বাঁকুড়ার সত্যপীরের পূজা

সত্যনারায়ণ বা সত্যপীর বাংলার হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এক জনপ্রিয় লৌকিক দেবতা৷ বাঁকুড়া জেলাতে সত্যনারায়ণের গান করে থাকেন প্রধানত বাউড়িরা৷ এবারের পর্বে তিনটে গ্রামের সত্যনারায়ণ গান নিয়ে আলোচনা করেছেন সুখেন্দু হীরা৷

পর্ব – ২

শুধু বঙ্গদেশেই নয় বৃহৎবঙ্গে অর্থাৎ বিহার, উডি়ষ্যাতে সত্যনারায়ণ পূজা হয়৷ পাঞ্জাবের জলন্ধর ও দাক্ষিণাত্যের মহীশূর অঞ্চলে এর পূজা হতে দেখা যায়৷ মহাভারতে সত্যবিনায়ক এবং স্কন্দপুরাণের রেবাখণ্ডে সত্যনারায়ণ দেবতার উল্লেখ আছে৷ অনেকে মনে করেন এখান থেকে সত্যনারায়ণ ঠাকুরের বাংলার আবির্ভাব৷ বাংলায় নাথ যোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্যদেব বলে এক উপাস্য দেবতা আছে৷ সেখান থেকেও সত্যনারায়ণ আসতে পারেন৷ যাই হোক না কেন, সত্যনারায়ণ বা সত্যপীর বাংলার হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এক জনপ্রিয় লৌকিক দেবতা৷


অন্যান্য ঠাকুরের আলাদা করে থান বা মন্দির থাকলেও বাঁকুড়া জেলায় সত্যনারায়ণের সার্বজনীন থান দেখা যায় না৷ থান সাধারণত হয় সর্বসাধারণের৷ বাঁকুড়া জেলায় সত্যনারায়ণের থানগুলি সব প্রায় পারিবারিক৷ বর্তমানে ভক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মন্দির তৈরি হয়েছে৷ সেগুলোও পারিবারিক৷ তবে বর্তমানে অনেক জায়গায় মূল পূজার দায়িত্ব কোনও নির্দিষ্ট পরিবারের হাতে থাকলেও, সেই সত্যনারায়ণ ঠাকুরকে ঘিরে উৎসব, মেলা চলে গেছে গ্রাম ষোলআনার কাছে৷ যেমন বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার সিয়ারবাইদ গ্রামে মণ্ডল পরিবারে পৈত্রিক সত্যনারায়ণ ঠাকুর আছে৷ এখানে বার্ষিক উৎসব পাঁচই কার্তিক৷ তখন মেলা বসে৷ এই উৎসব ও মেলা আয়োজনের জন্য একটি পঞ্চগ্রামী কমিটি আছে৷

বাঁকুড়া জেলাতে সত্যনারায়ণের পূজা ও গান সাধারণত করে থাকে বাউড়িরা৷ ব্যতিক্রম শুধু সিয়ারবাইদ গ্রামে মণ্ডলরা৷ জাতিতে তারা গোয়ালা৷ গোয়ালা বা ঘোষদের কাহিনী পালাগানগুলিতে যথেষ্ট উল্লেখ আছে৷ বর্তমান গায়কদের পূর্বপুরুষরা ঘোষদের বা গোয়ালাদের বাডি়তে গরু চরাতেন৷ বাঁকুড়া জেলায় গোয়ালা বা ঘোষদের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো৷ তাই তারই ছাপ ‘সত্যনারায়ণ গান’-এর মধ্যে পডে়ছে৷ তাছাড়া গরুর সুস্থতা কামনা করে সত্যনারায়ণ ব্রত বা পূজা করা হতো৷ তাই গোয়ালারা সত্যনারায়ণকে ভালোমতোই মানতেন৷

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার সব জায়গার সত্যনারায়ণ গানের গায়কেরা বলেন, তাঁদের এই গান তারা স্বয়ং সত্যনারায়ণের কাছ থেকে পাওয়া৷ এই গান কোনও বইতে লেখা নেই৷ কিন্ত্ত সত্যনারায়ণ পালাগুলি, সব জায়গাতেই প্রায় একই রকম কাহিনী৷ মুক্তাকব্বর, সাধুজামাল, লালচাঁদ চুরি, হেরেমশা বাদশা, শঙ্কর সদাগরের গল্প৷ স্থান বিশেষ সামান্য কিছু ব্যতিক্রম আছে৷ সব জায়গার কাহিনী সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো৷ যাতে ব্যতিক্রমগুলো আমাদের চোখে পডে়৷ সেই সঙ্গে লৌকিক কাহিনীর ব্যপকতা নিয়েও আমরা আন্দাজ পাব৷

