বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর বুথগুলিকে অগ্রাধিকার , কমিশনকে প্রস্তাব বিএসএফ আইজির 

কলকাতা, ৭ জুলাই – পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নতুন প্রস্তাব পাঠালেন বিএসএফের আইজি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর।    আইজি, বিএসএফ-এর প্রস্তাব, প্রতিটি বুথে হাফ সেকশন বাহিনী থাকতেই হবে। তার কম বাহিনী একটি বুথে থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ প্রতিটি বুথে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত বুথে নেই। ফলে বাহিনী নিয়োগের ক্ষেত্রে মূলত স্পর্শকাতর বুথের ওপরই জোর দেওয়া হবে বলে পরামর্শ দেন বিএসএফ আইজি।

হাই কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক , প্রতিটি বুথে  কেন্দ্রীয় বাহিনী  এবং রাজ্য পুলিশ সমান অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ একটি বুথে একজন রাজ্য পুলিশ কর্মী থাকলে, একজন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করতে হবে।  বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএসএফের আইজিকে। তিনিই কমিশনকে নতুন প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে না। বাহিনী মূলত স্পর্শকাতর ও উত্তেজনাপ্রবণ বুথে থাকবে।
ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে একটি এবং দু’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে হাফ সেকশন বাহিনী অর্থাৎ ৫ জন জওয়ান থাকতে হবে। এঁদের মধ্যে সক্রিয় থাকবেন চার জন।  তিনটি এবং চারটি বুথ থাকলে কমপক্ষে এক সেকশন বাহিনী অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ জন , এবং পাঁচ এবং ছ’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে দেড় সেকশন বাহিনী অর্থাৎ ১৫ থেকে ১৭ জন থাকতে হবে। সাতটি বা তার থেকে বেশি বুথ থাকলে কমপক্ষে দু’সেকশন বাহিনী অর্থাৎ ২০ থেকে জন মোতায়েন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ‘স্ট্রংরুম’ অর্থাৎ যেখানে ব্যালটবাক্স এবং ইভিএম রাখা হয় , সেখানে -এ ১ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এঁদের মধ্যে ৮০ জন সক্রিয় জওয়ান মোতায়েন থাকবেন।
একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর এবং আইজি বিএসএফ জানিয়েছেন, সংবেদনশীল বুথগুলিতে আগে বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। বুথগুলিতে মোতায়েন করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাজ্য পুলিশও। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পরই এই প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর এবং আইজি বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয়।
 আইজির নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে একটি এবং দু’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে হাফ সেকশন বাহিনী থাকতে হবে (৪-৫ জন)। তিনটি এবং চারটি বুথ থাকলে কমপক্ষে এক সেকশন বাহিনী (১০-১২ জন)। পাঁচ এবং ছ’টি বুথ থাকলে কমপক্ষে দেড় সেকশন বাহিনী (১৫-১৭ জন) এবং সাতটি বা তার থেকে বেশি বুথ থাকলে কমপক্ষে দু’সেকশন (২০-২২ জন) বাহিনী মোতায়েন করা হবে। স্ট্রং রুমের নিরাপত্তায় এক কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন থাকবে। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে সব বুথে পর্যাপ্ত পরিমাণ রাজ্য পুলিশও মোতায়েন করতে হবে।
কিন্তু বিএসএফের আইজির প্রস্তাবে হাই কোর্টের রায় মানা হচ্ছে কিনা, তাতে সংশয় থাকছে। কারণ এই নয়া ফর্মুলায় সব বুথে রাজ্য পুলিশ থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সব বুথে থাকছে না। বহু বুথেই ভোট করাতে হবে শুধু রাজ্য পুলিশের ভরসায়।
 
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে গোড়া থেকেই নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে । আদালতের নির্দেশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা রাজ্যের কোনও বুথেই একক ভাবে কাজ করতে প্রস্তুত নন । রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে জওয়ানদেরও যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে।  এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর। বিএসএফ, আইটিবিপি-সহ সব বাহিনীর কর্তারা জানিয়েছেন, কোনও জায়গায় এক সেকশনের কম বাহিনী থাকতে পারে না। হিংসা, বুথ দখলের আশঙ্কাও থাকছে। বৃহস্পতিবার রাতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর এবং আইজি বিএসএফ র সঙ্গে বৈঠক হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার। তার পরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এই নতুন প্রস্তাব রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সব ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করানো আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । শুধু তাই নয়, পাশাপাশি প্রতিটি বুথে মোতায়েন করতে হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক রাজ্য পুলিশ। আইজির প্রস্তাব মাফিক, সেক্ষেত্রে বহু বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখা সম্ভব হবে না , নির্ভর করতে হবে রাজ্য পুলিশের উপর।