• facebook
  • twitter
Thursday, 22 May, 2025

হিন্দুত্বের চেয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনাই রাজনীতিতে মমতাদের হাতিয়ার

কয়েকদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়া মেটানোর দাবি তুলেছিলেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রবীর ঘোষাল

বিগত বিধানসভার নির্বাচনের পরে রাজ্য বিজেপির তরফে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে একটা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। অবশ্যই গেরুয়া শিবিরের শোচনীয় ব্যর্থতার কারণগুলি বর্ণিত হয়েছিল রিপোর্টে। তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বিপুল জয়’ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব একটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছিল, সেটা হল, কেন্দ্রের বঞ্চনার ইস্যু। ১০০ দিনের কাজ সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা আটকে রাখাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী প্রচারে মস্ত বড় অস্ত্র করেছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার’ ইস্যুই বিগত বিধানসভার নির্বাচনে জোড়াফুলের রেকর্ড জয়ের নেপথ্য কারণ ছিল।

কয়েকদিন আগে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়া মেটানোর দাবি তুলেছিলেন। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী না হয়েও গিরিরাজ সিং নিজের গায়েই কথাটা মেখে নিয়েছিলেন। একসময়ের গ্রামোন্নয়ন, বর্তমানে বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ হুমকির সুরে বলেছেন, ‘বাংলায় ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে।’ প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী কমলেশ পাশোয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বাংলা টাকা পাবে না। এটা মোদী সরকার।’

বাস্তাবটা তাহলে কী? ২০২২ সাল থেকে ১০০ দিনের প্রাপ্য বাংলার টাকা আটকে রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। টাকার পরিমাণ ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি! মোট ৭৬টি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল এই তিন বছর বিভিন্ন সময় দুর্নীতির তদন্ত করতে এসেছে। ১৩ হাজার ৩৭৩ জন শ্রমিকের কাছ থেকে ২ কোটি ৪৯ হাজার টাকা তারা দুর্নীতির দায়ে উদ্ধার করেছে। কিন্তু বাংলার সর্বশেষ হিসার অনুযায়ী জবকার্ডের দৌলতে ১০০ দিনের কাজ করেছেন ৫৪ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষ। ২০২৩-২৪ সালের এই কজের টাকা গরিব এবং প্রান্তিক মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার।

অর্থাৎ যে অভিযোগকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা, সেই দুর্নীতির তদন্ত কিন্তু তেমনভাবে কিছুই পায়নি। তাই দোষীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। খুব স্বাভাবিক কারণেই কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন এবং পঞ্চায়েতিরাজ সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির লোকসভায় পেশ করা সাম্প্রতিক রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজ সহ অন্যান্য প্রকল্পের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এভাবে কোনও রাজ্যের টাকা আটকে রাখা যায় না। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে গ্রামীণ জীবনে।’

এবারও এই বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য বিজেপির অনেকেই অশনি সংকেত দেখছে। তারা মনে করছে, হিন্দুত্বের ইস্যুর চেয়ে আগামী ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসের তুরুপের তাস হতে পারে কেন্দ্রর বঞ্চনা। তাই হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, ১০০ দিনের টাকা চাই’— বিজেপিকে ব্যঙ্গ করা জোড়াফুলের এই স্লোগান জনমনে দাগ কাটতে পারে। যে কোনও মানুষের কাছে ধর্ম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভোটের তাগিদ বড় বিষম বালাই।