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যিনি গান পেয়েছেন তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন৷ যখন বাডি়তে শ্রাদ্ধ শান্তির উদ্যোগ হতো তখন তিনি সত্যনারায়ণ নিয়ে ফিরতেন৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে জলাশয়ের জলের মধ্যে সত্যনারায়ণকে খুঁজে পেয়েছেন গায়ক৷ পরবর্তীকালে গায়করাও স্বপ্নাদেশ পেয়ে গান শুরু করেছেন৷
এবারের পূর্বে তিনটে গ্রামের সত্যনারায়ণ গান নিয়ে আলোচনা৷ তার মধ্যে দুটি বিষদে আরেকটি সংক্ষেপে৷

কানসাড়া: কুস্তোড় গ্রাম পঞ্চায়েতে, মেজিয়া থানা:
কানসাড়া গ্রামে বর্তমানে সত্যনারায়ণের গান করেন স্বপন বায়েন৷ এই সত্যনারায়ণ গান করা বংশ পরম্পরায় সাত পুরুষ ধরে চলছে৷ সাত পুরুষ আগে প্রথম এই গান পেয়েছিলেন লোককডি় দাস৷ আগে এই বংশের পদবী ছিল দাস৷ জাতিতে বাউডি়৷

দাস থেকে বায়েন কী ভাবে হল, তার একটি কাহিনী আছে৷ লোককডি় দাসের পুত্র হীরু দাস খোল বাজাতে পারতেন৷ একবার গ্রামে এক কীর্তন দল এসেছিল৷ তাদের দলে বায়েন আসেননি৷ সবাই হীরুকে অনুরোধ করে বাজানোর জন্য৷ হীরু ঠিক মতো সঙ্গত দিতে পারেনি৷ তখন হীরুকে আসর থেকে বার করে দেওয়া হয়৷ হীরু মনের দুঃখে গ্রামের বাইরে গাছ তলায় গিয়ে কাঁদতে থাকে৷ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পডে়৷ তখন মা সরস্বতী দেখা দিয়ে বলেন, “যা ফিরে গিয়ে আবার বাজা, সুন্দর বাজাতে পারবি৷ আরও বর দিচ্ছি, তোদের বংশে কেউ না কেউ খোল ধরতে পারবে৷ এর জন্য তাঁর কোনও শিক্ষার দরকার পড়বে না৷”
সেই থেকে বংশে একজন করে খোল বাজানো ধরে৷ যেমন বর্তমান দলে রাজেশ বায়েন খোল বাজায়৷ ফিরে এসে হীরু মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাজায়৷ গ্রামের জমিদার খুশি হয়ে তাদের উপাধি দেন ‘বায়েন’৷ সেই থেকে তাঁরা বায়েন পদবী ব্যবহার করা শুরু করে৷

স্বপনবাবু বললেন তাঁদের এই গান কোনও বইতে নেই, এ গান স্বয়ং সত্যনারায়ণের কাছ থেকে পাওয়া৷ এই গান পাওয়ার একটি কাহিনী আছে৷ কাহিনীটা হল–
তখন ছিল অভাবের দিন৷ লোককডি় দাসকে পাবড়া গ্রামের জঙ্গলে যেতে হত ‘লাহা’ অর্থাৎ লাক্ষা সংগ্রহ করতে৷ পলাশ গাছ থেকে লাক্ষা পাওয়া যায়৷ একবার সাতদিন ভাত জোটেনি, এমন একদিন লোককডি় গেছেন পাবড়া পাহাডে় লাহা সংগ্রহ করতে৷ পাবড়া পাহাডে়র নিচে পলাশ তলায় লোককডি় দেখেন এক ব্রাহ্মণ সোনার খড়ম পরে বসে আছেন৷ সেই ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করেন, “লোককডি় কোথায় যাবি? তামাক খাবি আয়!”

