যৌন হেনস্থার অভিযোগ এবার দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে!

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযােগ আনলেন এক মহিলা। সুপ্রিম কোর্টের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করা ওই মহিলা তাঁর অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ২২ জন বিচারপতির কাছে হলফনামা জমা দিয়েছেন।

Written by SNS New Delhi | April 21, 2019 7:34 am

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ (Photo:` IANS)

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযােগ আনলেন এক মহিলা। সুপ্রিম কোর্টের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করা ওই মহিলা তাঁর অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে ২২ জন বিচারপতির কাছে হলফনামা জমা দিয়েছেন। তবে এই অভিযােগ মিথ্যে বলে খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল। এই বিষয়ে শনিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে। এই মামলার রায় বিচারপতি অরুণ মিশ্র দেবেন বলে জানিয়েছেন রঞ্জন গগৈ। ২০ বছরের কেরিয়ারে তাঁকে এমন অভিযােগের মুখে পড়তে হবে তা কখনও ভাবেননি বলে আক্ষেপ করলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর পিওনের তাঁর থেকে বেশি সম্পত্তি রয়েছে বলে এদিন মনে করিয়ে দেন তিনি। বিচার বিভাগকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

‘মি টু’র জেরে তাবড় তাবড় ব্যক্তির মুখােশ প্রকাশ্যে এসেছে। এবার সেই অভিযােগ উঠল খােদ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযােগ এনেছেন তাঁর প্রাক্তন সহযােগী। প্রধান বিচারপতি তাঁর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযােগ নস্যাৎ করে বলেন, ‘বলির পাঠা বানানাে হচ্ছে দেশের বিচারব্যবস্থাকে।’ দেশের বিচার ব্যবস্থা বিপন্ন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শুক্রবার প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযােগ আনেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন এক মহিলা সহকর্মী।

এদিন শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এই অভিযােগ অবিশ্বাস্য। অভিযােগ অস্বীকার করতে গেলেও যতটা নীচে নামতে হয়, তার জন্য আমি প্রস্তুত নই’। যদিও এই মামলায় তিনি রায় দেবেন না। রায় দেবেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলে জানিয়েকে গগৈ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতিরা এই মামলা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন রঞ্জন গগৈ।

রবিবার আদালতে এসে তিনি তাঁর হাতে থাকা সব মামলা ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। ওই মহিলার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ঘুষ নেওয়ার অভিযােগ রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে দায়িত্বের সঙ্গে খবর পরিবেশন করতে অনুরােধ করেছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র। দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযােগ এনেছেন ওই মহিলা?

হলফনামায় তিনি অভিযােগ করেছেন, গত বছর অক্টোবরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার দিন কয়েক পরেই নিজের বাড়িতে তার শ্রীলতাহানি করেন রঞ্জন গগৈ। তার অভিযােগ, আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন তিনি। সারা শরীর স্পর্শ করেন এবং নিজের শরীর দিয়ে আমার ওপর চাপ দিতে থাকেন। জোর করে ঠেলে রঞ্জন’কে সরিয়ে দেন বলে অভিযােগ করেছেন ওই মহিলা। এরপর মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বিভাগে তিনবার বদলি করা হয় বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা। শুধু তাই নয়, দিল্লি পুলিশের কাজ করা তার স্বামী ও দেওরও এরপর চাকরি হারান বলে জানিয়েছেন তিনি।

এখানেই শেষ নয়, তার আরও অভিযােগ, এই বছর মার্চ মাসে হরিয়ানার বাসিন্দা নবীন কুমার নামে এক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযােগ দায়ের করেন। শুধুমাত্র তাকে ও তার পরিবারকে ভয় দেখানাের জন্য এই অভিযােগ আনা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। নবীন কুমারের নামে থানায় অভিযােগ জানাতে গেলে রাজস্থানের পুলিশ স্টেশনে তার পায়ে হাতকড়া পরিয়ে সারারাত বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযােগ। তাকে একদিনের জন্য তিহার জেলেও পাঠানাে হয়। পরের দিন অবশ্য তিনি জামিন পেয়ে যান।

এই অভিযােগ পুরােপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল। ওই মহিলা আরও ৫-৬ জনের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে কাজ করতে গেলেও তার সঙ্গে রঞ্জন গগৈ-এর কখনও কথা হয়নি বলে দাবি করেছেন সেক্রেটারি জেনারেল। ওই মহিলার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ঘুষ নেওয়ার অভিযােগ রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে শুনানি করার জন্য প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে স্পেশ্যাল বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। শীর্য আদালতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন শীর্ষ আদালতের সংশ্লিষ্ট অফিসার প্রধান বিচারপতি গগৈ-এর বিরুদ্ধে এক মহিলা অফিসার যৌন হেনস্তার অভিযােগ করেছিলেন, তা নিয়ে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ স্পেশ্যাল শুনানি হয়।

সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেল সঞ্জীব সুধাকর কালগাওকর বলেন, ওই মহিলা যে সমস্ত অভিযােগ তুলেছেন, তা অসাধু ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, কোনও সন্দেহ নেই যে, ওই মহিলা যে অভিযােগ তুলেছেন পুরােটাই অসাধু। মহিলার তােলা অভিযােগের শুনানি করা হয়। ওই মহিলার চিঠি একাধিক বিচারপতি গ্রহণ করেছেন।