• facebook
  • twitter
Thursday, 14 August, 2025

বাংলা নাটকে দেশভাগ, দাঙ্গা ও উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ; একটি শিকড়মুখী অনুসন্ধান

দাঙ্গা দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু মিছিল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পূর্ববর্তী ঘটনার স্রোত ধীরে ধীরে এই দাঙ্গা এবং দেশভাগকে অনিবার্য করে তোলে।

নাটক জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। জীবন, সমাজ, সভ্যতার ঘাত-প্রতিঘাত, বাঁকবদল, অন্তর্গত বেদনা, রক্তক্ষরণ শুধুমাত্র অনুকৃত নয়, বিশেষ ব্যঞ্জনাসহ উপস্থাপিত হয় নাটকে। নাটক তাই এক অর্থে শিল্পীত জীবন দর্পণ। এ যাবৎ নানান ইতিবাচক এবং নেতিবাচক বিষয়ই ধরা পড়েছে সেই দর্পণে। দেশভাগ, দাঙ্গা, উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ তার ব্যতিক্রম নয়।

নিবিড় নিরীক্ষণে দেখা যায় দাঙ্গা, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। বলা ভালো, পরস্পরের সঙ্গে কার্যকারণ সূত্র, সম্বন্ধে বাঁধা। চক্রান্ত তো আছেই, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষও আছে, তবু দুই সম্প্রদায়ের পরস্পর অবিশ্বাস এবং দাঙ্গা প্রবণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমা-ই দেশভাগের দিকে পরস্পরকে প্ররোচিত করে এবং তার অবশ্যম্ভাবী ফল-পরিণাম হিসেবে উদ্বাস্তু মিছিলের ‌ বেদনাদায়ক ইতিহাস রচিত হয়।

অনেকে দেশভাগকে একটি বিশেষ সময়ে অভিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করেন, একটি বিশেষ প্রজন্মের রক্তক্ষরণ হিসেবে দাগিয়ে দেন। বিষয়টি কিন্তু আদৌ তেমন নয়। এটি আরো গভীর এবং সুদূর প্রসারী ক্ষত— যা পরবর্তী বহু প্রজন্মকে ব্যথিত ও যন্ত্রণা কাতর করে চলে। কারণ দাঙ্গা, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু হওয়ার স্মৃতি ও তার অভিঘাত, বেদনা ভূমিকম্পের আফটার এফেক্ট-এর মতো দীর্ঘকাল ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতেই থাকে। বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্রও এ বিষয়ে সহমত ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মতে, ‘দাঙ্গা, দেশভাগ বা উদ্বাস্তু হওয়ার স্মৃতি এবং তার যন্ত্রণা কিছুতেই ভুলে ওঠা যায় না, তা পরবর্তী প্রজন্মকেও বহন করতে হয়।’

বিশিষ্ট নাট্যআলোচক অনুরাধা কুন্ডাও দেশভাগ প্রসঙ্গে সমমত পোষণ করেছেন। তাঁর মতেও, ‘দেশভাগ কোনো একটি বিশেষ প্রজন্মের অভিজ্ঞতা নয়। কোনো একটি বিশেষ বছরে দেশভাগ হয়েছে বটে কিন্তু তার অভিঘাত বহমান বছরের পর বছর ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্মে। যে কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক ঘটনাই এইভাবে বহে যায় অভিঘাতে। এক প্রজন্ম হয়তো প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী। পরের প্রজন্মগুলি পরোক্ষে ভোগে। সামলেও নেয়। সেটাই সংঘর্ষের ইতিহাস। সামাজিক বিবর্তনের ইতিহাস। নাটক, একটি সামাজিক মাধ্যম হিসেবে, এই প্রজন্মের লড়াইগুলি ধরে রাখে।’

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, দাঙ্গা দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু মিছিল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পূর্ববর্তী ঘটনার স্রোত ধীরে ধীরে এই দাঙ্গা এবং দেশভাগকে অনিবার্য করে তোলে এবং তার ফল পরিণামে দেখা যায় উদ্বাস্তু মিছিল। আমাদের নিবন্ধিকৃত বিষয়টির মধ্যে প্রবেশ করতে হলে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাক্রমেও অবগাহন করতে হবে। মনে রাখতে হবে,