লোককডি় হুকো সাজিয়ে দেখেন আগুন নেই৷ ব্রাহ্মণ বলেন, “যা পাবড়া পাহাডে় কলকে সাজানো আছে৷” লোককডি় কলকে নিয়ে এসে হুকোতে আগুন দেয়৷ হুকোতে টান দেওয়া মাত্র সারা দেহ অবশ হয়ে যায়৷ তারপর ওই ব্রাহ্মণ লোককডি়কে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়৷ ন’দিন বাদে লোককডি় বলেন “আমি বাডি় যাবো৷” তখন ব্রাহ্মণ বলে, “ঠিক আছে, এই ‘সত্যনারায়ণ’ বাডি় নিয়ে যা, পুজো করবি, কোনও অভাব থাকবে না৷”

এই বলে হাতে একটি লৌহদণ্ডের মতো জিনিস দেয়৷ তাতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম আঁকা আছে৷ মা অনেকটা সিঁধকাঠির মতো দেখতে৷ সে যুগে চোরেদের সিঁধকাঠি চুরি হত৷ লোককডি় বলেন, “এ আমি বাডি়তে নিয়ে গেলে লোকে বলবে, আমি সিঁধকাটি চুরি করে নিয়ে এসেছি”৷

তখন ব্রাহ্মণ বলে, ঠিক আছে আমি এটাকে মুডে় দিচ্ছি৷ কিন্ত্ত কখনও এটা খোলা চলবে না”৷ সেই থেকে লালশালু মোড়া অবস্থায় আছে৷ বছরে একদিন শালু পাল্টানো হলেও আসল মূর্তিটি দেখা যায় না৷
লোককডি় জিজ্ঞাসা করে, “ঠাকুর সে না হয় নিয়ে গেলাম, কিন্ত্ত আমার চলবে কি করে?”

তখন ব্রাহ্মণ বললেন –
“পলাশ তলের কথা কিঞ্চিৎ রেখো মনে৷
রাঙাপায়ের সোনার খড়ম সদা জাগে মনে৷৷
তখনই বলেছিলেন প্রভু চাঁদ মুখের বাণী৷
আসরে দাঁড়াবি তুই মূলে গাইবো আমি৷৷
আর তখন লোককডি়র বুঝতে অসুবিধা হয় না, ব্রাহ্মণ স্বয়ং সত্যনারায়ণ এবং তাঁকে সত্যনারায়ণের গান করার আদেশ দিচ্ছেন৷

এদিকে লোককড়ির ন’দিন ধরে খোঁজ নেই৷ বাডি়র লোক ধরে নিয়েছে পাবড়ার জঙ্গলে বাঘ ভাল্লুকে লোককড়িকে খেয়েছে৷ ন’দিনের দিন কামান করে দশ দিনের দিন ঘাট কাজের উদ্যোগ নিয়েছে বাডি়র লোক৷ এমন সময় দেখে লোককড়ি আসছেন কাঁধে কোনও একটা বস্তু চাপিয়ে৷ লোককড়ি বাডি়তে এসে সব কথা খুলে বলে৷ তারপর থেকে সত্যনারায়ণের নিত্য পূজা শুরু৷ সকালে পূজা, সন্ধ্যায় আরতি৷
সত্যনারায়ণের বার্ষিক অনুষ্ঠান বুদ্ধ পূর্ণিমায়৷ এদিন পূজা পার্বণ হয়৷ যজমানরা আসেন৷ যারা মানত করেছিলেন, তাঁরা মানসিক শোধ করতে আসেন৷ প্রসাদ বিলি হয় চিড়ে, মুডি়৷ এখন বায়েন বাডি়তে সত্যনারায়ণের আলাদা মন্দির আছে৷

সেই থেকে শুধু পূজা নয়, নারায়ণ গানও শুরু৷ লোককড়ির পর তার মেজো ছেলে হীরু বায়েন গানের আদেশ পান৷ হীরুর পর হীরুর মেজোপুত্র ঈশান৷ তারপর দেবু, তারপর সীতারাম বায়েন৷ সীতারামের পর স্বপন৷ এরা প্রত্যেকে মেজো পুত্র৷ বংশপরায়ণ অনুসারে মেজোপুত্রই সত্যনারায়ণের স্বপ্নাদেশ পান৷ যেমন স্বপন বাবু ২০-২২ বছর বয়সে স্বপ্নাদেশ পান৷ তার আগে সীতারাম বায়েন মারা যান৷ কিছুদিন গান বন্ধ ছিল৷ স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর স্বপন বাইন গান শুরু করেন৷ স্বপন বাবুর এখন (২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ) বয়স পঞ্চান্ন বছর৷

স্বপন বাবুর দলে মোট সাতজন আছেন৷ একজন হারমোনিয়াম বাজান, একজন অর্গান, একজন শ্রীখোল, একজন মৃদঙ্গ, দুজন কর্তাল৷ এই দুজন দুয়ারির কাজ করেন৷ আর একজন ঠাকুর বয়ে নিয়ে যান এবং পূজা অর্চনা করেন৷ স্বপনবাবু মূল গায়েন৷ তিনি ১২ বছর বয়স থেকে দুয়ারির কাজ করতেন৷ এখন গান করতে যান ঝাড়খণ্ড, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলাতো আছেই৷
স্বপনবাবু এখন চারটি পালা করেন৷ সময় লাগে প্রায় তিন চার ঘন্টা৷ চারটি পালা হল – মুক্তাকব্বর, সাধুজামাল, হেরেম’শা বাদশা ও লক্ষীর বনবাস৷

