• facebook
  • twitter
Thursday, 13 February, 2025

আইআইটি ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ  জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি অধ্যাপকদের

আইআইটি ক্যাম্পাসের প্রেমবাজার গেট করোনা কাল থেকে বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আইআইটি কর্তৃপক্ষের একটা সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যার জন্য ডিরেক্টরকেই দায়ী করেছে টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।

খড়গপুর আইআইটির বর্তমান ডিরেক্টরের মেয়াদ আগামী জানুয়ারি মাসে শেষ হচ্ছে । তার আগে ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণ ও নিয়ম মেনে না চলার অভিযোগ জানিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিল আইআইটি টিচারস এসোসিয়েশন । উন্নত মেধার যোগ্য এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে পরবর্তী ডিরেক্টর হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের তরফে  কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীকে  ২০ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠালো আইআইটি টিচার্স এসোসিয়েশন। এই চিঠি ঘিরে খড়গপুর আইআইটিতে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে । এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অমিতাভ ভট্টাচার্য , সাধারণ সম্পাদক অমল দাস, সহ-সভাপতি পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কোষাধ্যক্ষ ঋতব্রত গোস্বামী ।

এই চিঠিতে টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান ডিরেক্টরের মেয়াদ শেষ হবে।  আগামী জানুয়ারি মাসে খড়গপুর আইআইটিতে নতুন ডিরেক্টর কার্যভার গ্রহণ করবেন। একজন যোগ্য, দক্ষ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে যেন পরবর্তী ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত করা হয় । বর্তমানে অধ্যাপক, কর্মী বা ছাত্রছাত্রীদের মতামত এই বিষয়ে নেওয়া হয় না। এর ফলে কর্তৃপক্ষ অনেক সময় একরোখা, অসহযোগী মনোভাব নিয়ে চলেন।  এইভাবে ইনস্টিটিউট চালাতে গিয়ে গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও গরিমা নষ্ট হয়েছে।  এরপরেই সরাসরি বর্তমান ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ এনেছে টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন।

ডিরেক্টর আইআইটির যে বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন, সেই বিভাগেরই আরেকজন অধ্যাপককে তিনি প্রথমে বিভাগীয় প্রধান, পরে বোর্ড অফ গভর্নরের সদস্য , তারপরে স্রিকের ডিন এবং শেষে ডেপুটি ডিরেক্টর পদে উন্নীত করেন কোনও নিয়ম নীতি না মেনেই । অধ্যাপকদের দক্ষতা, সিনিয়রিটি কোন কিছুকেই আমল না দিয়ে তাদের বঞ্চিত করা হয়। নিজের ইচ্ছেমতো তিনি ডিন, বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ।

নতুন অধ্যাপকদের নিয়োগ এবং তাঁদের প্রবেশন পিরিয়ড কতদিনের হবে সে বিষয়েও বোর্ড অফ গভর্নরের নীতি তিনি মেনে চলেন নি। প্রতিশোধমূলক মানসিকতা নিয়ে চলার জন্য অনেক দক্ষ, জ্ঞানী অধ্যাপক ইনস্টিটিউট ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আবার নতুন প্রজন্মের মেধাবী অধ্যাপকেরাও আইআইটিতে কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেখান নি। প্রবেশন পিরিয়ড কত দিনের হবে সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে ভারত সরকারের নির্দেশনামাও বর্তমান ডিরেক্টর মেনে চলেননি বলে অভিযোগ।

খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাস নিবাসী এবং ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা মানুষদের উন্নত চিকিৎসার জন্য তৈরি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পাঁচবছর ধরে তৈরি হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতাল চালু করতে বর্তমান ডিরেক্টর ব্যর্থ হয়েছেন। এর ফলে সরকারি অর্থ এবং প্রাক্তনীদের দানের অর্থ অপচয় হয়েছে। এই ব্যর্থতার দায় ডিরেক্টরের বলে অভিযোগ অ্যাসোসিয়েশনের। আইআইটি দিল্লি এবং আইআইটি মাদ্রাজ বর্হিদেশে নিজেদের ক্যাম্পাস খুললেও আইআইটি খড়গপুর মালয়েশিয়াতে ক্যাম্পাস খুলতে এখনও অব্দি সক্ষম হয়নি। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এই ক্যাম্পাস খোলার জন্য দু’বছর আগেই সবুজ সংকেত দিয়েছিল। এই ব্যর্থতার জন্য টিচারস অ্যাসোসিয়েশন প্রশ্ন তুলেছে ডিরেক্টরের কর্মদক্ষতা নিয়ে।

আইআইটি ক্যাম্পাসের প্রেমবাজার গেট করোনা কাল থেকে বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আইআইটি কর্তৃপক্ষের একটা সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যার জন্য ডিরেক্টরকেই দায়ী করেছে টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অমল দাস বলেন, একজন যোগ্য, দক্ষ ব্যক্তিকে যেন ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করা হয় এই আবেদনটুকু আমরা কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীকে জানিয়েছি। গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানের সুনাম অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়েছে। খড়গপুর আইআইটির সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্যই আমাদের এই চিঠি। অধ্যাপকদের এই চিঠি ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আইআইটি ক্যাম্পাসে। এই বিষয়ে খড়গপুর আইআইটির জনসংযোগ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়।