১৯০৫ সালের বঙ্গ ভঙ্গ, ১৯৩৯ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪২-এর আগস্ট আন্দোলন, ১৯৪৬-এর নৌ-বিদ্রোহ, ১৯৪৭-এর দেশভাগ— এই সমস্ত ঘটনার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে। কোনো না কোনোভাবে, এরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিচ্ছিন্ন বলে কিছু নেই। তাই দেশভাগের নাটক বলে পরিচিত যা কিছু আছে— দেশভাগ সম্পর্কিত নাটক অথবা অন্য সামাজিক নাটক, তার মধ্যেও ভারত-ভাগ মিশে থাকাটাই স্বাভাবিক।

দাঙ্গা, দেশভাগ ও উদ্বাস্তু মিছিল— বিষয়টি মোটেই সামান্য নয়। তার প্রেক্ষাপট, সংঘটনের অভিঘাতের ব্যাপ্তি এতটাই যে তাকে আঁকতে গেলে যে ক্যানভাস প্রয়োজন তার পরিসর দিগন্তবিস্তারী হওয়া আবশ্যক। দেড় দু’ঘণ্টার নাটকে তাকে গেঁথে ফেলা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবুও সেই অসম্ভব চেষ্টা যে একেবারে হয়নি, তা নয়। বরং অনেকেই অনেক ভাবেই তার প্রয়াস পেয়েছেন। দেশ থেকে ছিন্নমূল হওয়া যার শেষ পরিণতি আমরা তার নাট্য আঙ্গিকগত শিকড় সন্ধানী প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি।

দাঙ্গা, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু মিছিল বিষয়ক নাট্য অনুসন্ধান ও আলোচনা করতে গেলে আমাদের দুটি ক্ষেত্রের কথা মনে রাখতে হবে। ভারত ভেঙে একদিকে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান আর অন্যদিকে পশ্চিম-পাকিস্তান গড়ে ওঠা, সঙ্গে পাক-অধিকৃত পাঞ্জাব ও কাশ্মীর। রক্তক্ষরণ ও বেদনার ইতিহাস কোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু কম নয়। তবে পূর্ব-পাকিস্তান বিষয়ক যে নাটক সেগুলি বাংলাতে লেখা, আর পশ্চিম-পাকিস্তান, পাঞ্জাব ও কাশ্মীর বিষয়ক নাটকগুলি সঙ্গত কারণেই হিন্দি, পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য ভাষায় রচিত। তবে সেই নাটকগুলির অনেক অনুবাদ হয়েছে এবং বঙ্গ রঙ্গমঞ্চে তার উপস্থাপনও হয়েছে বহুবার। আমাদের আলোচনা প্রসঙ্গে সেদিকেও আলোকপাত করার প্রয়াস নেওয়া সমুচিত।

দাঙ্গা, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু সমস্যা বিষয়কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি নাটক লিখেছিলেন নাট্যকার দিগিন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নাটকগুলি সেই সময়ের উল্লেখযোগ্য দলিল হিসেবে উঠে এসেছে। ১৯৪৭-এ দিগিন্দ্রচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘বাস্তুভিটা’ নাটকটি। এই নাটকে ছিল কফিলদ্দি আর মুন্সীর মর্মস্পর্শী বেদনার কাহিনি। এর সঙ্গেই নাট্যকার লিখেছিলেন সাম্প্রদায়িকতা আর পুঁজিবাদ নিয়ে আরেকটি নাটক। সে নাটকের নাম ‘মশাল’। এই নাটকের প্রেক্ষাপট হল নোয়াখালি, ত্রিপুরা, ঢাকা, বরিশাল ইত্যাদি দাঙ্গা-লাঞ্ছিত স্থান। এখানে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়িকতার উপরও আলোকপাত করেছেন।

উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে সেই সময়ে উল্লেখযোগ্য নাটক লিখেছিলেন নাট্যকার রবীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ১৯৪৮ সালে তিনি লিখেছিলেন ‘এই স্বাধীনতা’ নাটকটি। এই নাটকে অন্যতম প্রধান চরিত্রগুলি হল— দীপক, প্রমথ, কার্তিক, অবনী, প্রভাবতী, রাইমণি প্রমুখ। তাদের বাস্তুহারা হওয়ার কাহিনি-ই এখানে মর্মস্পর্শী ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে। সেই বেদনার কথকতাই বাস্তুচ্যুত, ছিন্নমূল মানুষের, জাতির ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু নাট্যকার শেষ পর্যন্ত আশাবাদেই আস্থা রেখেছেন।

‘জাতির সাধনার শেষ নাই। কখনো তা শেষ হয় না। মানব অভ্যুদয়ই কাম্য।’ নাটকের এই উত্তরণের ভাষা মানুষকে আশাবাদী করতে সচেষ্ট রাখে। একজন সৎ নাট্যকারের তো এমনই প্রচেষ্টা থাকা উচিত।

দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু বিষয় নিয়ে সব থেকে আলোড়ন তোলা নাটক বোধ হয় সলিল সেনের ‘নতুন ইহুদী’। এই নাটকটির রচনা ১৯৫৩ সালে। এই নাটকটি আদতে মধ্যবিত্ত হিন্দু আর নম-শূদ্র কৃষক পরিবারের গল্প। একটি অঙ্ক, ষোলোটি দৃশ্য নিয়ে এটি একটি একাঙ্ক নাটকই। এ কথা মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেই যে, এই নাটকটি সলিল সেনকে যেমন একটি আলাদা পরিচিতি দিয়েছিল তেমনি বাংলা নাটক এবং নাট্যসমাজে একটা ইতিহাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নাটকটির একটি নিবিড় পাঠ প্রয়োজন। সেই সময়কে এবং সেই সমস্যাকে বোঝার জন্য নাটকটি একটি আকর গ্রন্থের ভূমিকা পালন করেছে। নাটকটির বিষয় ও নামকরণ প্রসঙ্গে নাট্যকারের নিজের কৈফিয়তটি খুবই মূল্যবান।

‘নতুন ইহুদী’ নামকরণ সম্পর্কে সলিল লিখেছিলেন— ‘ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের সমস্যা বেদনা নিয়ে এই নাটক। নামটা ইচ্ছা করে ‘নতুন ইহুদী’ রেখেছিলাম। কিছুটা প্রতীকী। হিটলারের অত্যাচারে যেমন জার্মানি থেকে ইহুদীদের উদ্বাস্তু হতে হয়েছিল, ঠিক সেইরকমই অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় পূর্ব পাকিস্তানে অত্যাচারিত মানুষদের। তাই নাটকের নাম ‘নতুন ইহুদী’।’

এ কথাটা নির্জলা সত্য যে বাস্তুচ্যুত বাঙালি হিন্দুরা কখনোই দেশভাগ মেনে নিতে পারেননি, পারা সম্ভব ছিল না। মুসলমান রাষ্ট্রে সংস্কৃত পাঠ নিষিদ্ধ হলে ব্রাহ্মণ মনমোহন চক্রবর্তী উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে এলেন। এখানে তিনি একটি প্রতিনিধি স্থানীয় চরিত্র। উদ্বাস্তুরা সকলেই সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের অত্যাচারের শিকার। মনমোহন চক্রবর্তী তার ব্যতিক্রম নন। ফলে মাষ্টার মশাই থেকে জোগাড়ে ব্রাহ্মণে পরিণত হতে বাধ্য হন তিনি। দ্যুইখ্যা চোর হয় এবং পরবর্তী সময়ে ট্রামে কাটা পড়ে। পরী নিতান্ত বাধ্য হয়ে পেটের তাগিদে দেহব্যবসা শুরু করে। ইতিমধ্যে অন্নপূর্ণা মারা যান। সেইসঙ্গে বলতে গেলে বিনা চিকিৎসাতেই মারা যান পণ্ডিত নিজেও। পরপর এই সমস্ত ঘটনার অতিরেক দেখে এ কথা মনে হতেই পারে যে এই নাটকের আখ্যানভাগ তথা কাহিনিটি অত্যন্ত অতি নাটকীয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তাঁরা জানেন যে, এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটেছে। এটাই বাস্তব। এখানে নাট্যকার কাহিনিতে কিছুটা ভারসাম্য আনার জন্য ধর্মগতভাবে মুসলিম মির্জা চরিত্রটিকে এনেছেন। তিনি প্রতিবাদী, তিনি ন্যায়ের পক্ষে। মির্জা পণ্ডিতের চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করেন। গ্র্যাচুয়িটি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। তাঁর মুখে আবার সমালোচনাও শোনা যায়— ‘কথায় কথায় ইসলাম আর বেহেস্ত দেখাস মাইনসেরে, আর নিজেরা চাউল, চিনি, কেরাসিন চোরাই বাজারে বিক্রি করস।’ কিন্তু সময় যে পাল্টায় না তা মির্জার কথাতেই বুঝে উঠতে অসুবিধা হয় না। হতাশ মির্জাই যখন বলে ওঠেন, ফান্ডের টাকায় ইস্কুলের দোতলার বদলে ব্যক্তিবিশেষের বাড়ির দোতলা, তিনতলা ওঠে, তখন দেশভাগ ও পরবর্তী সময়ের দুর্নীতি ও অধঃপতনের চিত্রই ধরা পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পণ্ডিতের মুখের শেষ কথাটি নাটকের আপ্তবাক্য হয়ে ওঠে-
‘….তুই এটা কী ক’লি? দেশ কথাটা মোহ না রে। দেশ মাইনষের জমির উপর দেওয়াল তুলছে। মনে যেন না তুলতে পারে।’ এখানে আর্তির স্বর থাকলেও একটা প্রত্যয়ের সুরও কিন্তু রয়েছে। সেটিই নাট্যকারের অভিপ্রেত লক্ষ্যবস্তু।

দেশভাগ বিষয়কে কেন্দ্র করে সবচেয়ে ভাবিত হয়েছেন যাঁরা, আলোড়িত হয়েছেন এবং নিজের সৃষ্টির মধ্যে তাকে জীবন্ত করে তুলে ধরেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক। ঋত্বিক ঘটকের লেখা বিখ্যাত নাটক ‘দলিল’-এর নাম এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উঠে আসে। ‘দলিল’ নাটকটি প্রথম অভিনয় হয় ১৯৫০ সালের জুলাই মাসে। ওই বছরেই নিকোলাই গোগোলের ছোটগল্প ‘অফিসার’ থেকে তিনি নির্মাণ করেন নাটক ‘দ্য গভমেন্ট ইন্সপেক্টর’। দেশভাগ, ক্ষমতার হস্তান্তর, ক্ষমতায়ন, উদ্বাস্তু সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে লেখা এই নাটকটি। অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, শ্রেণিবৈষম্যে, দেশভাগ এবং ছিন্নমূল হয়ে দেশ ছাড়ার যন্ত্রণা ‘দলিল’ নাটকের মূল উপজীব্য। এই নাটকের গানের মধ্যেও আছে পদ্মাপার থেকে বাধ্য হয়ে চলে আসার অব্যক্ত বেদনার কথা।

বিশিষ্ট নাট্য আলোচক অনুরাধা কুন্ডার ভাষায়— ‘‘স্বপ্ন আর স্বপ্পভঙ্গ ঋত্বিকের নাটকে। ‘বাংলারে কাটিছ কিন্তু দিলেরে কাটিবার জো নাই’। রূপাইকান্তি গ্রামের ক্ষেতু ঘোষ আর ফিরোজা নানির কাহিনি। নিজের জমি খোঁজা মানুষ। যে ঋত্বিক বিশ্বাস করতেন, আচ্ছা, নিজের জমির উপর না দাঁড়াইয়া কিছু করা যায় কী? কিছু সত্যিকারের গভীরতাকে ছোঁওয়া সম্ভব?”

সামাজিক, রাজনৈতিক আন্দোলন, গণ আন্দোলনের আন্তরিকতা ‘দলিল’ নাটকে। বাস্তুচ্যুত বাঙালি জানত না তার জমি কোথায়। তার পরিণতি কী।

পূর্ববাংলাতে তখন দুর্গাপূজা হয়। কিন্তু ‘ন্যাশনাল গার্ড ঘির্চাশ আছে পিত্যিমা’ এই নাটক বলছে, ‘কোনো লোকে লাভ করার মতলবেই দেশভাগ আর দেশান্তরী করার ঢেউটা লাগছে।’ হিন্দুদের মনে মুসলমান-বিদ্বেষ তৈরি করানো হচ্ছে।
‘লাও বাঁধল্যাম। বাঁধে উঠল্যাম। পথটুকু পার হল্যাম। পথটা যেন ক্যামন ছোট্যা হয়্যা গ্যাছে। হামার ঘর। পূব্যা জানলাটা কেরা যেন খুল্যা রেখ্যা গিছিল। বেবাক বালি উড়্যা আস্যাছে পদ্মা থিকা। …ই হ্যান সময়ে বাহার থিকা ভাস্যা আসে গান। হামার মন মানে না, ই দু’টুকরা দেশ হামি মানি না’। সাংবাদিক দেবু উদ্বাস্তুদের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। চটকল, ধর্মঘট আর শস্তায় উদ্বাস্তু শ্রমিক-সংগ্রহ দ্যাখে। মনে বর্ম পরে চলতে হয় এখানে।
(দেশভাগ— নাটকে যেমন এসেছে— অনুরাধা কুন্ডা, গুরুচন্ডা ৯)।

প্রসঙ্গত, ঋত্বিক ঘটকের লেখা আরেকটি নাটকের কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে। নাটকটির নাম ‘সাঁকো’। এই নাটকটিও দেশভাগের যন্ত্রণার উপর আধারিত।

বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্র করে পূর্বতন পূর্ব-পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যকার মামনুর রশিদের লেখা বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় নাটক ‘ভঙ্গ বঙ্গ’। বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্রীয় বিষয় হলেও এ নাটকেও দেশভাগের যন্ত্রণার কথা এবং তার উপজাত সমস্যার কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়েছে। এসেছে কাঁটাতার, বাধ্য হয়ে মেয়েদের দেহ ব্যবসায় নামা এবং আশ্চর্যজনক ভাবে রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবীর রাজা, নন্দিনী প্রসঙ্গও। তার কারণ এই নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র স্মাগলার রাজা আর যৌনকর্মী মালিনী। নাট্যকার এখানে স্পষ্টভাবে কাঁটাতারের বেড়ার মান্যতা বিষয়ক প্রশ্ন তুলেছেন— যদি নদীকে, বাতাসকে দু’ভাগ করা না যায়, যদি পাখি সব আকাশে ঘুরে বেড়াতে পারে, তবে মানুষ কেন পারে না? শুধু বিষয়ে নয়, গঠনতন্ত্র এবং অন্তরধর্মেও নাটকটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী। রূপকধর্মিতা নাটকটিকে অন্যতর মাত্রা দিয়েছে।

দাঙ্গা দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ থেকে সাহিত্য সাধক ‘বনফুল’ তথা ডা. বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারেননি। তিনিও লিখেছেন এই বিষয়ের নাটক। ১৯৬৫ সালে বনফুলের লেখা সেই নাটকটির নাম হল ‘আমরা’। নাটকটি খুব বেশি প্রচারিত না হলেও নাটক হিসেবে এটি রসোত্তীর্ণ। আর সময়ের স্বাক্ষর হিসেবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।

দেশভাগ, দাঙ্গা এবং উদ্বাস্তু মিছিল বিষয়ে নাট্যকার মন্মথ রায়ও ‘ভাঙাগড়া’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। কিন্তু তিনি সে নাটক লিখেছিলেন পুরাণ কাহিনির আধারে। সরকারিভাবে অনুরুদ্ধ হয়ে লেখা সে নাটক উদ্বাস্তু মানুষদের মানসিক শক্তি ও আস্থা বর্ধনের জন্যই লেখা হয়েছিল। সে নাটক উদ্বাস্তু শিবিরের শিবিরে অভিনয়ও হয়েছিল অনেকবার। এ বিষয়ে একটু বিস্তৃত আলোচনা করা যেতে পারে।
সে আমলে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা সরকারি আধিকারিক হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথা উদ্বাস্তু থেকে জানা যাচ্ছে যে ১৯৫০-এর এপ্রিল মাস নাগাদ শরণার্থী সঙ্কট যখন তুঙ্গে উঠেছে, রাজ্য সরকারের তরফে ‘নাট্যকার শ্রীমন্মথ রায়কে তখন অনুরোধ করা হল এমন একটি নাটক রচনা করতে যাতে উদ্বাস্তুদের মনের বল বর্ধিত হয়।’ মন্মথ যে নাটকটি লিখে দিয়েছিলেন সেটির নাম ‘ভাঙাগড়া’। এর সঙ্গে যুক্তবঙ্গের ভাঙাগড়ার কোনও প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল না। ‘বাস্তুত্যাগী উদ্বাস্তুদের কাহিনি অবলম্বন করেই’ লেখা হলেও এটি আদতে পৌরাণিক নাটক। মন্মথ-রচিত বহুল প্রচারিত ‘কারাগারে’-র অনুবর্তন। হিরণ্ময়ের ভাষায়— ‘এই প্রসঙ্গে মহাভারতের কাল-যবনের কথা স্বভাবতই মনে পড়ে যায়। তার দ্বারা মথুরা হতে বিতাড়িত হয়ে যাদবেরা শ্রীকৃষ্ণের নেতৃত্বে দ্বারকায় নূতন রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল। তাদেরও শ্রীকৃষ্ণের স্থাপিত দৃষ্টান্তের অনুসরণ করতে হবে— এই হল নাটকের বাণী।’ কোনও পেশাদার বা অপেশাদার নাটকের দল নয়, অকল্যান্ড রোডের মহাকরণের কর্মীদের উদ্যোগে ‘ভাঙাগড়া’-র মঞ্চায়ন হত নানান শরণার্থী শিবিরে। কখনও আশ্রয় শিবিরের উদ্বাস্তু শিল্পীরাও এর মঞ্চায়ন করতেন। হিরণ্ময়ের বয়ানে আছে— ‘এভাবে অনেকগুলি আশ্রয় শিবিরে এই নাটকটির অভিনয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছিল এবং তা দেখে ডাঃ রায় বিশেষ তৃপ্তি বোধ করেছিলেন।’ এই ‘ডাঃ রায়’ হলেন বাংলার রূপকার ডা. বিধানচন্দ্র রায়।
(নতুন ইহুদী : এক লুপ্ত মানচিত্রের সন্ধান— অংশুমান ভৌমিক, চার নম্বর প্লাটফর্ম)।

এছাড়াও কালোবাজারী আর মজুতদারদের নিয়ে শচীন সেনগুপ্তর নাটক ‘কালোটাকা’ নাটকটির নামও উল্লেখযোগ্য। এখানেও প্রেক্ষাপট হিসেবে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ রয়েছে।

দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু প্রসঙ্গ আরেকটি নাটকের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয় সেটি হল প্রখ্যাত নট, নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক শম্ভু মিত্রের লেখা ‘ঘূর্ণি’।

দেশভাগের ঝড়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের সামাজিক অবক্ষয়ের ছবি এবং কিছু তীক্ষ্ণ অব্যর্থ প্রশ্ন উঠে এসেছে এই নাটকে। নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র তারিণী মাস্টারের মুখের একটি লাইন যেন হাহাকারের মতো এই নাটকে প্রতিধ্বনিত হয়—
‘এপার গঙ্গা, ওপার গঙ্গা, মইদ্যিখানে চর,
তার মইধ্যে বইস্যা দালাল তারিণী মাস্টর।’
দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু জীবনের সীমাহীন যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবিই ফুটে ওঠে এই নাটকে।

ঋত্বিক ঘটকের ভুবনজয়ী চলচ্চিত্র ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেশভাগ ও উদ্বাস্তু জীবনের বিশ্বস্ত দলিল। এই চলচ্চিত্রটি একাধিকবার নাট্যরূপ পেয়েছে। এক সময় প্রখ্যাত অভিনেত্রী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নাটকে অভিনয় করতেন। দেশভাগের যন্ত্রণা, ছিন্নমূল মানুষের জীবিকার সমস্যা, মেয়েদের কানাগলিতে দেহ ব্যবসায় নেমে যেতে বাধ্য হওয়া, সর্বোপরি বড় মেয়ে নীতার প্রবলভাবে বাঁচতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেন উদ্বাস্তু মানুষদের আর্তির প্রতীকী রূপ পায় এই নাটকে। বর্তমানে আবার এই নাটক নতুন করে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা হয়েছে। এই সময়ের অন্যতম প্রধান নাট্যকার এবং অভিনেতা ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় মঞ্চে এসেছে এ নাটক। এই ঘটনাই প্রমাণ করে মানুষ এখনো সেই ক্ষত, বেদনাকে মনে রাখতে চায়, আত্মবিস্মৃত হতে চায় না কিছুতেই।

এই প্রসঙ্গে ‘ছিন্নমূল’ চলচ্চিত্রের নাট্যরূপ স্বর্ণকমল ভট্টাচার্যের ‘নোঙর ছেঁড়া নৌকা’-র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

এই পর্যায়ের আলোচনার পরিসমাপ্তি টানা যেতে পারে এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ব্রাত্য বসুর একটি নাটক দিয়ে। নাটকটির নাম ‘হৃদিপাশ’। নাটকটি ২০১৬ সালের আগস্ট মাস নাগাদ রচিত। এই নাটকে নাট্যকার দেশভাগকে দেখেছেন গ্রিক ট্রাজেডির আঙ্গিকে। ইতিহাসকে এভাবে দেখার প্রচেষ্টা বিরলই বলতে হবে। নাট্যকার ব্রাত্য বসু এই নাটকে দেশভাগ ও তার পরবর্তী সময়ের উপমহাদেশের ইতিহাসকে অয়দিপাউসের জীবনের ট্রাজেডিটির সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখানে দেশভাগকে দেখানো হয়েছে পিতৃহত্যার ইতিহাস হিসেবে।
বিষয়ে, আঙ্গিকে, উপস্থাপনে এই নাটকটি নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিককালে লেখা দেশভাগের ট্রাজেডি বিষয়ক একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীত এবং বলিষ্ঠ নাটকের উদাহরণ ।

এযাবৎ আমাদের যাবতীয় আলোচনা মূলত ভারতবর্ষ থেকে পূর্ব-পাকিস্তানের আলাদা হওয়া, স্থানিক দাঙ্গা এবং উদ্ভূত উদ্বাস্তু প্রসঙ্গেই আবর্তিত হয়েছে। এই বিষয়গুলোর উপর নিবন্ধে যে-যে নাটক নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবগুলোই বাংলা নাটক। কিন্তু এবার আমরা পশ্চিম প্রান্তের দিকে আলোকপাত করতে পারি। ভারত থেকে পশ্চিম-পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়া, পাক-অধিকৃত পাঞ্জাব, কাশ্মীর এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দাঙ্গা, দেশভাগ ও উদ্বাস্তু মিছিলের উপর আধারিত নাটক বিষয়ে আলোচনায় আসতে পারি। যদিও এ কথা মেনে নিতেই হয় যে, এ বিষয়ে বাংলার মতো এত নাট্যসম্ভার নেই। কথাসাহিত্য এবং চলচ্চিত্রে যতটা তা প্রতিবিম্বিত হয়েছে নাটকের সেই পরিমাণে ঘটেনি। তাহলেও এ বিষয়ে নাটকের পরিমাণ একেবারে নগণ্য নয়।