মুক্তাকব্বর পালা: সিন্ধুক নগরের রাজা বিক্রম সদাগর এবং তাঁর সাত স্ত্রী৷ তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না৷ ছোটো রানির নাম গুঞ্জরাদেবী৷ নারায়ণের কৃপায় ছোটো রানি সন্তান সম্ভবা হন৷ মুক্তা ও কব্বর নামে কন্যা ও পুত্র জন্মায়৷ বড় ছয় রানি তাঁদের জলে ভাসিয়ে ছোটোরানির পাশে কুকুর ছানা রেখে দেয়৷ রাজা রানির সারমেয় সন্তান হয়েছে দেখে ছোটো রানিকে ঘোড়াশালের দাসী করে দেন৷ মুক্তাকব্বর আকন বনে বেডে় ওঠে নারায়ণের ছত্রছায়ায়৷

একটু বড় হয়ে মুক্তাকব্বর সিন্ধুক নগরে গান শোনাতে আসে৷ ছয় রানি তাঁদের চিনতে পেয়ে বিষপান করিয়ে মেরে ফেলে৷ রাজা দুই শিশুর মৃতদেহ দেখে বলেন, আমার সন্তান হয়নি, এই দুই শিশু আমার সামনে চিতায় উঠলে আমিও সেই সঙ্গে চিতায় উঠব৷ তখন নারায়ণ জ্যোতিষী রূপে রাজার কাছে এসে গণনা করে বলেন, এদের যদি মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো যায় তবে, তাঁরা বেঁচে উঠবে৷ রাজা সেই মতো রাজ্যে ঢ্যারা পিটিয়ে দেন সব মহিলাদের এই দুই শিশুকে দুগ্ধ পান করাতে হবে৷ ঘোড়াশালের দাসীর দুধে বেঁচে ওঠে মুক্তাকব্বর৷ তারপর রাজা-রানী ও রাজকন্যা-রাজপুত্র মুক্তাকব্বরের মিলনের মধ্যে দিয়ে মধুরেন সমাপয়েৎ৷

সাধুজামাল পালা: কলিঙ্গ শহরের মানিক সদাগর ও মহীচম্পারানির পুত্র সাধুজামালের কাহিনী৷ তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না৷ সেই দুঃখে তাঁরা আত্মহত্যা করতে গেলে নারায়ণ সাধু বেশে দেখা দিয়ে দান-ধ্যান করতে বলেন৷ দান করার সময় ফকির বেশে নারায়ণ আসেন৷ তখন নারায়ণ বলেন সোয়া লাখ টাকার সিন্নি এবং প্রথম ফল দিলে তাদের সন্তান হবে৷ মহীচম্পারানি তাই মানত করেন৷ কিন্ত্ত সন্তান হওয়ার পর চম্পারানি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান৷ বরঞ্চ ১১ বছর বয়সে সাধুজামালের বিবাহ দিয়ে দেন রসবা চিত্রবালার সঙ্গে৷ তখন নারায়ণের আসন টলে যায়৷ মা সিদ্ধিকা জানান আসন টলার কারণ৷ তখন নারায়ণ আবার ফকিরের ছদ্মবেশে চিত্রবালাকে তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করাতে আসেন৷ তাও রানি রাজি হন না সাধু জামালকে দিতে৷ অবশেষে সাধুজামাল জানতে পেয়ে মাতৃ রক্ষার জন্য ফকিরের সঙ্গে যাত্রা করেন ফকিরের মোট বহন করার জন্য৷

ছ মাস ছ দিন পর সাধুজামাল কাউকে না হারিয়ে চিত্রবালার সঙ্গে দেখা করে যায়৷ চিত্রবালার সদর দরজা খোলা দেখে চম্পারানি রসবাকে কলঙ্কিনী আখ্যা দিয়ে ঘর থেকে বার করে দেয়৷ রসবা চিত্রবালা কুঁডে়ঘর করে থাকতে থাকে নামো শহরে৷ সেখানে চিত্রবালার লালচাঁদ নামে এক পুত্রের জন্ম হয়৷ সেখানের রাজা ছিলেন আঁটকুড়ো৷ তিনি দেখেন ধাইমার গলায় মুক্তাহার৷ জিজ্ঞাসা করাতে ধাইমা জানায় এক দুঃখিনির ছেলে হয়েছে, যার চোখের জলে মুক্তা ঝরে৷ সেই মুক্তা দিয়ে মালা গেঁথেছি৷ এই শুনে রাজা জগাই মাধাইকে দিয়ে চুরি করেন লালচাঁদকে৷

