তিস্তার জল,পদ্মার ইলিশ

ইলিশ মাছ(Getty Images)

বর্ষা নামলেই বাঙালির জিভ ইলিশ খোঁজে।বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের মুখের দেখা অনেকদিন হল মিলছে না।এ ব্যাপারে অবশ্য বাংলাদেশ সরকার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল,তিস্তার জল না মিললে,পদ্মার ইলিশ ওই বঙ্গবাসীর পাতে পড়বে না।তিস্তার জল,পদ্মার ইলিশ-এ নিয়ে বহুদিন হল টানাপােড়েন চলছে দুই দেশের মধ্যে।এপার বাংলার বাঙালিরা পদ্মার ইলিশের স্বাদ ভুলতে পারছেন না,আবার পদ্মার ইলিশের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে গঙ্গার ইলিশও মিলছে না।

অগত্যা কোলাঘাট অথবা দিঘার ইলিশ নিয়েই তৃপ্ত থাকতে হবে এই বঙ্গবাসীদের।কিন্তু স্বাদে গন্ধে রূপে পদ্মার ইলিশের ধারেকাছেও আসতে পারবে না এই ইলিশ।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইলিশ প্রেমীদের একটি আশার কথা শুনিয়েছেন।তিনি বিধানসভায় বলেছেন,সুন্দরবনের সুলতানপুরে একটি ইলিশ গবেষণাকেন্দ্র খােলা হয়েছে।একটা সময় আসবে যখন সেখানে প্রচুর ইলিশ মিলবে।তখন এ রাজ্যও অন্যত্র ইলিশ পাঠাতে পারবে।তিনি আরও বলেছেন,রাজ্যে ইলিশের আকাল নেই।

প্রসঙ্গত তিনি বলেছেন,তিস্তার জল না পেলে বাংলাদেশের ইলিশ মিলবে না।বাংলাদেশ ভারতের পরমবন্ধু, এ বঙ্গের প্রতিবেশী-সুতরাং বাংলাদেশের সুখশান্তি উন্নয়ন আমরা চাই।কিন্তু তিস্তার জল দেওয়ার ব্যাপারে কিছু অসুবিধে রয়েছে।শুখা মরশুমে তিস্তার জলের পরিমাণ দারুণভাবে হ্রাস পায়,যা থাকে সেখান থেকে জলের একটি অংশ বাংলাদেশকে দিলে,উত্তরবঙ্গের জলকষ্ট তীব্র হবে।চাষবাস মার খাবে।পানীয় জলেরও সঙ্কট সৃষ্টি হবে।সেই কারণেই রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে,তিস্তার জলের একটি অংশ শুখাকালে বাংলাদেশের জন্য ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।ওপার বাংলার গোঁসা সেই কারণেই।


মোদি সরকার দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তিস্তার জলবন্টন নিয়ে একটা  মীমাংসায় আসার জন্য আবার নতুন করে চাপ বাড়াচ্ছে।বাংলাদেশ সরকার বলেছে,ভারতে নির্বাচনের জন্য সাময়িকভাবে তিস্তা নিয়ে দিল্লির সঙ্গে আলােচনা স্থগিত রাখা হয়েছিল।কিন্তু তিস্তার জলের ভাগ পাওয়া,বাংলাদেশের একটি ন্যায্য দাবি।তা থেকে বাংলাদেশ সরে আসতে পারে না।

এই যখন বাংলাদেশের মনােভাব তখন তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথা বাংলাদেশের সরকারকে যে বেশ অস্বস্তিতে ফেলবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।আর সেই সঙ্গে পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ আমদানির কথাও বাংলাদেশ কোনও বিবেচনার মধ্যে আনবে না।ভারত সরকার এখন তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশকে কী বলে আশ্বস্ত করে তা দেখার।যাঁরা পদ্মার ইলিশের স্বাদ পেয়েছেন,তাঁরা এ বঙ্গের ইলিশ খেয়ে তৃপ্ত হতে পারবেন না।তাদের জিভে ওপার বাংলার ইলিশের স্বাদ লেগেই রয়েছে।তবে তা না পাওয়া গেলে অগত্যা কোলাঘাটের ইলিশকেই পাতে নিতে হবে।সেই দুধের স্বাদ ঘােলে মেটানাের মতাে আর কী!

তবে বাজারে গেলে,আপনি পদ্মার ইলিশের ডাক শুনতে পাবেন।কিন্তু সে যে পদ্মার সেই রুপােলি শস্য তা আপনি বুঝবেন কী করে ?চেহারা দেখে,কোনটা পদ্মা,কোনটা কোলাঘাট তা বােঝা খুবই কঠিন।তবে পাচার হয়ে পদ্মার ইলিশ এ বঙ্গে যে ঢুকছে,তা অস্বীকার করার উপায় নেই।কপালগুণে সত্যি যদি আপনি একটি পদ্মার ইলিশ অতি চড়া দামে পেয়ে যান,তাহলে ভক্ষণকালে বুঝতে পারবেন এই ইলিশের স্বাদ,গন্ধ- যদি আপনি অতীতে পদ্মার ইলিশের স্বাদ পেয়ে থাকেন।

তবে মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তি যতই বাড়ান না কেন,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে মমতার কালীঘাটের আবাসে এক ঝুড়ি পদ্মার ইলিশ যে এবার সে কারণে আসবে না তা ভাবার কোনও অবকাশ নেই।প্রতিবারই হাসিনা মমতার জন্য পদ্মার ইলিশ পাঠান,এবারও হয়ত তার ব্যতিক্রম হবে না।মমতাও পাঠান এ বঙ্গের সুমিষ্ট আম,শাড়ি।ভালবেসে এই আদানপ্রদানে তিস্তা কোনও বাধার সৃষ্টি করবে না।