পুর নিয়োগ দুনীতি মামলায় অয়ন শীল সহ বিভিন্ন পুরসভায় তল্লাশি সিবিআইয়ের 

Written by SNS June 7, 2023 2:09 pm
কলকাতা , ৭ জুন – পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বুধবার রাজ্যের একাধিক জায়গায় তল্লাশি শুরু করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কলকাতা থেকে জেলা, পুর ও নগরোয়ন্নয় দফতরের পাশাপাশি রাজ্যের একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা। বুধবার সকালেই সিবিআই আধিকারিকরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় পৌঁছন। তার আগে সল্টলেকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেও যায় সিবিআইয়ের একটি দল। এছাড়া চুঁচুড়া, দক্ষিণ দমদম, নিউ ব্যারাকপুর, দমদম, পানিহাটি, কামারহাটি, শান্তিপুর সহ মোট ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি চলছে ।
সিবিআই সূত্রে খবর, মূলত নথি উদ্ধারের জন্যই এই পুরসভা গুলিতে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এদিন কলকাতার নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ১০০ জন সিবিআই অফিসারের ১৬টি দল তল্লাশি অভিযানে সামিল হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, পুরসভা গুলির আধিকারিক সঙ্গেও কথা বলবেন গোয়েন্দারা।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূ্র্ণ তথ্য পাওয়া যায়।নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের সংস্থার নামে থাকা এবিএস ইনফোজোনের অফিসেও তল্লাশি চালাচ্ছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এর পাশাপাশি অয়নের চুঁচুড়ার পৈতৃক বাড়িতেও গিয়েছে সিবিআইয়ের একটি দল। সেখানে অয়নের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলছেন সিবিআই আধিকারিকরাসিবিআই হানা প্রসঙ্গে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পুরোটাই রাজনীতি চলছে।” পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য তদন্ত চালাচ্ছে বলেও এদিন তিনি জানান।
সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৪ সালের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। মজদুর, ক্লার্ক, ঝাড়ুদার, ড্রাইভার থেকে শুরু করে সব পদেই নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে দাবি করা হয় । মোটা টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। এই নিয়োগের পিছনে প্রভাবশালীদের একাংশের যোগ রয়েছে বলে মনে করছে সিবিআই। তদন্ত সেই সংক্রান্ত প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা করা হবে। সিবিআই সূত্রে খবর, নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে প্রস্তাব পেশ করে তা পাশ করা হয়। পাশ হওয়া রেজিলিউশনে কোন কোন কাউন্সিলরের সই রয়েছে, সেই তথ্যও সংগ্রহ করবে সিবিআই।
গত ১৯ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়নকে গ্রেফতার করে ইডি। ইডির তরফে দাবি করা হয়, তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট পাওয়া গেছে। জানা যায়, অয়নের সংস্থার মাধ্যমে একাধিক পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠলে তিনি পুরসভায় দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে এই মামলার এজলাস বদল হলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখে হাই কোর্ট।
সিবিআইয়ের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। এর আগে, হাই কোর্টের দু’টি ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফেরত পাঠিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির কাছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিন‌্হা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফিরিয়ে দিয়েছিল। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, মামলাটি এই দুই বেঞ্চের বিচার্য বিষয়ের তালিকায় নেই, তাই শুনানি সম্ভব নয়। ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটি ছেড়ে দেওয়ায় তা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা পাঠান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। চলতি সপ্তাহে মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।