লালচাঁদ একটু বড় হয়ে পাঠশালায় যায়৷ তাকে দেখে রসবা কাঁদতে থাকে৷ লালচাঁদ বাডি়তে জিজ্ঞাসা করলে রাজা বলেন, ওই মহিলা পাগলী৷ লালচাঁদের সেই উত্তর বিশ্বাস হয় না৷ একদিন সে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে রসবাকে৷ রসবা সত্য ঘটনা জানায়৷ তখন লালচাঁদ বলে, “আমাকে ১১ বছর বয়সে রাজা করে দেবে, তখন তোমার কথার আমি বিচার করব৷”

১১ বছর বয়সে রাজা হয়ে লালচাঁদ বিচার সভা বসায়৷ রামায়ণ-মহাভারত ছুঁয়ে জগাই-মাধাই -এর কাছে সত্য ঘটনা জানতে চায়৷ তাঁরা মিথ্যা বললে তাঁদের মুখে রক্ত উঠে মারা যায়৷ এই দেখে ধাইমা রামায়ণ-মহাভারত ছুঁয়ে সত্যঘটনা বলে৷ লালচাঁদ মায়ের কাছে ফিরে আসে৷

এদিকে ১২ বছরের মোট বওয়া সেরে সাধুজামাল দেশে ফেরে৷ তখন লালচাঁদ সমুদ্র স্নান করতে গিয়েছিল৷ সেখানে পিতা পুত্রের দেখা হয়৷ তারপর সাধু জামালের সঙ্গে চিত্রবালার মিলন হয়৷ তাঁরা সবাই কলিঙ্গ শহরে ফেরে৷

হেরেম শাহ বাদশা পালা: করিম শাহ বাদশা ও রানি পদ্মাবতীর পুত্র হেরেম শাহ বাদশা৷ করিমশা বাদশাও অপুত্রক ছিলেন৷ তাই সস্ত্রীক জঙ্গলে আত্মহত্যা করতে যায়৷ তখন নারায়ণ ব্রাহ্মণবেশে দেখা দিয়ে বিল্বপত্র দেন৷ সেই বিল্বপত্র খেয়ে তাঁদের পুত্র হয়, নাম হেরেম শাহ বাদশা৷ বিধাতা যখন তাঁর ললাট লিখন লিখতে আসেন, তখন তা দেখে নেন ধাইমা৷ তিনি জানতে পারেন হেরেমশার ১৬ বছরে পদার্পণ করলে বজ্রঘাতে মৃতু্য হবে৷ এটা জানার পর হেরেমশা জঙ্গলে চলে যায়৷ সেখানে এক আশ্রমে সেবাকার্যকরতে থাকেন৷ প্রধানত তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতেন৷ সেখানে ষাট হাজার মুনি থাকতেন৷ তাঁরা খুশি হয়ে হেরেমশাকে শত বৎসর আয়ু দান করেন৷

তখন বিধাতা পডে়ন বিপাকে৷ তিনি তেত্রিশ কোটি দেবতার শরণাপন্ন হন৷ তেত্রিশ কোটি দেবতারা সেই আশ্রমে হাজির হন৷ তাঁরা বলেন এরকম হলে দেবতাদের কেউ মানবে না৷ মুনিরা বলেন যদি হেরেমশা ১৬ বছর বয়সে মারা যায়, তাহলে মুনি ঋষিদের কেউ পুছবে না৷ তখন নারায়ণ সিদ্ধান্ত নেন বজ্রঘাতে হেরেমশার মৃতু্য হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি কোলে তুলে নেবেন, তখন আবার হেরেমশা প্রাণ ফিরে পাবেন৷

