বিরোধিতার অর্থ দেশদ্রোহীতা নয়

বৃহস্পতিবার অবশেষে মুখ খুললেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এবং বর্তমানে দলে কোণঠাসা একদা বিজেপি রাজনীতির ‘লৌহমানব’ লালকৃষ্ণ আদবানি।

Written by SNS April 5, 2019 7:10 am

লালকৃষ্ণ আদবানি (ছবি- Getty Images)

নিজস্ব প্রতিনিধি – বৃহস্পতিবার অবশেষে মুখ খুললেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এবং বর্তমানে দলে কোণঠাসা একদা বিজেপি রাজনীতির ‘লৌহমানব’ লালকৃষ্ণ আদবানি। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এমনকি, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতের গান্ধিনগর থেকে তাঁকে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। তাঁর বহুদিনের এই আসনে এবার বিজেপি’র হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন অমিত শাহ। এদিন ‘রাষ্ট্র আগে, তারপর দল এবং তারপরে ব্যক্তি’ শীর্ষক এক ব্লগ লিখেছেন আদবানি এবং সেই ব্লগ সর্বসমক্ষে আসতেই হইচই পড়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। আদবানি তাঁর ব্লগে লিখেছেন, ‘দলের সমালোচনা করে যাঁরা, তাঁদের কোনওদিন বিজেপি শত্রু কিংবা দেশদ্রোহী মনে করিনি। তিনি দলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, অতীতের দিকে দৃষ্টি ফেরাও, ভবিষ্যতের পানে তাকাও এবং আত্মসমীক্ষা কর।’ তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি’র বর্ষীয়ান নেতা ৯১ বছর বয়স্ক এবং গান্ধীনগরের ৬ বছরের সাংসদ আদবানি তাঁর ব্লগে এদিন লিখেছেন, দলের অভ্যন্তরে এবং জাতীয় স্বার্থে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করাই বিজেপি’র গৌরবময় বৈশিষ্ট্য। গণতন্ত্রের তাৎপর্য বুঝতে গেলে দেশের বৈচিত্র্য এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করতে হবে। বিজেপি’র প্রতিষ্ঠা থেকেই দল তার রাজনৈতিক সমালোচকদের কিংবা ভিন্নমত পোষণকারীদের শত্রু বলে মনে করেনি, শুধু তাদের বিরোধী মনোভাবপন্ন বলে মনে মেনেছে। আদবানি আরও লিখেছেন, ভারতীয় জাতীয়তাবাদের যে সংকল্প রয়েছে বিজেপি’র, তাতে যারা দলের মতের বিরোধিতা করেছে তারা অবশ্যই জাতীয়তা বিরোধী নয়। এটাই হল গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সহ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনচেতনার চাবিকাঠি। আদবানি এটা লিখতে গিয়ে ইন্দিরা গান্ধির জামানায় কুখ্যাত এমারজেন্সির প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। একাধিক জায়গায় আদবানি বিজেপি’র অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, দলের বড় হওয়ার পেছনে মূল আদর্শ ছিল ‘সত্য’, ‘রাজনীতি’ এবং ‘লোকতন্ত্রে’ অগাধ বিশ্বাস। এই মূল্যবোধের জন্য সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এবং সু-রাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলাম। আদবানি আরও লিখেছেন, নির্বাচন হল দলের মধ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে আত্মমন্থনের সেরা অবসর তাদের জন্য যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এটা সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যম এবং নির্বাচনী আধিকারিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মনে রাখতে হবে সবার ওপরে হলেন ভোটদাতা এবং তাদেরও এই অবসরে আত্মসমীক্ষা করতে হবে গণতন্ত্রের জন্য কিসের প্রয়োজন সবচাইতে বেশি। জীবনের সায়াহ্নে এসে ৯১ বছরের এই প্রবীণ রাজনীতিক যাঁর রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে গেছে, তাঁর দেওয়া এই উপদেশ কি তাঁর দলকে উদ্দেশ্য করে, যাদের কাছ থেকে তিনি অন্তিম লগ্নে তাচ্ছিল্য এবং উপেক্ষাযই পেয়েছেন, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে এবং খোদ বিজেপি’র আন্দরে। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের দ্বারা মার্গ দর্শক মণ্ডলে নির্বাসিত আদবানি কিন্তু এদিন প্রকৃত অর্থেই বিজেপি এবং তার বর্তমান নেতৃত্বের মার্গ দর্শন করিয়ে দিলেন। সেই দর্শনের পথ ধরে মোদি-শাহের বিজেপি আগামী দিনে দলের দিশা ঠিক করবে কিনা, সেটা ভবিষ্যতের প্রশ্ন।

আদবানির এদিনের ব্লগের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক রাজনীতিক।