অর্থের অভাবে মেয়ের মৃতদেহ বাইকে চাপিয়ে নিয়ে গেলেন বাবা

ভোপাল , ১৭ মে – পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ এবং মধ্যপ্রদেশের শাহদোলকে একই সুতোয় গেঁথে দিল দুটি পৃথক ঘটনা । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ হোক কিংবা মধ্যপ্রদেশ দুই রাক্যেই সাধারণ মানুষের অসহায়তায় কোনও ফারাক নেই। চরম অসহায়তা। দুই অসহায় বাবা তাঁদের সন্তান হারানোর কষ্ট বুকে চেপে বয়ে নিয়ে গেলেন সন্তানদের মৃতদেহ।  কারণ চরম অভাবও। এক জন পাঁচ মাসের পুত্রসন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ব্যাগে ভরে। অন্য জন ফিরলেন মোটরবাইকে চাপিয়ে। কারণ মৃত সন্তানের দেহ অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে পরিমান টাকা দাবি করা হয় তা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের নেই।  

কালিয়াগঞ্জের অসীম দেবশর্মা। তাঁর পাঁচ মাসের পুত্রসন্তান মারা যাওয়ার পর শববাহী গাড়ি দাবি করে আট হাজার টাকা । সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক অসীমের । তাই নিরুপায় অসীম শিশুর দেহ ব্যাগের মধ্যে ভরে  হাসপাতাল থেকে বাসে করে কালিয়াগঞ্জের বাড়ি নিয়ে যান।  একই অসহায়তার ছবি মধ্যপ্রদেশের শাহদোলেও। মৃত মেয়েকে শববাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মতো  না থাকায় মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন লক্ষ্মণ সিংহ। অভিযোগ, সরকারি হাসপাতাল অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা না করায় বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করেন তিনি। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়েছে সে রাজ্যে। অভিযুক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

শাহদোল থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের কোটা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ। তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে মাধুরী   রক্তাল্পতায়  ভুগছিলেন । মেয়েকে শাহদোলের এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন তিনি। সোমবার রাতে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় মাধুরীর। মেয়ের দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন লক্ষ্মণ। অভিযোগ, তাঁর বাড়ি হাসপাতাল থেকে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে না হওয়ায় তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স দিতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শববাহী গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার মতো টাকাও তাঁর কাছে ছিল না। তাই মেয়ের দেহ মোটরবাইকে চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নিরুপায় লক্ষ্মণ।

 সদ্য কন্যাহারা পিতার দাবি, হাসপাতালের লোকেরা জানায় ১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে অ্যাম্বুল্যান্স মিলবে না। লক্ষ্ণণ বলেন, “আমরা অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে পরিষেবা দেওয়া হয় না।” আরও বলেন, “নিজেদেরই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। পয়সা না থাকায় মোটরবাইকে মৃতদেহ চাপিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিই।”


তবে গোটা পথ মোটরসাইকেলে ফিরতে হয়নি লক্ষ্মণকে। গ্রাম থেকে যখন তিনি ২০ কিলোমিটার দূরে তখন  শাহদোলের কালেক্টর বন্দনা বৈদ্যের চোখে পড়ে এই  মর্মান্তিক দৃশ্য। তিনিই বাকিপথের জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করেন। এরপর গ্রামে ফিরে মেয়ের শেষ কাজ করেন লক্ষ্মণ। শাহদোলের কালেক্টর অসহায় পিতাকে আর্থিক সাহায্যও করেছেন বলে জানা গেছে।  পাশাপাশি হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যেমন কালিয়াগঞ্জের অসীমকে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার গৌরাঙ্গ দাস।

কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে  নবান্নও। তেমনই শাহদোলের ঘটনায়  তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।