লক্ষ্মীর বনবাস পালা: লক্ষ্মীর বনবাসের কাহিনী থুমপাথরের হরেন বাউড়ির গানের কাঞ্চনী পালার মতো৷ পশ্চিমনগরে শঙ্কর সদাগর বলে এক বনিক ছিলেন৷ তাঁর সাতপুত্র৷ ছোটোপুত্র জয়রামের স্ত্রী লক্ষ্মী৷ যার অপর নাম কাঞ্চনী৷ সত্যনারায়ণ ফকিরের বেশে সত্যনারায়ণ পূজার জন্য গুডে়র পিঠে তৈরি করার জন্য গুড় চাইতে যান শংকর সদাগরের কাছে৷ তিনি না দিয়ে ফকিরকে তাডি়য়ে দেয়৷ তখন লক্ষ্মী ফকিরকে গুড় দেয় শশুরকে না জানিয়ে৷ শ্বশুর শঙ্কর সদাগর তা জানতে পেরে লক্ষ্মীকে বনবাসে পাঠান৷
লক্ষ্মী জঙ্গলে গিয়ে সত্যনারায়ণের কৃপায় কাঞ্চন নগর তৈরি করেন৷ এদিকে পশ্চিমনগরের শ্বশুর-স্বামীর ঘর পুডে় যায়৷ তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে পথের ভিখারি হয়ে যায়৷ এদিকে কাঞ্চননগরে ঢ্যারা পেটানো হয় দরিদ্র নারায়নের সেবা করা হবে বলে৷ সেখানে শঙ্কর ও জয়রাম গিয়ে হাজির হয়৷ লক্ষ্মী শ্বশুর ও স্বামীকে চিনতে পারে৷ কিন্ত্ত স্বামী বলে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে সতীত্ব যাচাই করতে৷ সর্বস্বান্ত হয়েও পুরুষ নারীর সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাডে়ন না! লক্ষ্মীকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে স্বামীকে পেতে হয়৷ তারপর সকলে কাঞ্চননগরে বসবাস করতে থাকে৷

বৃন্দাবনপুর বড়শাল: বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েত, গঙ্গাজলঘাটি থানা
বৃন্দাবনপুর বড়শাল গ্রামটিকে অনেকে তেলি বরিশাল গ্রাম বলে চেনে৷ এই গ্রামে একটি সত্যনারায়ণ মন্দির আছে৷ এই মন্দিরের দিয়াসি বা পূজারী হলেন বাউডি়রা৷ তাঁদের পূর্বপুরুষরা ঠাকুর পেয়েছিলেন, সঙ্গে সত্যনারায়ণের গান৷ গান ও ঠাকুর পেয়েছিলেন বিশু বাউডি়৷ বর্তমানে মূল গায়ক অরুণ বাউডি়৷ অরুণবাবু বিশু বাউডি়র ষষ্ঠ পুরুষ৷ বিশু বাউডি়র পর গানের উত্তরাধিকার পান ফকির বাউডি়৷ ফকির বাউরির পর রাখাল বাউডি়৷ রাখালের গান পান সখা বাউডি়৷ রাখালের তিন ছেলে সখা, দেবু ও সতু৷ সখার পর গান সুধীর বাউডি়৷ সুধীর বাউডি় ছিলেন সতু বাউডি়র পুত্র৷ আর সুধীর বাবুর ছেলে অরুণ বাউডি়৷

বিশু বাউডি় বড়শাল এলাকায় কোন একটি পুকুরে স্নান করতে গিয়ে নারায়ণকে পেয়েছিলেন৷ নারায়ণের মূর্তি এখানে লম্বা মত একটা জিনিস, কিসের তৈরি কেউ বলতে পারলেন না৷ লালশালুতে মোড়া৷ শালু খুলে দেওয়া বারণ৷ তারপর সত্যনারায়ণকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ তখন মন্দিরে বাঁঘ আসতো সত্যনারায়ণকে পাহারা দিতে৷

সত্যনারায়ণ মন্দিরে নিত্য পূজা হয়৷ সকালে পূজা করেন বাউডি় পরিবারের পুরুষেরা, সন্ধ্যায় মেয়েরা সন্ধ্যায় দেখায়৷ সত্যনারায়ণের বিশেষ পূজা জন্মাষ্টমীর দিন৷ সেদিন পূজা-পাঁজি হয়৷ যজমানরা আসেন৷ যাদের মনস্কামনা পূর্ণ হয়, তাঁরা মানসিক শোধ করতে আসেন৷ প্রসাদ হিসেবে থাকে শিরনি৷ এছাড়া জৈষ্ঠ মাসে গ্রামে যখন মা চণ্ডীর গাজন হয়, তখন সত্যনারায়ণের বিশেষভাবে পূজা হয়৷

অরুণ বাউডি় জানালেন তাদের এই গান সত্যনারায়ণের কাছ থেকে পাওয়া৷ গান লিখিতভাবে কিছু নেই৷ গানের দলে সাতজন আছেন৷ একজন হারমোনিয়াম বাজায়৷ দুজন বাজায় কর্তাল, একজন খোল, অর্গান একজন, মুল গায়ক এক এবং আর একজন ঠাকুর বয়ে নিয়ে যায়৷ ঠাকুর সর্বত্র হেঁটে হেঁটে যায়৷ দুর্গাপুর, বেনাচিতি গেলেও ঠাকুরকে হেঁটে নিয়ে যেতে হয়৷ শুধু যদি গান করতে যান, তাহলে গাডি়তে যাওয়া চলে৷ বাঁকুড়া পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা গান গাইতে যান৷

