শহরে প্রতারণার নতুন ফাঁদ যৌন কেলেঙ্কারি, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে গ্রেফতার দুই

কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর –  জালিয়াতদের নতুন হাতিয়ার এবার সেক্সটরশন অর্থাৎ যৌন কেলেঙ্কারি বা যৌনতা। জালিয়াত চক্রের এই নতুন ফাঁদে পা দিতে পারেন যে কেউ, এমনই নিখুঁত ভাবে সাজানো তাদের ছক। যৌন কেলেঙ্কারিতে মানুষকে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত করেছে জালিয়াতরা।এমনকি উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে আত্মহত‌্যার নাটকও সাজাচ্ছে জালিয়াতরা।  টাকা আদায় বা ব্ল‌্যাকমেল করতে জাল করা হচ্ছে ডেথ সার্টিফিকেটের মতো হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ নথি। সম্প্রতি কলকাতায় একটি সেক্সটরশন সংক্রান্ত ঘটনার তদন্তে নেমে এই চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য হাতে পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে দুই জালিয়াতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  গ্রেফতারির পর নতুন তথ‌্য হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। কীভাবে তারা ওই জাল নথিগুলি তৈরি করেছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে । মুম্বইয়ের হাসপাতালের ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি হওয়ার সূত্র ধরে এই চক্রের পান্ডারা মুম্বইয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বযে গোয়েন্দাদের অনুমান।

বিবস্ত্র ছবি দেখিয়ে প্রতারণার এই নতুন ফাঁদে জড়িয়ে গিয়েছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে জালিয়াতরা প্রতারণার আরও এক ভয়ঙ্কর কৌশল প্রয়োগ করছে। সেক্সটরসনের সঙ্গেই আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে। ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। খাস কলকাতা শহরেই এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার এক বাসিন্দার কাছে সেক্সটরশন কল আসে। ওই ব্যক্তি ভিডিও কলটি ধরে ফেলেছিলেন। তাঁর মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠেছিল এক মহিলার অশ্লীল ছবি। ওই ব্যক্তি ভিডিওটি বন্ধ করার আগেই তাঁর ছবির স্ক্রিনশট উঠে যায় মোবাইল স্ক্রিনে। এর পরে লাগাতার ওই ব্যক্তির হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়।তারা আবার মেসেজ পাঠিয়ে দেখায়, যে মেয়েটিকে ভিডিও কলে দেখা গিয়েছিল সে লজ্জায় ও অপমানে আত্মঘাতী হয়েছে। আর আত্মহত্যার কারণ হচ্ছেন ওই ব্যক্তি যিনি কলটি ধরে ফেলেছিলেন। প্রতারকরা জানায়, ওই ব্যক্তির আচরণেই লজ্জায়  ও আত্মগ্লানিতে রেললাইনে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন যুবতী। মৃত্যুর আগে লিখে রেখে যান ওই ব‌্যক্তিটির নাম। তাতেও বিশ্বাস হয়নি ওই ব‌্যক্তির। তিনি প্রথমে ওই মেসেজটিকে গুরুত্ব দেননি।

এর পরপরই তাঁর হোয়াটসঅ‌্যাপে পাঠানো হয় মুম্বইয়ের একটি হাসপাতাল থেকে ইস‌্যু হওয়া ডেথ সার্টিফিকেটের কপি। নিজেকে মুম্বই পুলিশের কর্তা পরিচয় দিয়ে এক জালিয়াত বলে, ওই যুবতীর বাড়ি থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। প্রথমে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও শেষের ওই মেসেজ ও ডেথ সার্টিফিকেটের ছবি দেখার পর অপ্রস্তুত হয়ে যান ওই ব‌্যক্তি। ব‌্যাপারটি মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছে দশ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। তিনি ভয় পেয়েই কয়েকটি অ‌্যাকাউন্টে টাকা দিতে শুরু করেন। তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার পর তাঁর সন্দেহ হয়। ওই ব‌্যক্তি সরাসরি লালবাজারের সাইবার থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। লালবাজারের সাইবার শাখার গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখেন, মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালের নামে ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট বানিয়েছে প্রতারকরা। সেই হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এমন কোনও যুবতীর মৃত্যু সেখানে  হয়নি। সংশ্লিষ্ট জিআরপিতে খোঁজ নেওয়ার পর ওই ডেথ সার্টিফিকেটটি যে জাল  সেই বিষয়েও নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা । জাল ডেথ সার্টিফিকেটের সূত্র ধরেই দুই জালিয়াতের খোঁজ মেলে। উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটের সতীশ কুমার ও হরিয়ানার নুহ থেকে রমেশকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। চক্রের পান্ডাদের সন্ধানে মুম্বইয়েও তল্লাশি চালানো হতে পারে ।


লালাবাজার সূত্রে জানা গেছে,  উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা থেকে দুই জালিয়াতকে গ্রেফতার করে অনেক নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, এই প্রতারণা চক্রের জাল বহুদূর বিস্তৃত। অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জালিয়াতরা।  চক্রের বাকিদের  খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ ।