নরেন্দ্র মেদির শাসনকাল যে ক্রমশঃ নড়বড়ে হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ কিছুটা হলেও পাওয়া গেল দেশের ১৩টি আসনে উপনির্বাচনের ফলাফলে৷ মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধিদের দখলে এসেছে ১০টি আসন৷ বিজেপির মাত্র দু’টি, আর নির্দল এক৷ উপনির্বাচনকে অনেকেই খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না৷ কেননা, এই নির্বাচনে ভোটদানের হার অপেক্ষাকৃত কম হয়৷ সাধারণ মানুষ সাধারণ নির্বাচনের মতো এটাকে গুরুত্ব দিতে চান না৷ এছাড়া উপনির্বাচনে শাসক দলের পাল্লা সবসময় ভারী হয়৷ যাঁরা ভোট দেন, তাঁরা পরিবর্তনের আশায় থাকেন না৷ আর এই ধরনের ভোটে শাসকের দাপট স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে৷ তবু এই ১৩টি উপনির্বাচনের ফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
গত দু’বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন, সব বিরোধী দল যদি হাতে হাত মিলিয়ে লড়ে, তবে ভোটের ফলাফলে তার প্রভাব পড়বেই৷ কোনওভাবেই বিজেপি তথা এনডিএ’র প্রাপ্ত মোট ভোট বিরোধী জোটের থেকে বেশি হবে না৷ লোকসভার ফলাফলে দেখা গিয়েছে মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ সর্বত্র ঐক্যবদ্ধভাবে না লড়েও ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ আর এনডিএ পেয়েছে ৪২ শতাংশের সামান্য বেশি৷
Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা মানলে এই অঙ্কটাই হয়তো উল্টো হয়ে যেত৷ উপনির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ৷ কারণ, ১৩ আসনে এনডিএ পেয়েছে ৪৬ শতাংশ ভোট, আর ‘ইন্ডিয়া’ পেয়েছে ৫১ শতাংশ৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, দখলে থাকা বেশ কয়েকটি আসন এই দফায় হারিয়েছে বিজেপি৷ সাতটি রাজ্যের মধ্যে শুধু মধ্যপ্রদেশ এবারও মান বাঁচিয়েছে বিজেপির৷
Advertisement
এই উপনির্বাচনে খুব একটা বড় ইসু্য না থাকলেও প্রচার কম ছিল না৷ সন্দেশখালি, নিয়োগ দুর্নীতি, সিএএ নিয়ে সকলেই সোচ্চার৷ কিন্ত্ত তা ভোটের কাজে আসেনি৷ তার প্রমাণ উপনির্বাচনে বিজেপির জেতা তিনটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ তার মধ্যে রয়েছে রায়গঞ্জ৷ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম দিনাজপুরের কেন্দ্রটি দখলে এসেছে তৃণমূলের৷ উপনির্বাচনেও চারে চার ফলাফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাতে পেরেছেন ধর্মের নামে রাজনীতি বা বিভাজনে ভোট কুড়োনো যাবে না৷ তাই ২০১৮ সালের পর প্রত্যেক ভোটে গেরুয়া ব্রিগেডের প্রাপ্ত ভোটের হার কমছে৷ তৃণমূলের কিন্ত্ত ভোট কমেনি৷ বরং বেড়েছে৷
অযোধ্যার কাছেই ফৈজাবাদ আসন হারিয়েছিল বিজেপি৷ বারাণসী কেন্দ্রেও প্রধানমন্ত্রী মাদির জয়ের ব্যবধান কমে দেড় লক্ষে পৌঁছেছে৷ আর উপনির্বাচনে বদ্রিনাথও দেখিয়ে দিল হিনদুত্বে বিজেপির কপিরাইট নেই৷ অথচ লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় দফার পর থেকেই পুরোপুরি হিন্দুত্ব রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের দলবল৷ কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আপনাদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেবে, আপনাদের জমি কেড়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে— এই ধরনের মন্তব্য ঘন ঘন শোনা গিয়েছে মোদিজির গলায়. অভিযোগ জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি৷ বহাল তবিয়তে মোদিজি বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে গেছেন৷
ভারতের রাজনীতির পুরো সমীকরণটাই এখন দাঁড়িয়ে আছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলির উপর৷ বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশে ফিরে বিরাট কোহলি কিন্ত্ত প্রধানমন্ত্রী মোদির সামনেই বলেছিলেন, ‘অহঙ্কার প্রত্যেককে সাফল্যের থেকে দূরে ঠেলে দেয়৷’ তাঁর এই মন্তব্যটি শুধু ক্রিকেট নয়, রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, সর্বত্রই প্রযোজ্য৷ আবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে পাশে রেখে যোগী আদিত্যনাথও কিন্ত্ত বলেছেন, ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আর অহঙ্কারই আমাদের ডুবিয়েছে৷’
Advertisement