যাদের মানত পূর্ণ হয়, তাঁরা বাডি়তে সত্যনারায়ণের গানের আসর বসায়৷ মানতগুলো থাকে প্রধানত চাকরি, বিবাহ, সন্তান কামনা, তারপর গরুর সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি৷ গানের মধ্যে সত্যপীর শব্দটি অনেকবার উল্লেখ করেন৷ হাতে চামর নিয়ে দাঁড়ালেই কন্ঠ থেকে আপনা আপনি গান বেরিয়ে আসে৷ গানের পালার সময় সীমা আড়াই থেকে তিন ঘন্টা৷
অরুণ বাবুরা বর্তমানে যে সত্যনারায়ণের গান করেন তাতে তিনটি পালা আছে; মুক্তা কবর, সাধু জামাল ও শংকর সদাগর৷

মুক্তাকব্বর পালা: সিন্ধুক নগরের বিক্রমমনি ও তাঁর সাত রানির বাস৷ কারোর কোনও সন্তান নেই৷ ছোটো রানি সত্যনারায়ণ পূজা দিয়ে মুক্তা নামে মেয়ে এবং কব্বর নামে ছেলে লাভ করেন৷ কিন্ত্ত অন্যান্য রানিরা চক্রান্ত করে তাঁদের যমুনার জলে ভাসিয়ে দেয়৷ ছোটো রানির পাশে কুকুর শাবক রেখে দেয়৷ তাই দেখে ছোটো রানিকে রাজা ত্যাগ করেন৷ ছোটো রানি ‘মা তারা’ মন্দিরে স্থান পায়৷ মুক্তাকব্বর বড় হয়ে সিন্ধুকনগরে গান গেয়ে ভিক্ষা করতে যায়৷ ছয় রানি চিনতে পেরে বিষ প্রয়োগ করে তাদের হত্যা করে৷ রাজ বৈদ্যের নিদানে ছোটো রানির দুধের ধারায় তাঁরা জীবন ফিরে পায়৷ বিক্রমমনি রাজা সন্তান লাভ করেন৷

সাধু জামাল পালা: কলিঙ্গ শহরের রাজা মানিক সদাগর ও রানি মুই চম্পারানি৷ তাঁরা সত্যনারায়ণের কাছে পাঁচ ছটাক সিন্নি মানত করে সাধুজামাল নামে পুত্র লাভ করে৷ কিন্ত্ত তাঁরা মানত শোধ না করে ছেলের বিয়ে দিয়ে দেয়৷ ঠাকুর তখন যোগীবরের ছদ্মবেশে চম্পারানির কাছে মানতের কথা মনে করিয়ে দিতে আসেন৷ কিন্ত্ত চম্পারানি পুরোপুরি বিস্মৃত হলে, শাস্তি স্বরূপ সাধুজামালকে ১২ বছর মোট বহন করার জন্য নিয়ে যায়৷

৬ দিন ৬ রাত পর সাধু জামাল তাঁর স্ত্রী রসবা চিত্রাবালার সঙ্গে দেখা করার জন্য ফিরে আসে৷ সাধু জামাল ফেরার পর সদর দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায় রসবা৷ পরদিন সকালে সদর দরজা খোলা দেখে চম্পারানি রসবাকে কুলটা আখ্যা দিয়ে গৃহ থেকে বিতাডি়ত করেন৷ চিত্রাবালা পথে পথে ভিক্ষা করতে থাকেন৷ তখন এক পাঠশালার শিক্ষক রসবাকে পাঠশালার পাশে কুঁডে়ঘর তৈরি করে থাকতে দেয়৷ কুঁডে়ঘর তৈরি করে দেয়, জগাই মাধাই৷ সেখানে রসবা পুত্র সন্তান প্রসব করে৷ পুত্র সন্তানের নাম দেওয়া হয় লালচাঁদ৷

সেখানকার রাজা ছিল অপুত্রক৷ তিনি জগাই মাধাই কে ভয় দেখিয়ে সেই শিশুসন্তানকে চুরি করিয়ে নিজের প্রাসাদে নিয়ে আসেন৷ লালচাঁদের অন্নপ্রাশন বা ভোজনের দিন রসবা তার পুত্রকে চিনতে পারে৷ কিন্ত্ত ছেলের কাছ পর্যন্ত যেতে পারেন না৷ লালচাঁদের যখন পাঁচ বছর বয়স হয় তখন সে পাঠশালায় যায়৷ লালচাঁদকে দেখে রসবা কাঁদতে থাকে৷ রসবা তাকে সব কথা জানায়৷

