পিক আপ ভ্যান চালকের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্যের শিখরে 

কলকাতা, ২৫ মে – উচ্চমাধ্যমিকে জয়জয়কার জেলার। জয়জয়কার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের। মিশনের সবথেকে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের নাম শুভ্রাংশু সর্দার, যিনি ৪৯৬ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থানে। বাবা পেশায় ভ্যানচালক, মা গৃহবধূ।  উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করতে শুধু মিশনের শিক্ষকদের সহায়তাই যথেষ্ট ছিল তাঁর কাছে। কোনও বিষয়ের জন্যই গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিতে হয়নি  শুভ্রাংশুকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল পেতে কতটা কষ্টস্বীকার করতে হয়েছে শুভ্রাংশুকে ? নিজের সাফল্যের চাবিকাঠি কি, জানালেন শুভ্রাংশু। 

শুভ্রাংশুর পরিবার মা ও বাবাকে নিয়ে। বাবা পিক আপ ভ্যান চালান, মা ঘর-সংসার সামলান। প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার মতো বিলাসিতা যেমন ছিল না , তেমনই  কোনওদিনই এ ব্যাপারে কোনও আগ্রহও ছিল না শুভ্রাংশুর। উচ্চমাধ্যমিকে ইকোনমিক্স, স্ট্যাটিসটিক্স, অঙ্ক ও কম্পিউটার সায়েন্স— এই চারটি বিষয় ছিল শুভ্রাংশুর।পাঠ্য পুস্তক খুব ভালো করে পড়তেন, তবে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে  বেশি ভালবাসেন অন্য বই পড়তে।  স্কুলের লাইব্রেরি তাঁর সব থেকে প্রিয় জায়গা , যেখানে সব থেকে বেশি সময় কাটিয়েছেন। শুভ্রাংশুর মা জানিয়েছেন, পুজোয় জামাকাপড়ের বদলে উপহার হিসাবে বই পছন্দ করেন শুভ্রাংশু।

শুভ্রাংশু জানান , ‘প্রথম হব এটা আশা করিনি। অবশ্যই রেজাল্ট দেখে খুশি হয়েছি। আমি সবসময় কতক্ষণ পড়ার চেয়ে কীভাবে পড়ব তার ওপরই বেশি জোর দিয়েছি। ৬টি বিষয় দিনে ৪ ঘণ্টা পড়তাম। কিন্তু যে সময়টুকু পড়তাম, সেই সময়টুকু পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতাম।’


সাফল্যের কৃতিত্ব দিতে চান নিজের স্কুলকে। তবে পড়াশুনোর ব্যাপারে প্রতিযোগিতা না থাকলে ভাল ফল করা যায় না বলে মনে করেন শুভ্রাংশু। নিজের রেজাল্টের কৃতিত্ব দিয়েছেন স্কুলের সমস্ত শিক্ষকদের। স্কুলের রুটিন মেনেই পড়াশুনো করতেন। ভবিষ্যতে অর্থনীতি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার ইচ্ছে রয়েছে। ভবিষ্যতে গবেষণার কাজও করতে চান অর্থনীতি নিয়ে। ছেলের ফল ভাল হবে, আশাবাদী ছিলেন শুভ্রাংশুর বাবা-মাও । 

বজবজের বাসিন্দা শুভ্রাংশুর পরিবার। পড়াশোনার পাশাপাশি শুভ্রাংশু ভালবাসেন বই পড়তে, গান গাইতে, ভাল সিনেমা দেখতে। বাড়িতে টিভি দেখতে দেখতে হয় ছবি আঁকেন, নয় অঙ্ক কষেন। খাবারের মধ্যে প্রিয় চাইনিজ় আর বিরিয়ানি।  নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের বন্ধুদের নিয়ে ‘জোনাকি’ নামে একটি ব্যান্ডও গড়ে তুলেছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর ‘বন্ধু তোমায় এ গান শোনাব বিকেলবেলায়’ গেয়ে শোনান । ছেলের ফল ভাল হবে, আশাবাদী ছিলেন শুভ্রাংশুর বাবা-মাও । এবার আরও বড় স্বপ্ন সফলের প্রয়াসে ফের লড়াই শুরু বাবা-মা-ছেলের।