্ডে। এবার সরকারের বর্ষপূর্তির মুখে ফড়ণবিশের এই পরিকল্পনায় উদ্ধব ঠাকরের অবস্থা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির’ মত দাঁড়িয়েছে।

যে পাঁচমন্ত্রীকে বিজেপি সরাতে চায় তারা হল- আবদুল সাত্তার, সন্দীপন ভুমরে, তানাজি সাওন্ত, গুলাবরাও পাতিল এবং সঞ্জয় রাঠোর। এদের সম্পর্কে বিজেপির অভিযোগ শুনে বিস্মিত শিন্ডে। পদ্ম শিবিরের দাবি, এই পাঁচ মন্ত্রী সরকারের গোপন খবরাখবর উদ্ধব শিবিরকে জানিয়ে দিচ্ছেন। শিন্ডে এই অভিযোগ মানতে না পারলেও শাহের মুখের উপর আপত্তি জানাননি।

আবার দিল্লির বৈঠকের পর দিন সাতেক কেটে গেলেও তিনি মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়টিও চেপে রেখেছেন। আশ্চর্যের হল, পাঁচ মন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম ফাঁস করেন উদ্ধব শিবিরের নেতা সঞ্জয় রাউত। শিন্ডে ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, এই পাঁচমন্ত্রী বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে তাঁর কাছে কোনও গোয়েন্দা রিপোর্ট নেই। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ রেখে গোয়েন্দারা কোনও রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেন না। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফড়ণবিশের কাছে এমন কোনও গোয়েন্দা রিপোর্ট থাকতে পারে না, যা মুখ্যমন্ত্রীর অজানা।

যা থেকে অনেকেই গোটা ঘটনার পিছনে বিজেপির চাল দেখতে পাচ্ছে। যে কারণে কংগ্রেস এবং এনসিপি শিবির চিন্তিত। ওই দুই দলই মনে করছে কৌশল বদলে বিজেপি এখন মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি বা কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব-বালাসাহেব)-এনসিপি জোটে ভাঙন ধরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের নয়া কৌশল হল কংগ্রেস ও এনসিপির বিধায়ক ভাঙিয়ে ২০২৪-র গোড়া পর্যন্ত সরকার টিকিয়ে রাখা। তারপর লোকসভার সঙ্গে বিধানসভার ভোট করিয়ে নেওয়া। পদ্ম শিবির মনে করছে, দুই নির্বাচন এক সঙ্গে করে নিলে রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা সহজ হবে। আগামী বছরের নভেম্বরে বিধানসভা ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করলে জয় অধরা থেকে যেতে পারে।

সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছেন শিন্ডে স্বয়ং। অমিত শাহের কথা মতো পাঁচ মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলে তাঁর পক্ষে দল টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এমনিতেই গোড়ায় তাঁকে বিদ্রোহে সঙ্গ দেওয়া ৪০ বিধায়কের সবাইকে মন্ত্রী করতে পারেননি। বিজেপির সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে গিয়ে কর্পোরেশন-সহ আধা সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান পদও চাহিদা মতো মেলেনি। তা নিয়ে বিধায়কদের অসন্তোষের অন্ত নেই। এই পরিস্থিতিতে পাঁচ মন্ত্রীকে বাদ দেওয়ার পরিণতি নিয়ে ভাবতে গিয়ে ঘুম ছুটেছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর।