ভারতের বার্তা, বাংলাদেশে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পছন্দ নয়

Written by Sunita Das November 10, 2023 7:30 pm

শুক্রবার থেকে দিল্লিতে শুরু হচ্ছে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। সেই বৈঠকে যোগ দিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বৃহস্পতিবারই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। ভারতের তরফে বৈঠকে অংশ নেবেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।

কূটনৈতিক মহলের খবর, দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং চিনের আগ্রাসন মোকাবিলার বিষয় গুরুত্ব পাবে। সেই সূত্রে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠবে বলে কূটনৈতিক মহলের খবর। নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের কথায় বাংলাদেশের রাশ কোন দল ও শক্তির হাতে থাকবে তার উপর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সুরক্ষা অনেকটাই নির্ভর করে দেশটি ভৌগোলিক অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপর।

তাৎপর্যপূর্ণ হল দুই মার্কিন শীর্ষ কর্তার সফরের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত ফের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, যা আমেরিকার সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ করার কথা বলে বাইডেন প্রশাসন সে দেশের জন্য পৃথক ভিসা নীতি চালু করেছে। বলা হয়েছে অবাধ নির্বাচনে বাধাদানকারীদের আমেকিকা ভিসা দেবে না। এছাড়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধারের নামে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্তার মার্কিন সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাইডেন সরকার।

কিন্তু গোল বেঁধেছে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কার্যকলাপ এবং বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন-সহ আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের তৎপরতায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কূটনৈতিক শিষ্টাচার ছাপিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন বলে সে দেশের রাজনৈতিক মহল এবং সুশীল সমাজ সরব হয়েছে। ব্যতিক্রম একমাত্র বিরোধী দল বিএনপি। সেই দলের এক শীর্ষ নেতা পিটার হাসকে এমনকী বিএনপি-কে রক্ষাকারী অবতার হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

অন্যদিকে, শাসক দল আওয়ামী লিগ মনে করে পিটার হাস একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের পরামর্শেই বিএনপি শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড়। সর্বশেষে তিনি সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনার মুখে পড়েছেন। মার্কিন বিদেশে মন্ত্রক এবং ইওরোপিয় ইউনিয়ন এমনকী বাংলাদেশে চলমান অশান্তি এবং গ্রেফতারির ঘটনা নিয়েও বিবৃতি দিয়েছে।

কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, ভারত সরকারের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন দিল্লি পৌঁছানোর পর ভারতের বিদেশ মন্ত্রক নতুন করে বাংলাদেশে সম্পর্কে তাদের অবস্থান ফের স্পষ্ট করেছে যা আমেরিকার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচিকে পড়শি দেশে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে দেশের নাগরিকেরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। তবে ভারত সে দেশের একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী। সেই হিসেবে সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। একটা স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে ভারত সমর্থন জানিয়ে যাবে।’

কূটনৈতিক এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল বাগচির প্রতিক্রিয়াকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি মোদী সরকারের পূর্ণ সমর্থনের বার্তা বলেই দেখছে। এক সপ্তাহ আগেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় তৈরি তিনটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। তারমধ্যে দুটি রেল প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতও উপকৃত হবে। প্রায় ৭০ বছর পর চালু হওয়া আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের সুবাদে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মণিপুরে অল্প সময় ও কম খরচে পণ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রকল্প উদ্ধোধনের পর ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আসেন। সেই অনুষ্ঠানে দুই প্রধানমন্ত্রীই তাঁদের সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় উঠেছে বলে দাবি করেন, যা পরস্পরের প্রতি সমর্থন অক্ষুন্ন রাখার বার্তা বলেও মনে করে কূটনৈতিক শিবির।