ভারত ও পশ্চিম-পাকিস্তান বিভাগ, পাক অধিকৃত পাঞ্জাব ও কাশ্মীর সংক্রান্ত দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু মিছিল বিষয়ের নাটকের আলোচনা প্রসঙ্গে প্রথমেই যাঁদের নাম উঠে আসে তাঁরা অবশ্যই সাদাত হাসান মান্টো এবং ইসমত চুগতাই। ভারত বন্দিত সাদাত হাসান মান্টোর বেশ কিছু নাটক বাংলা নাট্যরূপ দিয়ে অভিনয় করেছেন রঙ্গকর্মীর প্রখ্যাত অভিনেত্রী, নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক ঊষা গাঙ্গুলি। নাটকগুলি নিঃসন্দেহে বাংলা নাটকে নতুন স্বর যুক্ত করেছে। একটা কালের, বেদনার সাক্ষী হয়ে অক্ষয় হয়ে রয়েছে সেগুলি।

এই ধরনের প্রচেষ্টা কিন্তু বিচ্ছিন্ন হলেও এখনো বহমান। এই প্রসঙ্গের গোবরডাঙা ‘শিল্পায়ন’-এর প্রয়াসের কথা আলাদা করে উল্লেখ করা যেতে পারে। নাট্য নিবেদিত প্রাণ এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ভীষ্ম সাহানির অমর সৃষ্টি ‘তমস’-এর অভিনয় করে চলেছে। এছাড়া বহরমপুর রঙ্গাশ্রমও মহেশ দাত্তানির ‘হোয়ার ডিড আই লিভ মাই পর্দা’ নাটকটির অংশুমান ভৌমিক কৃত অনুবাদ ‘আমার মুখের আঁচলখানি’-র মাধ্যমে ভারত ও পশ্চিম-পাকিস্তানের দেশভাগের বিষয়টিকে আবার নতুন করে পাঠক-দর্শকের কাছে তুলে ধরেছে, ধরছে।

তবে একথা অনস্বীকার্য যে দাঙ্গা, দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে কথাসাহিত্য যেমন সরব নাট্য সাহিত্য ততটা সরব নয়। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অশ্রুকুমার শিকদারও এই বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। অবশ্য তাঁর লক্ষ্য ছিল সমগ্র শিল্প সাহিত্যের অঙ্গনই। সে যাই হোক, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম দুই প্রান্তেরই দাঙ্গা, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু সমস্যা ইত্যাদি আরো বেশি করে নাটকের বিষয় হিসেবে উপস্থাপিত হওয়া উচিত। এমন শক্তিশালী একটি গণমাধ্যম যদি সেই সময়ের রূপারোপ ও মূল্যায়নে ব্রতী না হয় তাহলে নাটকের উপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ভঙ্গ হবে। বেদনা বিদীর্ণ ইতিহাস বিস্মরণের মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই, বরং তার যথার্থ রূপারোপ, উপস্থাপন এবং মূল্যায়নের মাধ্যমেই বর্তমান প্রজন্ম যেকোনো মূল্যে তার পুনরাবৃত্তি রোধ করার শক্তি, সাহস এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন করবে। নাটককে সেই দায়িত্ব, সেই দায় নিতেই হবে। তবেই নাটক হয়ে উঠবে প্রকৃত অর্থে জীবনদর্পণ, সমন্বয় ও প্রত্যয়ী জীবন আদর্শের তীর্থভূমি। (পার্থপ্রতিম পাঁজা)

তথ্য সূত্র:
১. বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত— ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ন বুক এজেন্সি
২. আলাপচারিতা– ভগীরথ মিশ্র
৩. দেশভাগ— নাটকের যেমন এসেছে–অনুরাধা কুন্ডা,
গুরুচণ্ডা৯
৪. নতুন ইহুদী : এক লুপ্ত মানচিত্রের সন্ধান—অংশুমান ভৌমিক, চার নম্বর প্লাটফর্ম
৫. সলিল সেন নতুন ইহুদী –সম্পাদনা: ভ. স্নিগ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায় , গ্রন্থ কুঞ্জ
৬. বিজন ভট্টাচার্য নট, নাট্যকার, নির্দেশক –বিশ্বরূপ চক্রবর্তী, পারুল প্রকাশনী