লালচাঁদ বাডি় ফিরে রাজাকে বলে দুঃখিনী মা এরকম কথা বলল কেন? রাজা বলেন তোর আর পাঠশালায় গিয়ে কাজ নেই৷ তারপর রাজসভায় এক অনুষ্ঠানে তামা, তুলসী, গীতা, ভাগবত সব ছিল৷ সেখানে গীতা ভাগবতের উপর হাত রেখে জগাই মাধাইকে সত্যি কথা বলতে বলে৷ জগাই মাধাই সত্যি কথা না বলার ফলে মুখে রক্ত উঠে মারা যায়৷ এই দৃশ্য দেখে ধাইমা সত্য কথা বলে৷ তখন লালচাঁদ মায়ের কাছে ফিরে আসে৷ মায়ের সঙ্গে কুঁডে়ঘরে থাকতে শুরু করে৷

এরমধ্যে বারোবছর অতিক্রান্ত হয়৷ সাধুজামাল ওই পথে কলিঙ্গ শহরে ফিরছিল৷ তখন দেখে একটি বালক যমুনা জলে স্নান করছে৷ বালক তাঁর পিতৃপরিচয় ও মাতৃপরিচয় দেয়৷ সাধুজামালের সঙ্গে স্ত্রী পুত্রের মিলন হয়৷ সবাই কলিঙ্গ শহরে ফিরে আসে৷

শংকর সদাগর পালা: শংকর সদাগর বাস করতেন উজ্জিনী নগরে৷ তিনি ছিলেন চরম নাস্তিক৷ তিনি কোনও দেবতাকে মানতেন না, দান ধ্যান করতেন না৷ শংকর সদাগরের সাতপুত্র৷ বড় ছেলের নাম জয়রাম৷ জয়রামের স্ত্রী কাঞ্চনী৷ জয়রাম বাণিজ্য করতে সপ্তডিঙ্গা নিয়ে বিদেশে যায়৷ শংকর সদাগর বাডি়তে কোনও পূজো না করলেও কুলবধূ কাঞ্চনী লুকিয়ে লুকিয়ে বিষ্ণুমূর্তি পূজা করতেন৷ জানতে পেরে শংকর সদাগর তাকে ঘর থেকে বার করে দেয়৷ কাঞ্চনী গিয়ে ওঠে ঠাকুর মন্দিরে৷

সত্যনারায়ণ ভক্তের প্রতি অবিচার দেখে ত্রেতা যুগের হনুমানকে স্মরণ করেন৷ হনুমান এসে শঙ্করের স্বর্ণমুদ্রার মড়াই লুট করে৷ ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ এদিকে জয়রামের সপ্তডিঙ্গা ডুবে যায়৷ তখন জয়রাম সত্যনারায়ণের কাছে খই-নাড়ু মানত করে৷ সপ্তডিঙ্গা আবার ভেসে ওঠে, জয়রাম তারপর ঘরে ফিরে আসার পথ ধরে তীরের কাছে এসে পৌঁছালে জয়রাম ভাবে মানত পরে শোধ করলেও হবে৷ দুই মন করার জন্য আবার তীরে এসে তরী ডুবে যায়৷ জয়রাম ভিক্ষা করে মানত শোধ করে৷ তারপর আবার তরী ভেসে ওঠে৷ কাঞ্চনীর সঙ্গে জয়রামের দেখা হয়৷ কাঞ্চনীকে নিয়ে জয়রাম শংকরের কাছে যায়৷ শংকরকে সব খুলে বলে৷ শংকর কাঞ্চনীকে মেনে নিতে চায় না৷ বলে কাঞ্চনীকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হবে৷

সতীত্বের পরীক্ষা হল তিনটি- ১) অগ্নিপরীক্ষা৷ ২) শতছিদ্র হাঁডি়তে পূর্ণ কলসি জল আনা৷ ৩) খরস্রোতা জল প্রবাহে সাঁতার কেটে পার হওয়া৷ তিনটি পরীক্ষাতে কাঞ্চনী উত্তীর্ণ হয়৷ কাঞ্চনীকে শংকর ঘরে ফিরিয়ে নেয় এবং সত্যনারায়ণের পূজা করতে সম্মত হয়৷ সত্যনারায়ণের কৃপায় শংকর সব ফিরে পায়৷