• facebook
  • twitter
Monday, 19 May, 2025

অধিকাংশ স্কুল শিক্ষকের অভাবে অচল

করোনায় লকডাউন চলাকালীন অনেক স্কুল থেকে বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা ট্রান্সফার নিয়ে স্বগৃহ পার্শ্বস্থ স্কুলে চলে গেছেন।

প্রতীকী ছবি

করোনায় লকডাউন চলাকালীন অনেক স্কুল থেকে বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা ট্রান্সফার নিয়ে স্বগৃহ পার্শ্বস্থ স্কুলে চলে গেছেন। কোন স্কুলই ওই সময়ে আনুষ্ঠানিক তাঁদের বিদায় জানাতে পারেনি। ২০ জানুয়ারি রানীগড় জ্যোতিষপুর হাই স্কুল তাঁদের বিদায় সংবর্ধনা জানালো। ট্রান্সফার হয়ে যাওয়া ৮ জন হলেন- শংকর মন্ডল, কিঙ্কর কুমার মন্ডল, সৌমি ঘোষ, অচিন্ত্য বেরা, কুমকুম চক্রবর্তী, কনককান্তি ব্যানার্জি, তনুশ্রী ঘোষ, রফিকুল ইসলাম ও শিক্ষাকর্মী দিপালী প্রধান অবসর গ্রহণ করেন। প্রারম্ভিক ভাষণ দেন স্কুলের সভাপতি শুভাশিস দাস ও প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মন্ডল। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবী স্বপন পট্টনায়েক, গ্রাম প্রধান ইয়াসমিনা মোল্লা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দিলীপ নস্কর, সমাজসেবী আক্তার আলী মোল্লা, প্রাক্তন শিক্ষক গোপাল মোহন পাত্র, প্রাক্তন শিক্ষক-বহুমুখী লেখক প্রভুদান হালদার, বিদায়ী শিক্ষক শংকর মণ্ডল ও কিঙ্কর কুঃ মণ্ডল। ছাত্র-ছাত্রীদের নৃত্য-সংগীত-কবিতা অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলে। বিশেষ করে একাদশের ছাত্রী নন্দিতা মণ্ডলের স্বরচিত কবিতায় সকলে অভিভূত। শিক্ষক নবরঞ্জন মন্ডলের সঞ্চালনা প্রশংসার দাবি রাখে।

এখন প্রশ্ন হল– শিক্ষা সংক্রান্ত নতুন এই আইনের সুযোগ নিয়ে সুন্দরবন এলাকার স্কুলগুলি শিক্ষকশূন্য হতে চলেছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কোন শিক্ষক পাওয়া যায়নি। রানীগড় জ্যোতিষপুর হাইস্কুলে এই ৮ জন শিক্ষককে ধরে এখন মোট ১৬ জন শিক্ষকের ঘাটতি আছে। তাহলে স্কুল চলছে কিভাবে? যাদের কিছু আর্থিক সংগতি আছে তারা এলাকার কিছু শিক্ষিত যুবক-যুবতীকে দিয়ে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করিয়ে কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে স্কুলগুলো চালানোর চেষ্টা করছে। আর যাদের আর্থিক সংগতি নেই তারা চালাতে পারছেন না। ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতির জন্য সুন্দরবন এলাকার অধিকাংশ স্কুলের পঠন-পাঠন তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগ মুখথুবড়ে পড়েছে। কারণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের সংখ্যা এমনিতেই খুবই নগন্য।

এভাবে যদি সুন্দরবনের স্কুলগুলি শিক্ষক-শূন্য হতে থাকে তাহলে দুই এক বছরের মধ্যে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলি অবশ্যই শিক্ষক-শূন্য হয়ে পড়বে। স্কুলগুলি কেবল তাদের পরিকাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মিড-ডে-মিল, সাইকেল (সবুজ সাথী), কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী ইত্যাদি পাইয়ে দেওয়ার কারখানা হিসেবে কাজ করবে। সব কাজ চলবে, চলবেনা কেবল পঠন-পাঠন। অন্যদিকে ব্যয়বহুল বেসরকারি স্কুলগুলো স্বল্প পরিকাঠামোর মধ্যেও রমরমিয়ে চালু থাকবে।

সুতরাং বাস্তব বিবেচনা সাপেক্ষে একমাত্র মিউচুয়াল ট্রান্সফার ছাড়া শিক্ষকদের অন্য সমস্ত রকমের ট্রান্সফার আইনগতভাবে বন্ধ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া হোক।

সুন্দরবনের ভূমিপুত্র হওয়ার সুবাদে বর্তমানে লক্ষ্য করছি–পরিবহনের প্রভূত উন্নতির ফলে সুন্দরবন এলাকার আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন মানুষদের মধ্যে সুন্দরবন ত্যাগ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা শহরে বাস করতে চান। তাদের ছেলের-মেয়েদের শহরের স্কুলে পড়াতে চান। তারা আর গ্রামে থাকতে চান না।

সুতরাং এই উভয় সংকটের মধ্যে সুন্দরবনের গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থা অতি সংকটের মুখে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে কোনোভাবেই এই শিক্ষা সংকটের প্রতিকার সম্ভব নয়।